ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),সাংবাদিক ইব্রাহীম মেঘনা (কুমিল্লা) থেকে, শুক্রবার ২৫ এপ্রিল ২০২৫ || বৈশাখ ১২ ১৪৩২ :
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সর্বশেষ ভাড়ার তালিকা অনুযায়ী, নন-এসি বাসে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ২ টাকা ১২ পয়সা। এসি বাসের ক্ষেত্রে এই হার সাধারণভাবে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বেশি। সেই হিসাবে গুলিস্তান থেকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও (প্রায় ২৮ কিলোমিটার) পর্যন্ত এসি বাসের সর্বোচ্চ ভাড়া হওয়া উচিত ৭৪ টাকা। আর কুমিল্লার মেঘনা উপজেলা (প্রায় ৩৫ কিলোমিটার) পর্যন্ত সর্বোচ্চ ভাড়া হওয়া উচিত ৯৩ টাকা।
Advertisement
বাস্তবে সরকারি পরিবহন সংস্থা বিআরটিসির বাসে এই রুটগুলোতে যাত্রীদের কাছ থেকে যথাক্রমে ৮০ ও ১২০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। যাত্রীদের প্রশ্নের মুখেও বাসকর্মীদের কাছ থেকে মেলে না কোনো লিখিত তালিকা, বরং ভাড়ার তালিকা অনুপস্থিত থাকে অধিকাংশ বাসেই। এই প্রক্রিয়ায় যাত্রীদের প্রতিনিয়ত দিতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ, যা আইনগতভাবে অনুমোদিত নয়, নৈতিকভাবেও গ্রহণযোগ্য নয়।
সরকারি বাসে এ ধরনের অনিয়ম শুধু নিয়ম ভঙ্গ নয়, এটি এক ধরনের বার্তা নিয়ম করে রাখা আছে, তবে প্রয়োগের বাধ্যবাধকতা নেই। নিয়ম যখন প্রয়োগে অনুপস্থিত থাকে, তখন সেটি কেবল কাগজে-কলমে অস্তিত্ব ধরে রাখে।
এমন এক সময়ে, যখন গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানোর দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে, তখন রাষ্ট্রীয় পরিবহন সেবায় এ ধরনের অনিয়ম উদ্বেগের। কারণ, সরকারি পরিবহন যদি নিজেরাই আইন মানতে ব্যর্থ হয়, তাহলে বেসরকারি পরিবহন খাত থেকে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করাটাই হয়ে পড়ে অসঙ্গত।
Advertisement
এই অবস্থা শুধুই যাত্রীস্বার্থবিরোধী নয়, বরং এটি একটি বৃহত্তর প্রশ্নের জন্ম দেয়। বিআরটিএ কী শুধু ভাড়া নির্ধারণ করেই দায়িত্ব শেষ করে? তার পরিপালন নিশ্চিত করার দায়িত্ব কে নিচ্ছে?
প্রত্যেক বাসে ভাড়ার তালিকা প্রদর্শন বাধ্যতামূলক হলেও তা মানা হচ্ছে না। যাত্রীদের জন্য অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা থাকলেও তার কার্যকারিতা প্রশ্নসাপেক্ষ। নিয়ম ভাঙার সুযোগ থেকেই যাচ্ছে, এবং কেউ যেন জবাবদিহির আওতায়ও আসছে না।
নিয়ম থাকলে তা প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। আর যদি ভাড়া বাড়াতে হয়, তার জন্য প্রয়োজন যথাযথ যৌক্তিকতা, স্বচ্ছ প্রক্রিয়া এবং জনগণের সামনে দায়বদ্ধতা। অন্যথায় এই বাড়তি ভাড়া শুধু অব্যবস্থাপনার প্রতিচ্ছবি নয়, বরং হয়ে উঠবে একধরনের প্রতিষ্ঠিত অন্যায়।
Advertisement
সরকারি পরিবহনের উদ্দেশ্য মুনাফা নয়, জনগণের সেবা। অথচ বাস্তবতা বলছে, সেবার চেয়ে ভাড়া আদায়টাই যেন মুখ্য হয়ে উঠেছে।
যখন রাষ্ট্র নিজেই আইন মানার ক্ষেত্রে উদাসীন হয়ে পড়ে, তখন জনসাধারণের মধ্যে আস্থাহীনতা জন্ম নেয়। সেই আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে শুরুটা করতে হবে নিয়মকে সম্মান জানিয়ে নিজের ঘর থেকেই।