ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,নিজস্ব প্রতিনিধি,০৪ ফেব্রুযারি : একেবারে নতুন প্লাস্টিকের কৌটা। মোড়ানো মোড়কও নতুন। বুঝার উপায় নেই এই কৌটার ভেতরে থাকা মবিল ভেজাল। কেউ কিনে দ্রুত নিয়ে চলে যায়। আবার কেউ সঙ্গে সঙ্গেই গাড়ির যন্ত্রে ঢেলে দেন। কিন্তু ওই মবিলের মধ্যে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ ভেজাল। তাতে দেয়া হয়েছে কেরোসিন ও গাড়ির পোড়া মবিল।
শুধু কি তাই? না আরো আছে। বাজারে থাকা বিভিন্ন শ্যাম্পুতেও রয়েছে ভেজাল। নিম্নমানের সাবান ঘন করে সানসিল্ক এবং অলক্লিয়ার শ্যাম্পু নকল করে বাজারজাত করছে একটি চক্র। র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতে এসব ভেজাল পণ্য ধরা পড়ছে।
এ ব্যাপারে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী মাজিস্ট্রেট মো. সারোয়ার আলম বলেন- ভেজাল পণ্যে ক্রেতারা যেমন সঠিক মানসম্পন্ন পণ্যটি পায় না। তেমনি দেহেরও ক্ষতি হচ্ছে।
তিনি জানান, গত বছরের অক্টোবরে পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজার ও নয়াবাজার এলাকায় অভিযান চালায় র্যাব। এতে সেখান থেকে ভেজাল মবিল উদ্ধার করা হয়। নিম্নমানের সাবান দিয়ে টেম্পোরারি কারখানায় তৈরি হচ্ছে শ্যাম্পু। সেগুলো বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নামে বাজারজাত করা হচ্ছে। এর একটি চক্র সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। ইতিমধ্যে ওই চক্রটি চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত ও গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগ পেয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের গোয়েন্দা দল মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করে। গত বছরের অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে পুরান ঢাকার ইসলামপুর বাজারে অভিযান চালায় র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। ওই অভিযানে নেতৃত্ব দেন র্যাবের নির্বাহী মাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। ওই অভিযান ছিল সিফাত এন্টারপ্রাইজ নামে একটি মবিলের দোকানসহ আশেপাশের আরো কয়েকটি দোকানে। অভিযানের সময় অনেক ব্যবসায়ী দোকানে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যান।
ভ্রাম্যমাণ আদালত ওই দোকানের মবিল মান নিয়ন্ত্রণের মেশিন দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। ওই পরীক্ষায় মবিলের ভেজালের বিষয়টি ধরা পড়ে। পরে ওই ভেজালের বিষয়টি জানার জন্য ওই দোকানের মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
জানা যায়, ওই মবিলটি একটি ভেজাল পণ্য। পুরান ঢাকার শশীদাস লেন এবং কদমতলীর দক্ষিণ দনিয়ায় একাধিক কারখানা রয়েছে। ওই কারখানাগুলোতে ভেজাল মবিল তৈরি করা হয়।
সূত্র জানায়, ঢাকার বিভিন্নস্থানের ভাঙ্গারি দোকান থেকে মবিলের প্লাস্টিকের খালি বোতল সংগ্রহ করে ওই চক্রটি। তারপর সেটি পরিষ্কার করা হয়। এরপর তারা রাজধানীর বিভিন্ন দোকান এবং বিভিন্ন পেট্রোল প্যাম্প থেকে পাইকারি দামে মবিল সংগ্রহ করে।
এছাড়াও বিভিন্ন গ্যারেজ থেকে তারা গাড়ির ব্যবহৃত পোড়া মবিল সংগ্রহ করে। এরপর তারা একটি বালতিতে করে নতুন কিছু মবিল, পোড়া মবিল এবং কেরোসিন মেশায়। এরপর তাদের নিজস্ব মেশিনে নতুন মোড়ক তৈরি করে তা এঁটে দেয় গ্যালনে।
সূত্র জানায়, তখন তারা ওই মবিলটি যমুনা লুব্রিকান্টসহ বিভিন্ন কোম্পানির নামে ঢাকার ও ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে বাজারজাত করতো। অন্যান্য মবিলের মতো একই দামে সাধারণ গ্রাহকের কাছে বিক্রি করা হতো।
একই দিনে ওই এলাকায় অভিযান চালায় র্যাব। অভিযানে বিভিন্ন দোকান থেকে বহুজাতিক কোম্পানির শ্যাম্পু জব্দ করা হয়। পরে মান নিয়ন্ত্রণের মেশিনে পরীক্ষা করে দেখা যায় এগুলো ভেজাল শ্যাম্পু। অনুসন্ধানে র্যাব জানতে পারে পুরান ঢাকাসহ পাশের জেলা নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এসব ভেজাল শ্যাম্পু তৈরি করে। তারা বাজার থেকে নিম্নমানের সাবান ক্রয় করে মেশিনের মাধ্যমে লিকুইড করে বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানির নামে বিক্রি করে। র্যাব জানায়, চুল পড়া থেকে মুক্তি এবং চুল রুক্ষ্ম না হয় এজন্য শ্যাম্পু ব্যবহার করে মানুষ। কিন্তু ওই শ্যাম্পু ব্যবহারের ফলে চুলের আরো ক্ষতি হয়।