ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,হাজারীবাগ প্রতিনিধি,০৯ এপ্রিল : হাইকাের্টের নির্দেশে শনিবার দিনব্যাপী হাজারীবাগের সবগুলো ট্যানারি কারখানার বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদফতর। আজ রবিবার উচ্চ আদালতে এবিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কাজী সারওয়ার ইমতিয়াজ হাশমী।
আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের জন্য শনিবার সকাল নয়টার দিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহা্পরিচালক মো. রইছউল আলম মণ্ডলের নেতৃত্বে ট্যানারিগুলোতে বিভিন্ন সরকারি সেবা সংযোগ বিচ্ছিন্নের অভিযান শুরু হয়। পাঁচজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ঢাকা ওয়াসা, গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তিতাস এবং বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি ডেসকো ও ডেসার কর্মকর্তারা নিজ নিজ সংস্থার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কাজ শুরু করেন।
শুরুতে কাটা হয় টেলিফোন সংযোগ। এরপর একে একে বিভিন্ন কারখানার গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা শুরু হয়। হাজারীবাগ ট্যানারি মোড় থেকে এই অভিযান শুরু হয়। একটি তালিকা ধরে একের পর এক কারখানায় গিয়ে সেবা লাইনগুলো বিচ্ছিন্ন করা হয়।
পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কাজী সারওয়ার ইমতিয়াজ বলেন, ‘সকাল থেকে অভিযানে ১২৩টি টেলিফোন সংযোগ, ১৯৩টি পানির লাইন, ২২৪টি বিদ্যুৎ সংযোগ ও ৫৪টি তিতাসের লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়। রবিবার আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।’
অাজ শনিবার সংযোগ বিচ্ছন্নের অভিযান চালানো হবে- এই ঘোষণা আগেই ছিল। আজ কোনো কারখানাতেই কাজ না হলেও শ্রমিকরা আশপাশেই ছিলেন। তবে বিভিন্ন সেবা সংযোগ বিচ্ছন্ন করার সময় তারা কোনো বাধা দেননি। ফলে নির্বিঘ্নে সংযোগ বিচ্ছন্নের কাজ সম্পন্ন করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
সন্ধ্যার পর হাজারীবাগের ট্যানারি এলাকায় নেমে আসে এক ভুতুড়ে পরিবেশ। ট্যানারির ভেতরের রাস্তাগুলো অন্ধকার। কোনো কারখানায় জেনারেটর ও মোমবাতির আলো দেখা গেলেও পুরো এলাকা ছিল অন্ধকারে নিমজ্জিত।
উল্লেখ্য, হাজারীবাগের সব ট্যানারি ৬ এপ্রিলের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। আদালতের রায়ের কপি হাতে পেলেই অভিযানে নামার কথা জানিয়েছিল পরিবেশ অধিদফতর। সেই অভিযান শনিবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে। হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি না সরিয়ে মালিকরা জরিমানা কমানোর বিষয়ে আবেদন করলে আদালত বলেছিলেন, ‘আগে ৬ এপ্রিল সব ক্লোজ ডাউন করে আসেন। তখন বকেয়া জরিমানার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’
গত বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) সকালে এক আদেশে রাজধানীর হাজারীবাগে থাকা ট্যানারি কারখানাগুলোর সব কার্যক্রম বন্ধ করার পর, আগামী ৬ এপ্রিলের মধ্যে আদালতকে জানাতে বলেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এরপর ট্যানারিগুলোর জরিমানার বিষয়ে করা রিভিউ আবেদন এবং ১৫৪টি ট্যানারি মালিকের জরিমানা বকেয়া বাবদ ৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা স্থগিতের বিষয়ে আগামী ৯ এপ্রিল শুনানি গ্রহণ করবেন আদালত।
এর আগে ১৯ মার্চ ১৫৪টি ট্যানারির মালিককে বকেয়া বাবদ ৩০ কোটি ৮৫ লাখ জরিমানা পরিশোধের আদেশ স্থগিত করে শুনানির জন্য পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত।
২ মার্চ ১৫৪টি ট্যানারি কারখানাকে বকেয়া বাবদ ৩০ কোটি ৮৫ লাখ জরিমানা দুই সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ। পরে এই আদেশ স্থগিত চেয়ে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ফিনিশড লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন হাইকোর্টে আবেদন করেন।
আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে হাজারীবাগে ট্যানারি প্রতিষ্ঠান চালু রাখায় ১৫৪টি প্রতিষ্ঠানের মালিকদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছিলেন হাইকোর্ট। গত ১৮ জুলাই প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে ৪ সদস্যের আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
এর আগে গত বছরের ১৬ জুন বিচারপতি সৈয়দ মোহম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম সাহিদুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ ট্যানারি মালিকদের পরিবেশের ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে প্রদানের নির্দেশ দেন।