১০/০৮/২০১৬
রাজধানীর কল্যাণপুরসহ কয়েকটি হামলায় জঙ্গিদের ঠেকাতে পুলিশ ‘যে সক্ষমতায় দেখিয়েছে’ তাতে এ বাহিনীর প্রতি জনমনে আস্থা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকেও প্রশংসা এসেছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
মঙ্গলবার বিকালে পুলিশ সদর দপ্তরে এক অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ পুলিশ যে দেশপ্রেম, দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব দেখিয়েছে- তা শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছে।
“আপনারা গুলশান, শোলাকিয়া ও কল্যাণপুরে জঙ্গি দমনে যে সক্ষমতা দেখিয়েছেন তাতে জনমনে আস্থা বেড়েছে। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে যে কোনো মূল্যে বাংলাদেশকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ মুক্ত রাখতে হবে।”
পুলিশ সদর দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে ২০১৬ সালের ত্রৈ-মাসিক (এপ্রিল-জুন) অপরাধ পর্যালোচনা সভার দ্বিতীয় অধিবশেনের বক্তব্যে এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
জুলাইয়ের শুরুতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলা ঠেকাতে গিয়ে চার পুলিশ সদস্য নিহত হয়। এসময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে সন্দেহভাজন ছয় জঙ্গিসহ সাতজনের মৃত্যু হয়। আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয় আরও এক জঙ্গিকে।
পরে গত ২৫ জুন রাতে রাজধানীর কল্যাণপুরে অভিযান চালানোর সময় জঙ্গিদের সঙ্গে গোলাগুলি শুরু হলে পরদিন সকালে অভিযানে পুলিশের গুলিতে নয় জঙ্গি নিহত হয়। আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয় আরও একজনকে।
গুলশানের হামলায় জঙ্গিরা সেনা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কমান্ডো অভিযানের আগেই ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে, যাদের মধ্যে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী জাপানের সাত নাগরিক রয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ অবস্থানরত উন্নয়ন সহযোগী বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা জোরদারে পুলিশের প্রতি আহ্বান জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল বলেন, “জঙ্গিদের মোকাবেলায় বন্ধুপ্রতীম বিভিন্ন দেশ আমাদের পাশে রয়েছে।”
জঙ্গিরা প্রতিনিয়ত তাদের কৌশল পরিবর্তন করছে মন্তব্য করে তাদের মোকাবেলায় পুলিশের সক্ষমতার আরও বাড়ানোর ওপর জোর দেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, “তাদের (জঙ্গি) মোকাবিলা করার জন্য পুলিশের সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে। জনগণ আমাদের পাশে রয়েছে। জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা জঙ্গিবাদ রুখবো।
“বন্ধুপ্রতীম বিভিন্ন দেশ আমাদের পাশে রয়েছে। তারা পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতা করতে আগ্রহী।”
জঙ্গি দমনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ পুলিশকে আরও সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
কামাল আরও বলেন, “কমিউনিটি পুলিশিংকে কাজে লাগিয়ে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।”
অনুষ্ঠানে পুলিশ প্রধান এ কে এম শহিদুল হক বলেন, “গুলশান ও শোলাকিয়ায় পুলিশ নিজের জীবন বাজি রেখে জঙ্গি দমন করেছে। আমাদের মনোবল দৃঢ় রয়েছে। পুলিশ জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনসহ জননিরাপত্তা বিধানে বদ্ধ পরিকর।”
পুলিশের দেওয়া তথ্যে, গত তিন মাসে সারা দেশে ৪৬ হাজার ২৬৬টি মামলা রুজু হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় কম। গত বছর এই সময়ে মামলা রুজু হয়েছে ৪৭ হাজার ৭৩৬টি।
এই তিন মাসে মোটরকার, মাইক্রোবাস, জিপ, মোটর সাইকেল, বেবিট্যাক্সিসহ বিভিন্ন ধরনের ৬১৭টি গাড়ি চুরির মামলা হয়েছে এবং পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে ৩৯৬টি চুরি হওয়া গাড়ি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে।
সভায় ব্লগার হত্যা মামলার অগ্রগতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
সভায় জানানো হয়, ১২টি ব্লগার হত্যা মামলার মধ্যে একটি মামলার বিচার হয়েছে। তিনটি মামলা বিচারাধীন এবং আটটি মামলা বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে।
সভায় আগামী ১ অক্টোবর থেকে দেশের সকল থানায় মামলা তদন্তে ক্রাইম ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিডিএমএস) ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানানো হয়।
সভায় অন্যদের মধ্যে পুলিশ টেলিকম অ্যান্ড ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্টের অতিরিক্ত আইজিপি অমূল্য ভূষণ বড়ুয়া, এসবির অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, সিআইডির অতিরিক্ত আইজিপি শেখ হিমায়েত হোসেন, অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন ও অপারেশনস্) মো. মোখলেসুর রহমান, বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ মো. নজিবুর রহমান, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া, এপিবিএন’র অতিরিক্ত আইজিপি সিদ্দিকুর রহমান, অতিরিক্ত আইজিপি (ফিন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) ফাতেমা বেগম এবং পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।