ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),রাজনীতি প্রতিনিধি,রোববার ২০ এপ্রিল ২০২৫ || বৈশাখ ৭ ১৪৩২ :
শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির জন্য আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করা হয়েছে। বিদেশে পলাতক এসব ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করতে ইন্টারপোলের কাছে পৃথক তিনটি ধাপে আবেদন করেছে বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)। ইন্টারপোল যদি রেড নোটিশ জারি করে, এর মাধ্যমে ভারতসহ বিদেশে পলাতক অন্য আসামিদের দেশে ফেরত আনা ও বিচারের মুখোমুখি করা আদৌ সম্ভব কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বাংলাদেশের সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে মাত্র দুটি দেশের। দেশ দুটি হলো-ভারত ও থাইল্যান্ড। আর ইন্টারপোলে স্বাক্ষর করেছে বিশ্বের ১৬৫টি দেশ।
Advertisement
আসামিদের মধ্যে শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট পালিয়ে যান ভারত। এরপর বিভিন্ন সময় প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, আসাদুজ্জামান খান কামাল, আ ক ম মোজাম্মেল হক, তারিক আহমেদ সিদ্দিক ও জাহাঙ্গীর কবির নানক ভারতে রয়েছেন। হাছান মাহমুদকে দেখা গেছে বেলজিয়ামে আর বেনজীর আহমেদ আছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে। বাকিদের অবস্থান জানা যায়নি।
রেড অ্যালার্ট জারির মাধ্যমে আসামি দেশে ফেরত আনার বিষয়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরুল হুদা চ্যানেল 24 অনলাইনকে বলেন, আসামি যে দেশে আছেন, সেই দেশের বিচারিক কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্টি হলে ফেরত দিতে পারে। তারা কাগজপত্র দেখে যদি মনে করেন দেশে ফেরত পাঠানো যায়, তাহলে সম্ভব।
ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্টের মাধ্যমে আসামি ফেরত আসছে—এরকম ঘটনা মনে পড়ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, প্রত্যর্পণ চুক্তির মাধ্যমে আসামি ফেরত আনা হয়েছে। যেমন— বজলুল হুদাকে ১৯৯৮ সালে থাইল্যান্ড থেকে ফেরত আনে বাংলাদেশ। এছাড়া কোনো চুক্তি না থাকলেও দুই দেশের রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের সম্পর্কের বোঝাপড়ার মাধ্যমে আসামি ফেরত আনতে পারে। তবে ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট জারির মাধ্যমে বাংলাদেশে আসামি ফেরত আনা হয়েছে, এরকটি মনে পড়ছে না।
Advertisement
সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা আরও বলেন, আল্টিমেটলি সব কিছু রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে। ইন্টারপোল বাধ্য করতে পারে না। আসামি যে দেশে আছে, সে দেশের সংশ্লিদের সঙ্গে আলাপ করতে হবে। প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকলে ভালো, সে চুক্তি অনুযায়ী চেষ্টা করতে হবে। রেড অ্যালার্ট জারির মাধ্যমে সম্ভব না হলে, পারস্পরিক আইনি সহায়তা চুক্তির মাধ্যমে চেষ্টা করা যেতে পারে। তবে শুধু আইনি প্রক্রিয়ায় আসামি ফেরানো সম্ভব নয়, লাগবে রাজনৈতিক সদিচ্ছা।
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনানের প্রসিকিউটর (প্রশাসন) গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম চ্যানেল 24 অনলাইনকে বলেন, বিদেশে পলাতক শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করতে ইন্টারপোলের কাছে পৃথক তিনটি ধাপে আবেদন করেছে বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)। এনসিবি সংশ্লিষ্ট আসামির বিরুদ্ধে আদালতের আদেশসহ প্রয়োজনীয় তথ্যাদি ইন্টারপোল সদর দপ্তরে পাঠিয়েছে। ইন্টারপোলের সদর দপ্তর সেটি যাচাই করে দেখে আবেদনটি বৈধ হলে রেড অ্যালার্ট জারি করবে। তারপর রেড অ্যালার্টের আওতাভুক্ত ১৯৫টি সদস্য রাষ্ট্রে নোটিশে পাঠানো হবে। এই নোটিশে আসামির ছবি, পরিচয়, অপরাধের ধরন, এবং কোথায় তাকে খুঁজে পাওয়া যেতে পারে সে সম্পর্কিত তথ্য থাকে। আসামি যে দেশে আছে, সেই দেশের ইন্টারপোল গ্রেপ্তার করবে। এরপর যে দেশ আবেদন করেছে, সেই দেশে আসামি হস্তান্তর করবে।
ইন্টারপোলের মাধ্যমে যদি আসামি ফেরত না আনা যায়, সেক্ষেত্রে বিচারিক প্রক্রিয়া কি হবে— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইনে পলাতক আসামির বিচারের ব্যবস্থা রয়েছে। তাদেরকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার জন্য বাংলাদেশের ঠিকানা নোটিশ পাঠানো হবে পুলিশের মাধ্যমে। খুঁজার পর পুলিশ আসামিদের না পেলে একটি রিপোর্ট দেবে। যেখান বলা থাকবে, তাদের কোন কোন পদ্ধতিতে খুঁজা হয়েছে, কিন্তু পাওয়া যায়নি। এরপর বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকায় আসামিকে আদালতে সারেন্ডার করার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। যাতে একটি তারিখ নির্ধারিত করে দেয়া হবে।
প্রসিকিউটর মোনাওয়ার হুসাইন তামীম আরও বলেন, নির্ধারিত প্রক্রিয়া শেষে আসামির হাজির না হলে আদালত তার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ করবে। যাকে কমপক্ষে তিন সপ্তাহ সময় দেয়া হবে শুনানি করার জন্য। ওই আইনজীবী মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় খরচে আসামির পক্ষে আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন।
Advertisement
প্রসঙ্গত, ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট বা রেড নোটিশ হচ্ছে এমন একটি আন্তর্জাতিক সতর্কবার্তা, যার মাধ্যমে কোনো দেশ আন্তর্জাতিক অপরাধে অভিযুক্ত বা পলাতক আসামিকে বিশ্বের অন্যান্য দেশে খুঁজে বের করার জন্য সহযোগিতা চায়। সদস্য রাষ্ট্রগুলো ওই ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে আটক করে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে সাহায্য করে।
শেখ হাসিনা-কাদেরসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির আবেদন। ছবি: সংগৃহীত