ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,নারায়নগঞ্জ প্রতিনিধি,১৯ জানুয়ারি : বহুল আলোচিত নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলার আসামি নারায়গঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, বরখাস্তকৃত লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদসহ ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামি ফাঁসির কনডেম সেলে বিষণ্ণ ও চিন্তিত অবস্থায় মঙ্গলবার প্রথম দিন পার করেছেন।
মঙ্গলবার কারাবিধি অনুযায়ী প্রাপ্য খাবার খেয়েছেন। তারা স্বাভাবিক ছিলেন। সোমবার বিকালে ৫ আসামিকে কয়েদির পোশাক পরিয়ে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে রাখা হয়েছে।
কারা সূত্র জানায়, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এর ফাঁসির কনডেম সেলে বন্দি আছেন র্যাবের ক্যাম্প কমান্ডার বরখাস্ত মেজর আরিফ হোসেন এবং বরখাস্ত লে. কমান্ডার মাসুদ রানা। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর ফাঁসির কনডেম সেলে আছেন র্যাব-১১ এর সাবেক অধিনায়ক বরখাস্ত লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, সিদ্দিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ও সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেন, ল্যান্স নায়েক বেলাল হোসেন। দুটি কারাগারে এ মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি পাঁচজনের মধ্যে শুধু বরখাস্ত লে. কমান্ডার মাসুদ রানার ছোট ভাই মঙ্গলবার কারাগারে এসে সাক্ষাৎ করে গেছেন।
কারা সূত্র জানায়, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তদের কারাবিধি অনুযায়ী পৃথক সেলে রাখা হয়েছে। সোমবার রাত থেকেই তাদের কয়েদিদের জন্য নির্ধারিত খাবার দেয়া হচ্ছে। সেলে মঙ্গলবার দিনভর তাদের বিমর্ষ অবস্থায় কেটেছে। কখনও বসে, কখনও পায়চারি বা ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করে তারা বেশির ভাগ সময় পার করেছেন। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার আগে তারা কারাগারে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দির মর্যাদা ভোগ করতেন। কারাবিধি অনুযায়ী সেলে খাট, মশারি, পড়ার টেবিল, সেবক ও পছন্দ অনুযায়ী খাবার পেতেন। এখন ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় কনডেম সেলে শুধু কম্বল ও বালিশ সরবরাহ করা হয়েছে। খাবার হিসেবে দেয়া হচ্ছে কয়েদিদের সাধারণ খাবার।
কাশিমপুর কারাগার পার্ট-১ এর সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা জানান, মঙ্গলবার সকালের নাস্তা হিসেবে আরিফ হোসেন ও মাসুদ রানাকে আটার রুটি ও গুড়, দুপুরে ভাত, ডাল, মাছ ও রাতে ভাতের সঙ্গে সবজি, মাছ অথবা মাংস দেয়া হয়েছে। সেলে দিনভর তাদের পায়চারি ও উঠে বসে বিমর্ষ, চিন্তিত অবস্থায় দিন কাটাতে দেখা গেছে। সকালে কারাগারের চিকিৎসক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে জানিয়েছেন তারা সুস্থ আছেন। বেলা ১১টার দিকে রানার ছোট ভাই কারাগারে এসে দেখা করে গেছেন। এটি ছিল তাদের রুটিন সাক্ষাৎ।
কাশিমপুর কারাগার পার্ট-২ এর জেলার নাশির আহমেদ জানান, কারাগারে পৌঁছানোর পরপরই নিয়ম অনুযায়ী ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামিকে সাদা-লাল ডোরাকাটা কয়েদির পোশাক পরিয়ে ফাঁসির সেলে পাঠানো হয়। স্বাভাবিক কারণেই তারা মঙ্গলবার বিষণ্ণ ছিলেন। তিনি কয়েক দফা তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে খোঁজখবর নিয়েছেন। কারা সূত্র জানায়, কাশিমপুরে দুটি কারাগারে বন্দি ফাঁসির পাঁচ আসামিকে সোমবার রাতে সাধারণ পোশাক খুলে কয়েদির পোশাক পরানো হয়। পরে কারাবিধি অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে তাদের ফাঁসির কনডেম সেলে নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েদির পোশাকে আসামিদের তখন বিষণ্ণ দেখাচ্ছিল। তারা স্বাভাবিক থাকলেও চোখেমুখে ছিল হতাশার কালো ছাপ।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এর সুপার সুব্রত কুমার বালা ও কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক জানান, সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত আসামিরা স্বাভাবিক ছিলেন। নিয়মিত খাবার খেয়েছেন। আসামিদের কারাবিধি অনুসরণ করেই রাখা হয়েছে। কারাবিধির বাইরে কোনো কিছু করার সুযোগ নেই।
ফতুল্লা প্রতিনিধি আলামিন প্রধান জানান, বিগত সময় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে তারা নূর হোসেনকে নানা হিসাব ও নিরাপত্তা নিতে ব্যস্ত রাখলেও এখন মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দিনক্ষণ গুনতে কাছে নেই কেউ। বস দিনক্ষণ গুনছে কাশিমপুরে (কারাগার) আর হিসাবরক্ষক ও নিরাপত্তা কর্মীরা গুনছে নারায়ণগঞ্জে (কারাগার)। এ নিয়ে মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় আইনজীবী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচনার ঝড় ওঠে। দেশবাসীর কাছে আলোচিত হয়ে ওঠে এ রায়।
ফতুল্লা মডেল থানায় করা নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের দুটি মামলায় সোমবার ৩৫ আসামির মধ্যে ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়। এদের মধ্যে ১২ জন পলাতক রয়েছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছে প্রধান আসামি নূর হোসেনসহ তার পাঁচ সহযোগী। সহযোগীরা হলেন নূর হোসেনের প্রধান বডিগার্ড (নিরাপত্তাকর্মী) মর্তুজা জামান চার্চিল, প্রধান ক্যাশিয়ার আলী মোহাম্মদ, ক্যাশিয়ার (হিসাবরক্ষক) সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সহপ্রচার সম্পাদক আবুল বাশার, মাদক স্পট জুয়া ও অশ্লীল নৃত্য পরিচালনাকারী রহম আলী ও মিজানুর রহমান।
নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের জেলার আসাদুর রহমান বলেন, আমাদের কারাগারে ১৫টি সেল রয়েছে। এসব সেলে সাত খুনের সাজাপ্রাপ্ত ১৮ বন্দিকে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে নূর হোসেনের সহযোগী হিসেবে পরিচিত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচজনও রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, তাদের কয়েদি পোশাক পরানো হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে প্রত্যেকের আত্মীয়-স্বজন সাক্ষাৎ করেছে।
সূত্র: যুগান্তর