আদালতে দোষ স্বীকার করলেন কাদের খান

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,গাইবান্ধা প্রতিনিধি,২৬ ফেব্রুয়ারি : গাইবান্ধা-১ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলামকে লিটন হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন একই আসনের জাতীয় পার্টির সাবেক সাংসদ আবদুল কাদের খান। পুলিশের রিমান্ডে থাকার তিন দিনের মাথায় শনিবার বিকেলে তিনি এই জবানবন্দি দেন।

জবানবন্দি গ্রহণের জন্য কাদের খানকে বেলা দুইটায় গাইবান্ধার বিচারিক হাকিম জয়নাল আবেদীনের আদালতে নিয়ে যায় পুলিশ। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে রাত ৯টা ২৭ মিনিটে তাকে আদালত থেকে বের করা হয়। পুরো সময়ই পুলিশের সদর দপ্তর ও রংপুর রেঞ্জের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আদালত এলাকায় উপস্থিত ছিলেন। রংপুর রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি আহমেদ বশির জানান, শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টার পর থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত গাইবান্ধার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জয়নাল আবেদিন তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন।

অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, “কাদের খান আদালতে ১৬৪ ধারায় এমপি লিটন হত্যার পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ ও বাস্তবায়ন সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন।” এমপি লিটন হত্যা মামলার অভিযোগপত্র ১৫ দিনের মধ্যে আদালতে জমা দেওয়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

লিটন হত্যা মামলায় গত মঙ্গলবার বগুড়া শহরের রহমাননগর জিলাদারপাড়ার বাসা থেকে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল কাদের খানকে প্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।

রংপুর রেঞ্জের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক আহমেদ বশির সাংবাদিকদের বলেন, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে কাদের খান সম্পূর্ণ ঘটনা স্বীকার করেছেন। এরপর তাকে আদালতে আনা হয়। তিনি নিজেকে সম্পৃক্ত করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি যে এই ঘটনার পরিকল্পনা ও অর্থায়নের সঙ্গে সরাসরি জড়িত, সে বিষয় অকপটে স্বীকার করেছেন।

কাদের খান কেন এই হত্যায় জড়িত হলেন—এ প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক বলেন, প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে কাদের
খান এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। প্রতিহিংসাটা হচ্ছে ক্ষমতার লোভ, সাংসদ হতে না পারা। হত্যার মাধ্যমেই তিনি প্রতিহিংসা চরিতার্থ করেন। তিনি বলেন, ‘কিলিং মিশনে তিনজনই ছিলেন। এ ছাড়া সহায়তাকারী হিসেবে আরও কয়েকজনের নাম আসতে পারে। কেউ তথ্যদাতা, কেউ আশ্রয় দিয়েছেন। তদন্তের স্বার্থে অনেক কিছু বলা যাবে না। আরও কেউ সম্পৃক্ত থাকলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।’

অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক বলেন, সাংসদ মনজুরুল হত্যার পরিকল্পনা হয় ঘটনার ছয় মাস আগে। গত অক্টোবরে ওই তিনজনকে দিয়ে একবার হত্যার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তিনজনই গরিব মানুষ। তারা কাদেরের বিশ্বস্ত কর্মী-সমর্থকের মতো কাজ করতেন। তাদের অর্থ দিয়ে ও প্রলোভন দেখিয়ে হত্যাকাণ্ডে যুক্ত করেছিলেন কাদের। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিয়ার রহমান বলেন, জবানবন্দি গ্রহণ শেষে কর্নেল (অব.) কাদের খানকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর আগে মনজুরুল হত্যার ঘটনায় মেহেদী হাসান, শাহিন মিয়া, আনারুল ইসলাম (রানা) ও কাদের খানের গাড়িচালক আব্দুল হান্নান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পুলিশ বলছে, মেহেদী, শাহিন ও আনারুল হত্যায় সরাসরি অংশ নেন।

জাতীয় পার্টির সাবেক সাংসদ ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা কাদের খানকে বগুড়া শহরের বাসায় ছয় দিন ‘নজরবন্দী’ করে রাখার পর গত মঙ্গলবার তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন গাইবান্ধার আদালতে হাজির করে তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। ওই দিন রাতেই কাদের খানকে সঙ্গে নিয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম ছাপরহাটি খানপাড়ায় তার গ্রামের বাড়ি থেকে ছয়টি গুলিসহ একটি পিস্তল উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দিন কাদের খান ঘটনাস্থলে উপস্থিত তার ছোট ভাই ইউসুফ খানের স্ত্রী ফিরোজা বেগমের কাছে ক্ষমা চান।

গতকাল দুপুরে কাদের খানের বাড়ির আঙিনায় বসে কথা হয় ফিরোজা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ওই দিন তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন। পুলিশের কয়েকজন সদস্য তাকে ডেকে তুলে ঘরের পাশের গরুর খামারের দিকে নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে তিনি হেলমেট ও হাতকড়া পরা অবস্থায় ভাশুর কাদের খানকে দেখতে পান। তখন কাদের খান ফিরোজাকে বলেন, ‘তোমরা আমাকে মাফ করে দাও। আমাকে বিদায় দাও। মনে হয় এ বাড়িতে আর আসা হবে না।’

ফিরোজা বেগম বলেন, ‘একপর্যায়ে ভাইজান (কাদের খান) পুলিশ সদস্যদের বলেন, আমার পরিবারের কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করবেন না। ওরা কিছু বোঝে না। কেউ কিছু জানে না।’

আবদুল কাদের খান পেশায় চিকিৎসক। তার বাবা নয়ন খাঁ ছিলেন পেশায় কৃষক। পাঁচ ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে কাদের তৃতীয়। সাংসদ মনজুরুল ইসলাম হত্যার পর ওই আসনে উপনির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী ছিলেন তিনি।

পুলিশের মহাপরিদর্শক (অব.) এ কে এম শহীদুল হক বুধবার চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের বলেন, সাংসদ মনজুরুল হত্যার পরিকল্পনাকারী কাদের খান। তার ইচ্ছা ছিল মনজুরুলকে সরিয়ে পথ পরিষ্কার করে পরবর্তী সময়ে সাংসদ হবেন।

খাগড়াছড়িতে বদলি হওয়ায় গাইবান্ধা জেলার পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল ইসলাম গতকাল দুপুরে কর্মস্থল ত্যাগ করেন। এর আগে বেলা ১১টায় তিনি বলেন, মনজুরুল হত্যার রহস্য উন্মোচন এবং পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করায় তারা সন্তুষ্ট। এ ঘটনায় যারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন, তাদের বক্তব্য পর্যালোচনা করে ঘটনাটি আরও তদন্ত করা হবে।