ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,দেবিদ্বার প্রতিনিধি,২০ এপ্রিল : গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিঃ এর নামে প্রতারনা করে কুমিল্লা জেলা ইনচার্জ মোঃ আবুল বাশার ও উপজেলা ইনচার্জ মোঃ জসীম উদ্দিন নামের দুই সহোদর দেবিদ্বার থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন ও মানব বন্ধন করেছে ভোক্তভোগী গ্রাহকরা। মঙ্গলবার দুপুরে দেবিদ্বার ‘হাজী আবদুল হামিদ চিল্ড্রেন গ্রেস স্কুলে ওই সংবাদ সম্মেলন শেষে কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহা সড়কের দেবিদ্বার নিউমার্কেট এলাকায় মানব বন্ধন করেন।
গ্রাহকরা অভিযোগ করে বলেন, ২০০৩ সালে দেবিদ্বার নিউ মার্কেট সামাদ ম্যানশনের চতুর্থ তলায় অবস্থিত গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিঃ দেবিদ্বার শাখা কার্যালয় গঠনপূর্বক কুমিল্লা জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তা মোঃ আবুল বাশার ও দেবিদ্বার উপজেলা কার্যালয়ের ইনচার্জ মোঃ জসীম উদ্দিন সহ দুই কর্মকর্তার নেতৃত্বে ৮১ জন মাঠ কর্মী’র সহযোগীতায় প্রায় ৩ হাজার ইসলামিক ডি.পি.এস ও একক বীমা সহ বিভিন্ন মেয়াদে করা বীমা গ্রাহকদের কোম্পানীর পাশ বই ও দলিল প্রদানপূর্বক কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করে গত বছরের শুরুতেই অফিস বন্ধ করে পালিয়ে যায়।
ওই সময় অনেক বীমা গ্রাহকের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় গ্রাহকরা প্রতিনিয়ত অফিসে ভীড় জমাতে থাকে। এক পর্যায়ে গ্রাহকদের টাকা পরিশোধের আশ্বাস দিয়ে গত বছরের প্রথম দিকে কর্মকর্তারা অফিস ফেলে পালিয়ে গেলেও ওই অফিস অদ্যবধি আর খোলা হয়নি। ফলে যাদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়নি তারাও সময় মতো বীমার কিস্তী পরিশোধ করতে এসে অফিস খুঁজে নাপেয়ে জেলা কার্যালয়ে যায়, ওখানে তাদের কোন তথ্য না থাকায় ঢাকা প্রধান কার্যালয়ে পাঠায়, প্রধান কার্যালয়ে তাদের নামে পলিসির কোন টাকা জমা না থাকায় ওরা কান্নায় মুসরে পড়ে। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সাবেক উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান এ.কে.এম সফিকুল আলম কামাল ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাজী মোঃ বশির উল্লাহ মোল্লার নেতৃতে এক সালিস ডাকা হয়। সালিসে গ্রাহকের টাকা পরিশোধের আশ্বাস দিলেও সময়মতো টাকা পরিশোধ না করে ওই দুই কর্মকর্তা মোঃ আবুল বাশার ও মোঃ জসীম উদ্দিন লাপাত্তা হয়ে যায়। সে সময় গ্রাহকরা টাকা না পাওয়ায় তাদের মাঝে চরম আতঙ্ক ও হতাশা দেখা দেয়।
গ্রাহকরা জানান, কিছু গ্রাহকের নামে প্রথম কিস্তির টাকা প্রধান কার্যালয়ে জমাদান পূর্বক তাদের মূল দলিল ও পাশ বই প্রদান করে বিশ্বস্ততা অর্জন করেন। পরবর্তীতে গ্রাহকদের কাছ থেকে নেয়া নিজেদের ছাপানো রসিদ ও দলিললে মাধ্যমে নতুন গ্রাহক ও গ্রহীত টাকা নিজেরাই আত্মসাৎ করে। যার প্রমান গ্রাহকদের দেয়া পাশ বই, রসিদ ও দলিল পত্রাদী।
সংবাদ সম্মেলনে গ্রাহকরা জানান, আমরা হতদরিদ্র, আমাদের মধ্যে এমন অনেক গ্রাহক আছেন যারা তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন আনতে এবং জমাকৃত টাকার দ্বিগুণের আশায় ভিক্ষাবৃত্তি ও জাকাতের টাকাও জমা দিয়েছেন। আজ দিগুণ থাক দূরের কথা আসল টাকারও অস্তিত্ব নেই। কোম্পানীর নামে অফিস, কাগজপত্র, দলিল ও রসিদ ব্যবহার করে গ্রাহকদের সাথে প্রতারনা করেছে। এখানে তারা বিশ্বস্ততা অর্জন করে গ্রাহকদের সাথে প্রতারনা করেছে। রসিদগুলোও একটি সাথে অপরটির মিল নেই, যা নিজেরাই তৈরী করে ওই রসিদে গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করেছে।
ইব্রাহীম খলিল নিজামী নামের এক গ্রাহক জানান, আমি আমার ও আমার মায়ের নামে ২টি বীমা করেছিলাম। পরবর্তীতে জসীম উদ্দিনকে কুমিল্লা শহরে আটকের পর সে রানীর বাজারে একটি মোদী দোকানে নিয়ে যায়। ওই দোকানদারের তথ্য মতে দোকানের চৌকির নিচ থেকে পোকায় খাওয়া দু’টি বস্তা বের করে। সে বস্তায় আমার একটি পাশ বই খুঁজে পেলেও মা’য়ের নামের পাশ বইটি পায়নি। পরে আমাকে নগদ ৪০ হাজার ৫শত টাকা দেয় এবং বাকী টাকা পরবর্তীতে দেওয়ার কথা বললে আমি তাকে ছেড়ে দেই। প্রকৃত অর্থে গ্রাহকদের কোন টাকা প্রধান কার্যালয়ে তারা জমা দেয়নি। ওই টাকা নিজেরাই আত্মসাৎ করেছে। ইতিমধ্যে গ্রাহকের জমাকৃত সমুদয় টাকা পরিশোধের আশ্বাস দিলেও তা পরিশোধ না করায় আমরা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। সাথে অপরাধীদের গ্রেফতার পূর্বক আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি।
এ ব্যাপারে গ্রাহকরা আরো জানান, ওই ঘটনায় দেবিদ্বার উপজেলার খাইয়ার গ্রামের মোঃ ফজলুর রহমান’র কন্যা নাজমা আক্তার বাদী হয়ে তার ক্ষুদ্রবীমা (ডিপিএস)’র নামে ৭২ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিঃ দুই কর্মকর্তা দেবিদ্বার পৌর এলাকার বড়আলমপুর গ্রামের মৃত আঃ হামিদ খলিফা’র দুই পুত্র মোঃ আবুল বাশার ও মোঃ জসীম উদ্দিন’কে অভিযুক্ত করে দেবিদ্বার থানায় একটি অভিযোগ পত্র দাখিল করেন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রতারিত বীমা গ্রাহক মোঃ সিরাজুল ইসলাম সরকার’র সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, গ্রাহক আঃ বাতেন, মোঃ শাহজালাল, মোঃ আলাউদ্দিন, মোঃ মমিনুজ্জামান, রুজিনা আক্তার, হাছিনা আক্তার, নাছরিন আক্তার, হাছেনা বেগম, নাজমা আক্তার , শিল্পী আক্তার, খাদিজা বেগম, কুহিনুর আক্তার, আমেনা বেগম, আবুল খায়ের, শিল্পী বেগম, সাইফুল ইসলাম, আফরুজা বেগম, হনুফা মিনুয়ারা, নিলুফা ইয়াছমিন, লাইলী আক্তার, মনোয়ারা বেগম, জো¯œা আক্তার, সালেহা বেগম, মিনুয়ারা বেগম প্রমূখ।