ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,নিজস্ব প্রতিনিধি,২৯ মার্চ : লন্ডনপ্রবাসী সাইফুর রহমান নামে এক ব্যক্তি মৌলভীবাজারে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঘিরে রাখা পৃথক বাড়ি দুটির মালিক।
স্থানীয় লোকজন ও বাড়ি দুটির তত্ত্বাবধানে থাকা সাইফুর রহমানের এক আত্মীয় এই তথ্য জানিয়েছেন। জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকে মৌলভীবাজারের পৃথক দুটি স্থানে দুটি বাড়ি ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। একটি বাড়ি মৌলভীবাজার পৌরসভার বড়হাট এলাকায় অবস্থিত। অপর বাড়িটির অবস্থান সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের নাসিরপুর এলাকায়। দুটি স্থানের মধ্যে দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহ জালাল আজ বুধবার সকালে বলেন, জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে পৃথক দুটি স্থানে দুটি বাড়ি ঘিরে রাখা হয়েছে।
এদিকে পৌরসভার বড়হাটে দ্বিতল বাড়ি থেকেও জঙ্গিরা তিনটি গ্রেনেড ছোড়ে। এরমধ্যে দুইটির বিস্ফোরণ হয়। একটি অবিস্ফোরিত রয়ে গেছে। জবাবে পুলিশও তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে। দুটি আস্তানা কড়া নিরাপত্তায় ঘেরাও করে রাখা হয়েছে। ভোর রাত থেকে কৌশলে এলাকাবাসীকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার। বাড়ি দুটির তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন সাইফুর রহমানের মামাতো বোনের স্বামী জুয়েল। তিনি মুঠোফোনে বলেন, নাসিরপুরের বাড়িতে টিনের চালার তিনটি ঘর আছে। একটি ঘরে পরিবার নিয়ে তিনি থাকেন। একটি ঘরে এক রিকশাচালক থাকেন। অন্য ঘরটিতে ভাড়াটেরা থাকেন।
জুয়েলের ভাষ্য, নাসিরপুরের ঘরে গত জানুয়ারিতে বর্তমান ভাড়াটেরা ওঠেন। ভাড়াটে তার নাম বলেছেন মাহফুজ, বাড়ি টাঙ্গাইল। তিনি নিজেকে আরএফএল কোম্পানির ডিলার হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। ৭ হাজার টাকায় ঘরটি ভাড়া দেওয়া হয়। ঘরে আট সদস্য থাকতেন। মৌলভীবাজার পৌরসভার বাড়ির ভাড়াটে সম্পর্কে জুয়েল বলেন, সেখানকার ভাড়াটে তার নাম বেলাল বলেছেন। তিনি নিজেকে আরএফএলের ম্যানেজার পরিচয় দিয়েছেন। নাসিরপুরের স্থানীয় বাসিন্দা নান্নু মিয়া চৌধুরীর ভাষ্য, লন্ডনপ্রবাসী সাইফুর রহমান আজ ভোরে তার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন। নাসিরপুরের বাড়িতে গিয়ে ভাড়াটিয়াকে ডাকতে বলেন। নান্নু মিয়া বলেন, সাইফুর রহমানের ফোন পেয়ে তিনিসহ ৫-৬ জন ওই বাড়িতে যান। তাদের সঙ্গে পুলিশও ছিল। ভাড়াটিয়ার ঘরে কলিং বেল দিলে ভেতর থেকে একজন দরজা খোলেন। পুলিশ দেখে তিনি সঙ্গে সঙ্গে দরজা বন্ধ করে দেন। একটু পরে ঘরের ভেতরে হাতুড়ি পেটানোর মতো করে একটা শব্দ হয়। এরপরই পুলিশ উপস্থিত সবাইকে সরে যেতে বলে। একটু পরে ওই বাড়ি থেকে বিকট শব্দ শোনা যায়। এই ঘটনার সময় ওই বাড়ি থেকে সাইফুর রহমানের মামাতো বোন ও রিকশাচালকের পরিবার সরে যায়।
নাসিরপুরের আনকার মিয়া বলেন, ফজরের নামাজ আদায় করতে ভোররাতে ঘুম থেকে ওঠেন তিনি। তখন থেকে থেমে থেমে বেশ কয়েকবার গুলির শব্দ শুনেছেন। স্থানীয় আরও কয়েক ব্যক্তি গুলির শব্দ শোনার তথ্য জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়ার কথাও জানিয়েছেন কয়েকজন। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজালাল বলেছেন, নাসিরপুরের জঙ্গি আস্তানা থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছোড়া হয়েছে। বেলা পৌনে ১২টার দিকে নাসিরপুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে মাইকিং করতে দেখা যায়। সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানার আশপাশ থেকে লোকজনকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে বলা হয়। ঘটনাস্থলে র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্যান্য সংস্থা এসেছে।