লুটের চর গিলে খাচ্ছে লুটেরা মেঘনা গ্রুপ (ভিডিও)

SHARE

https://www.facebook.com/share/p/16PRbCee4m/

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বিশেষ প্রতিনিধি, শুক্রবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৫ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩২  :

মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ৭১ টিভির মালিক মোস্তফা কামালের কালো থাবায় নাকাল কুমিল্লার মানুষ। জেলার মেঘনায় শত শত বিঘা জমি দখল, বসতি উচ্ছেদ ও বৃক্ষনিধন থেকে হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত এমন কোনো অপরাধ নেই, যা তিনি করেননি। রীতিমতো অভিযোগের পাহাড় রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে এতদিন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের এই প্রভাবশালী দোসরের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস করেনি। অতীতে যারা এ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কথা বলার চেষ্টা করেছে, তাদের মামলা-হামলায় দমিয়ে রাখা হয়। অভিযোগ রয়েছে, যারা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছিলেন তাদের জীবন প্রদীপই কেড়ে নিয়েছে তার সন্ত্রাসী বাহিনী।

Advertisement

জানা গেছে, মেঘনা উপজেলার লুটেরচর থেকে ভাটেরচর সড়কটি নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করে দেন মফিজুল ইসলাম দুধ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম মফিজুল ইসলাম। পরে সড়কটির মধ্যে খালের ওপর সরকারি সেতুও নির্মাণ করা হয়। এলজিইডির একটি আইডি নম্বর করানো হয় পাকাকরণের জন্য। এ শান্তভূমিতে কুদৃষ্টি পড়ে মোস্তফা কামালের। সংশ্লিষ্ট সড়ক, সেতু এবং সড়কের পাশে থাকা প্রায় ৪৩টি আকাশমণি গাছ কেটে আওয়ামী লীগের আমলে এলাকার প্রভাবশালীদের সমন্বয়ে তিন ফসলি কৃষিজমি ক্রয় করে এবং সরকারি খাল, খাসজমিসহ নদীর ভূমি ভরাট করে মেঘনা গ্রুপ। পরে এলাকাটিকে কুমিল্লা অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ সরকার।

স্থানীয় বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল গাফফার বলেন, সড়কটি ছিল লুটেরচরের বাসিন্দাদের জন্য অতিগুরুত্বপূর্ণ। ওই কাঁচা রাস্তা দিয়ে নদীতে যাওয়া যেত, আশপাশের জমিগুলো চাষ করার জন্য যোগাযোগেরও একমাত্র মাধ্যম ছিল সেটি। কিন্তু মেঘনা গ্রুপ সেটি দখল করায় অসহায় হয়ে পড়ে এলাকার মানুষ। এ ছাড়া সেখানে একটি স্টেডিয়াম করার আশ্বাস দিলেও তা করা হয়নি। চরের বাসিন্দাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
আরেক বাসিন্দা বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের যোগসাজশে জমিগুলো দখল করা হয়। তাই ভূমির মালিকরা প্রতিবাদ করতে পারেননি।

লুটেরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক বলেন, আগে যারা উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন, তারা প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে মিলে এলাকাবাসীকে ঠকিয়েছেন। তারা যোগসাজশে সরকারি সড়ক, খাল, খাসজমি ও মালিকানা ফসলি জমি দখল করেছেন। স্থানীয় কৃষি ও কৃষক বাঁচাতে সেগুলো উদ্ধার হওয়া জরুরি।

Advertisement

এসব বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেতা বলেন, এ বিষয়ে প্রতিবাদ করায় মেঘনা গ্রুপ তিনিসহ স্থানীয়দের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে।

২০২৩ সালের গত ২০ ডিসেম্বর মেঘনায় একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে মেঘনা গ্রুপকে প্রাথমিক অনুমোদন বা প্রি-কোয়ালিফিকেশন লাইসেন্স দেয় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। সে হিসাবে ‘তিতাস ইকোনমিক জোন’ হবে মেঘনা গ্রুপের মালিকানাধীন চতুর্থ অর্থনৈতিক অঞ্চল।

স্থানীয়রা জানান, মেঘনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে চালিভাঙ্গায় প্রায় ১৬১ একর জমিতে তিতাস অর্থনৈতিক অঞ্চলের অবস্থান। পরে এটাকে ৪০০ একরে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য কাইয়ুম হোসাইন, বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল গাফফারসহ আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের সহায়তায় নামমাত্র মূল্যে কৃষিজমিগুলো দখল করা হয়। যারা সহজে জমি দিতে রাজি হয়নি, তাদের দেখানো হয় নানা ভয়ভীতি।
সূত্র জানায়, মেঘনা নদীঘেরা এই চর বেছে নেওয়ার পেছনে রহস্য নদীর শতবিঘা জমি দখল করা। সাধারণ মানুষ জমির মূল্য না পেয়ে দিশাহারা, ভয়ে মুখ খুলছে না কেউ। বালু ভরাটের টাকা নিয়ে কাইয়ুম ও গাফফারের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে দীর্ঘদিন ধরে। জমি ক্রয় থেকে শুরু করে বালু ভরাট, আধিপত্য বিস্তারসহ নানা কারণে প্রতিষ্ঠানটির সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে একাধিক ব্যক্তি হত্যার শিকার হয়।

সরেজমিন দেখা যায়, স্থানীয় প্রভাবশালীরা দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যোগসাজশে কৃষকদের জমি কেনার নামে দখল করছে। বহু জমির মালিক সঠিক কাগজপত্র নিয়ে বিভিন্ন অফিসে ধরনা দিয়েও তাদের জায়গা উদ্ধার করতে পারছেন না। আবার তাদের প্রভাবের ভয়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। যারা বেশি দৌড়াদৌড়ি করেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে কোণঠাসা করে রাখে মেঘনা গ্রুপের সাঙ্গোপাঙ্গরা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে কুমিল্লা অর্থনৈতিক অঞ্চল-২-এর সিনিয়র ডিজিএম মনিরুজ্জামানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

Advertisement

সরকারি সড়ক, খাল ও সেতু বেদখল হওয়ার বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) লুৎফুন নাহার শারমীন বলেন, ‘এলজিইডির সঙ্গে কথা বলে আমরা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
মেঘনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হ্যাপি দাস বলেন, ‘আমি শুনেছি মেঘনা গ্রুপ অর্থনৈতিক অঞ্চল করার নামে উপজেলার সরকারি খাল দখল করে ভরাট করেছে। এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছি। এ ছাড়া আর কোথাও সরকারি ও কৃষকদের জমি দখল করেছে কি না, সার্ভেয়ার দিয়ে তদন্ত করছি ।’