ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,রংপুর প্রতিনিধি,০৪ মার্চ : রংপুর সরকারি কলেজের অনার্সের ছাত্র আবদুর রহিম সৌরভ। লেখাপড়ার পাশাপাশি ২০১৬ সালে রংপুর নগরীর জলকর এলাকায় শখের বশে স্বল্প পরিসরে গড়ে তুলেছিলেন টার্কি বার্ডের খামার। এখন প্রতি মাসে ডিম ও টার্কি বার্ড বিক্রি করে তার ভালো আয় হচ্ছে। হয়েছেন স্বাবলম্বী। তার খামারে উৎপাদিত ডিম ও বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে আশপাশের এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। সুস্বাদু টার্কি বার্ডের মাংসের ব্যাপক চাহিদা থাকায় এবার বাণিজ্যিকভাবে খামার দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করছেন সৌরভ। তিনি জানান, এক মাস বয়সী এক জোড়া টার্কি বার্ডের বাচ্চা দুই হাজার ৫০০ টাকায় ও প্রতিটি ডিম ২০০ টাকায় বিক্রি করছেন। তার দেখাদেখি রংপুরে এখন ২০টির মতো টার্কি খামার গড়ে উঠেছে।
নগরীর জলকর এলাকার আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে এবং রংপুর সরকারি কলেজের ম্যানেজমেন্টের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সৌরভ ফেসবুকের মাধ্যমে টার্কি বার্ড সম্পর্কে জানতে পারেন। পরে ঢাকা, নওগাঁ ও সিলেটে গড়ে ওঠা কয়েকজন টার্কি খামারির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে সিলেট থেকে ১৭টি টার্কি বার্ডের বাচ্চা (যার মধ্যে ৯টি স্ত্রী ও ৮টি পুরুষ) কিনে এনে খামার শুরু করেন তিনি। দু’মাস বয়সের প্রতিটি টার্কির
বাচ্চা কিনেছেন ২ হাজার টাকা করে। ছয় থেকে সাত মাস বয়সে বাচ্চাগুলো ডিম দিতে শুরু করে। দেশি মুরগির মতো একটানা ১৫ থেকে ২০টি ডিম দেওয়ার পর কিছুদিন বিরতি দিয়ে আবারও ডিম দেয়। সৌরভ জানান, ৯টি স্ত্রী টার্কির জন্য সমানসংখ্যক পুরুষ টার্কির দরকার নেই। সংখ্যায় বেশি হলে পুরুষ টার্কি অধিকাংশ সময় মারামারিতে লিপ্ত হয়। তাই দুটি পুরুষ টার্কি রেখে বাকিগুলোর প্রতিটি চার থেকে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি। খামার করার পর তার পালিত টার্কিগুলো তেমন বড় ধরনের কোনো অসুখে পড়েনি।
টার্কির রোগবালাই প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই প্রবল জানিয়ে তিনি বলেন, ছয় মাসের একটি পুরুষ টার্কির ওজন পাঁচ থেকে ছয় কেজি এবং স্ত্রী টার্কির ওজন তিন থেকে চার কেজি হয়ে থাকে। কয়েকটি বাচ্চা বিক্রির পরও বর্তমানে আমার খামারে টার্কির সংখ্যা ৭০টি। এর মধ্যে বাচ্চা আছে ৩০টি। এ ছাড়া বর্তমানে দেশি মুরগির মাধ্যমে টার্কির ডিম ফোটানোর ব্যবস্থা নিয়েছি। আমার খামারে উৎপাদিত ডিম এরই মধ্যে এ এলাকা ছাড়াও ঢাকা, বরিশাল, ময়মনসিংহ, হবিগঞ্জ ও গোপালগঞ্জ থেকে লোকজন এসে কিনে নিয়ে গেছে। খামার শুরুর সময় ৪০ হাজার টাকা খরচ হলেও টার্কি বার্ড এবং ডিম বিক্রি করে আসলসহ লাভ উঠে এসেছে বলে জানান সৌরভ। তিনিই প্রথম ‘রংপুর টার্কি ফার্ম’ নামে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে টার্কি বার্ডের খামার করেছেন বলে দাবি করে বলেন, টার্কির মাংসের সুখ্যাতি বিশ্বজোড়া। এ ছাড়া উৎপাদন খরচ তুলনামূলক অনেক কম হওয়ায় এটি পালন করা আমাদের জন্য অনেক লাভজনক। টার্কির প্রধান খাবার হচ্ছে ঘাস। এ ছাড়া বাঁধাকপি, কচুরিপানা ও দানাদার খাবার খায়। তাই গ্রামাঞ্চলে যে কেউ অনায়াসে টার্কি পালন করে লাভবান হতে পারেন। তিনি আরও বলেন, একটি পুরুষ টার্কির ছয় মাসে পাঁচ থেকে ছয় কেজি ওজন হয়ে থাকে। ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলে ছয় কেজি ওজনের একটি টার্কি বিক্রি করে এক হাজার ৮০০ টাকা আয় করা যায়। এর বিপরীতে প্রতিটি টার্কির পেছনে সর্বসাকল্যে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা খরচ হয়।
রংপুরের হাঁস-মুরগি খামারের সহকারী পরিচালক ডা. জিতেন্দ্রনাথ বর্মণ জানান, টার্কি পাখি প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। এখনও আমাদের দেশে ব্যাপকভাবে এর চাষ শুরু হয়নি। তবে এর মাংস খুবই সুস্বাদু। অল্প খরচে টার্কি পালন সম্ভব বলে এর মাধ্যমে খামারিরা সহজে লাভবান হতে পারেন।
তবে সৌরভের অভিযোগ, ভারত থেকে টার্কি বার্ডের নিম্নমানের বাচ্চা আনছে একটি চক্র। সেগুলো অল্প টাকায় বিক্রি করায় ক্রেতারাও সহজেই আকৃষ্ট হচ্ছেন। কিন্তু এগুলোর মান খুবই খারাপ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাচ্চাগুলো মারা যাচ্ছ।