অগ্রাহায়ণের হালকা শীতের সন্ধ্যায় জমে ওঠেছিলো গানের আসর। জমিয়ে তুলেছিলেন কলকতার জনপ্রিয় গায়ক অনুপম রায়। তার নাচ-গানের মুগ্ধতা নিয়েই শেষ হলো অন্তর শোবিজের দুই বাংলার শিল্পীদের নিয়ে কনসার্ট ‘ক্যাচ অনুপম রায় লাইভ ইন ঢাকা’।
রাজধানীর বসুন্ধরার ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে এই কনসার্টটি অনুষ্ঠিত হয় সোমবার। সেটি সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও নানা কারণে প্রথম শিল্পী হিসেবে মঞ্চে আসেন পারভেজ সে প্রায় রাত সাড়ে আটটায়! এই শিল্পী তার পরিবেশনা শুরু করেন জনপ্রিয় গান ‘যাবি যদি’ দিয়ে আর শেষ করেন ‘পিরিতি কাঠালের আটা’র তালে। মাঝে তিনি আরো তিনটি গান গেয়ে শুনান।
পারভেজের পর মঞ্চে আসেন সুকণ্ঠি গায়িকা নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি। বহুদিন পর তাকে সরাসরি গাইতে দেখল ঢাকার দর্শক-শ্রোতা। চেহারায় কিছুটা বিরক্তির ছাপ ছিলো তার। তাই্ চারটি গান শুনিয়েই বিদায় নিলেন ঝটপট। একটি গানেও তাকে হাত পা নাড়াতে দেখা গেল। বলা চলে ন্যান্সি ছিলেন যেন এক রোবট গায়িকা। পরে জানা গেছে, দুই বাংলার গান হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশি শিল্পীদের কম মূল্যায়ণের জন্যই ন্যান্সির মুড ছিলো অফ। এ বিষয়ে তিনি গণমাধ্যমে গতকাল মুখও খুলেছেন বেশ সোজা সাপ্টা ভাষাতে।
কনসার্টে ন্যান্সি পরিবেশন করেন ‘পৃথিবীর যত সুখ’, ‘হৃদয়ের কথা’, ‘ভিতর বলে বাহির বলে’ এবং ‘আমি তোমার মনের ভেতর’ গানগুলো।
এরপর মিনিট দশেক বিরতি শেষেই বাদ্যের তালে বাংলাদেশি শ্রোতাদের ভালোবাসা ও অভিনন্দন জানিয়ে মঞ্চে আসেন কনসার্টের মধ্যমনি অনপুম রায়। তিনি সবার সামনে মাথা নুয়ে কৃতজ্ঞতা জানান শ্রোতাদের তার গান শোনর জন্য বারবার তাকে ডেকে আনায়। তিনি ধন্যবাদ জানান অন্তর শোবিজকে এই চমৎকার কনসার্টের আয়োজনের জন্য। জানালেন, দুই বাংলার মধ্যে কোনো তফাৎ খুঁজে পান না পশ্চিমবঙ্গের এই গায়ক। আর বাংলাদেশের মানুষও তার সংগীতকে গ্রহণ করেছে আন্তরিকভাবেই। আর তাই বার বার ফিরে আসেন বাংলাদেশে। এরপরই তিনি গাইতে শুরু করলেন ‘আমি আজকাল ভালো আছি’। করতালি আর নেচে গেয়ে শ্রোতারাও শিল্পীকে জানিয়ে দিলেন তারাও বেশ ভালো আছেন অনুপমের গান শুনতে এসে।
এরপর অনুপম একে একে পরিবেশন করেন ‘অটোগ্রাফ’ ছবির ‘বেঁচে থাকার গান’, ‘চলো পাল্টাই’ ছবির ‘বাড়িয়ে দাও তোমার হাত’।
হঠাৎ মঞ্চে এসে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের (র্যাব) মহাপরিদর্শক বেনজির আহমেদ বিশেষ সম্মাননা জানালেন অনুপমকে। অনুপমের গানের পোস্ট মর্ডানিজম, মেটা মর্ডানিজমের কথা উল্লেখ করে বেনজির বলেন, ‘২০১৩ সালে বাংলাদেশে খুব অস্থির একটা সময় গেছে। তখন আমি পুলিশ কমিশনার। রাত জেগে কাজ করতে হতো। সে সময় আমার একলা কাজের সঙ্গী ছিলো অনুপমের গান। আমি এই শিল্পীর প্রচন্ড রকমের ভক্ত। আজ তার পাশে বসে গান শুনতে পেরে দারুণ লাগছে। আশা করছি অনেকদিন বাঁচবেন অনুপম। আরো অনেক শ্রুতিমধুর গান করবেন আমাদের জন্য।’
আনুষ্ঠানিকতা শেষে অনুপম গলায় তুলেন হিন্দি ‘পিকু’ ছবির ‘জার্নি’ গানটি। তার পরের পরিবেশনা ‘দ্বিতীয় পুরুষ’ অ্যালবামের ‘অদ্ভুত মুগ্ধতা’। তারপর অনুরোধের জেরে গাইলেন ‘চতুস্কোণ’ ছবির ‘বসন্ত এসে গেছে’, ‘হেমলক সোসাইটি’র ‘এখন অনেক রাত’, ‘যমের রাজা দিল বর’ ছবির ‘এই শোনো’, ‘চতুস্কোণ’ ছবির ‘বোবা টানেল’, ‘পিকু’র ‘বেজুবা`।
‘বাইশে শ্রাবণ’ সিনেমার গান ‘একবার বল নেই তোর কেউ নেই’ গানটি শুরু করতেই দর্শকরা একযোগে গেয়ে উঠলেন অনুপমের সঙ্গে। ‘অটোগ্রাফ’ সিনেমার ‘আমাকে আমার মতো থাকতে দাও’ গানটি দিয়ে ইতি টানলেন কনসার্টের। শীতের রাতে শ্রোতারা ফিরে এলো অনুপমের সুরের মুগ্ধতা প্রাণে নিয়ে আবার কোনো এক সন্ধ্যায় দেখা হবার প্রত্যাশায়।