ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,নিজস্ব প্রতিনিধি,০৪ এপ্রিল : রাজধানীর রাস্তায় আর গেটলক সিটিং সার্ভিস বাস চলবে না। গণপরিবহনে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে সিটিং সার্ভিস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ জন্য বাস মালিকদের ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিআরটিএ নির্ধারিত চার্ট অনুসরণ করে যাত্রী ভাড়া আদায় করবে সব বাস। সেই সঙ্গে ট্রাকের বাম্পার কিংবা অ্যাঙ্গেলও খুলে ফেলা হবে এ সময়ের মধ্যে। আজ মঙ্গলবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতুল্লাহ।
এসময় তিনি বলেন, ‘১৫ এপ্রিলের পর যাত্রীদের কাছ থেকে কোনোভাবেই অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া যাবে না। ভাড়ার তালিকা বাসের ভেতর দৃশ্যমান স্থানে টানিয়ে রাখতে হবে। ছাদের ওপরে ক্যারিয়ার সাইট অ্যাঙ্গেল ও ভেতরের অতিরিক্ত আসন খুলে ফেলতে হবে। প্রতিটি বাস ও মিনিবাসে নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা আসন সংরক্ষণ করতে হবে। রং চটা, রংবিহীন, জরাজীর্ণ বাস মেরামত করে রাস্তায় নামাতে হবে। এর জন্য এক মাস সময় দেওয়া হবে। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ভিজিল্যান্স টিম গঠন করে পরিদর্শন করা হবে। এছাড়া, আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিআরটিএ এবং ডিএমপিকে চিঠি দেওয়া হবে’
এর আগে, সিটিং সার্ভিস নিয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ জানায়, রাজধানীতে চলাচলকারী সব বাসই লোকাল বাস। সিটিং সার্ভিস বলে কোনো গণপরিবহন নেই। অধিকাংশ বাস সরকারি নিয়ম ভেঙে রাতারাতি সিটিং সার্ভিসে পরিণত হয়েছে। সরকার নির্ধারিত ভাড়া মানছে না কোনো গণপরিবহনই। যাত্রী যেখানেই নামুক, সর্বশেষ গন্তব্যের ভাড়া আদায় করা হচ্ছে, যা ন্যায্য ভাড়ার চার থেকে পাঁচগুণ পর্যন্ত। এ কারণে বেশি বিপাকে আছে স্বল্পদূরত্বের যাত্রীরা। তাদের এখন ৫ টাকার জায়গায় গুনতে হচ্ছে ১০ থেকে ২০ টাকা। নয়তো ৭ টাকার জায়গায় ২০ থেকে ৩০ টাকা।
ঢাকায় পরিবহন খাতে প্রচুর চাঁদাবাজির অভিযোগে ব্যাপারে খন্দকার এনায়েতুল্যাহ বলেন, ‘কোম্পানির নামে বাস চলাচল শুরুর পরই চাঁদাবাজি বেড়েছে। একজন মালিকের গাড়ি থাক বা না থাক, ওই মালিকের অধীনে চাঁদা দিয়ে গাড়ি চালায়। এ ছাড়া ডিএমপিকে প্রতিদিন ১০৭টি বাস রিকুইজিশনে দিতে হয়। এ জন্য পুলিশ বাসমালিককে দেয় ৩০০ টাকা। এ টাকায় শ্রমিকের বেতন দেওয়া যায় না। মালিকের কিছুই থাকে না।’
বিআরটিএ সূত্রে আরও জানা গেছে, ২০১৬ সালের অক্টোবরে রাজধানী ও এর পার্শ্ববর্তী পাঁচ জেলায় চলাচলকারী সিএনজিচালিত বাসের ভাড়া কিলোমিটারে ১০ পয়সা বাড়ায় সরকার। বাসে ভাড়া কিলোমিটারে এক টাকা ৭০ পয়সা। মিনিবাসে এ টাকা ৬০ পয়সা। বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া সাত টাকা ও মিনিবাসে পাঁচ টাকা নির্ধারণ করে বিআরটিএ। প্রায় সব বাসই সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে আদায় করছে অতিরিক্ত ভাড়া। তবে অনিয়ম ঠেকাতে মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়ে মাঠে বিআরটিএ। এতে কিছু জরিমানা দিয়েই পার পান বাসমালিকরা।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাবে ঢাকা মহানগরে অভ্যন্তরীণ রুটে নিয়মিত চলাচল করে প্রায় ছয় হাজার বাস। ঢাকা মহানগরে বিআরটিএ–নির্ধারিত সর্বনিম্ন ভাড়া বাসের জন্য ৭ টাকা আর মিনিবাসের জন্য ৫ টাকা। অথচ গেটলক সিটিং সার্ভিসের বাসগুলোতে সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা থেকে ক্ষেত্র বিশেষে ৫০ টাকা পর্যন্ত নিতে দেখা যায়। প্রতিটি বাসে বিআরটিএ–নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা টাঙানোর নিয়ম আছে। কিন্তু বাসে নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা টাঙানো নেই। আর গেটলক সিটিং সেবা বলা হলেও দাঁড়ানো যাত্রী নিতে এবং যেখানে–সেখানে থামিয়ে যাত্রী নামাতে দেখা যায়।