ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,নিজস্ব প্রতিনিধি,২৬ মার্চ : আজ ২৬ মার্চ। বাঙালির শৃৃঙ্খল মুক্তির ৪৬ বছর। বিশ্বের বুকে লাল-সবুজের পতাকা ওড়ানোর দিন আজ। ১৯৭১ সালের এদিনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিল। ইতিহাসের পৃষ্ঠা রক্তে রাঙিয়ে, আত্মত্যাগের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে একাত্তরের এই দিনে যে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এ দেশের মানুষ, দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন তার চূড়ান্ত পরিণতি। রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের সূচনার সেই গৌরব ও অহঙ্কারের দিন আজ।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্দ করে দেয়ার লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে অপারেশন সার্চ লাইটের নামে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর নির্বিচারে গণহত্যা চালায়।
ভয়াল ‘কালরাত্রি’র পোড়া কাঠ, লাশ আর জননীর কান্না নিয়ে রক্তে রাঙা নতুন সূর্য উঠেছিল ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ। সারি সারি স্বজনের মৃতদেহ। আকাশে কুন্ডলী পাকিয়ে উঠছে ধোঁয়া। জ্বলে উঠল মুক্তিকামী মানুষের চোখ, গড়ল প্রতিরোধ। বঙ্গবন্ধুর ডাকে জীবনপণ সশস্ত্র লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বীর বাঙালি। ঘোরতর ওই অমানিশা ভেদ করেই দেশের আকাশে উদিত হয় স্বাধীনতার চিরভাস্বর সূর্য। বাঙালির অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই শুরু হয়েছিল একাত্তরের আজকের এই দিনে।
১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাকিস্তানী সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে নির্বিচারে বাংলার বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যা শুরু করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল সকল রাজনৈতিক নেতা-কর্মী এবং সকল সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা।
সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের আগে বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যে কোনো মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। মূহূর্তের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়।
ইংরেজিতে ঘোষণা করা সেই স্বাধীনতা ঘোষণার বাংলা অনুবাদ হলো, ‘এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন’। বাংলাদেশের জনগণ তোমরা যে যেখানেই আছ এবং যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শেষ পর্যন্ত দখলদার সৈন্য বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য আমি তোমাদের আহ্বান জানাচ্ছি। চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তোমাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। একই সঙ্গে তিনি বাংলায় যে বার্তা পাঠান সেটি হলো, ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনী অতর্কিতভাবে পিলখানা ইপিআর ঘাঁটি, রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমণ করেছে এবং শহরের রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ চলছে, আমি বিশ্বের জাতিসমূহের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছি’।
এর আগে ৭ই মার্চে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) উত্তাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ ঘোষণা দিয়ে গোটা জাতিকে স্বাধীনতার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ করেন।
এবার সত্যিই এক ভিন্ন আবহে, প্রেক্ষাপটে জাতির সামনে এসেছে স্বাধীনতা দিবস। দীর্ঘ চার দশকের দাবি পূরণে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। একাত্তরের মানবতাবিরোধীদের ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।