ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),রাজধানী মিরপুর প্রতিনিধি,শুক্রবার ১৮ এপ্রিল ২০২৫ || বৈশাখ ৫ ১৪৩২ :
রাজধানী ঢাকার মিরপুরে গ্যারেজে ব্যবহৃত যন্ত্রের সাহায্যে পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে চার বছরের শিশুকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পল্লবী থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলায় অভিযুক্ত এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
Advertisement
জানা গেছে, বড় ভাইয়ের সঙ্গে গ্যারেজে গিয়েছিল শিশুটি। গ্যারেজের মালিক পাউরুটি–চা আনতে বললে শিশুটিকে রেখে বড় ভাই দোকানে যায়। ফিরে এসে দেখে শিশুটির পেট ফুলে আছে। সারা গায়ে বমি। পায়ুপথ দিয়ে রক্ত পড়ছে। হাসপাতালে নেওয়ার পথেই শিশুটির মৃত্যু হয়। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার মিরপুর ১১ নম্বরের বাউনিয়াবাদ এলাকার একটি মোটর গ্যারেজে।
নিহত শিশু আবু বক্কর সিদ্দিক স্থানীয় একটি এনজিও স্কুলে শিশু শ্রেণিতে পড়ত। বাবা বাসচালক ও মা পোশাক কারখানায় অপারেটর হিসেবে কাজ করেন। মনোমালিন্য থাকায় শিশুটির মা–বাবা আলাদা বসবাস করেন। শিশু দুটি মায়ের সঙ্গেই থাকত।
পায়ুপথে বাতাস প্রবেশ করানোর কারণে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন পল্লবী থানা পুলিশ। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামাসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন শিশুটির মা।
শিশুটির পরিবারের সদস্যরা সংবাদমাধ্যম প্রথম আলোকে জানান, বিকেল ৩টার দিকে সে আবু বক্করকে নিয়ে গ্যারেজে যায় তার বড় ভাই। গ্যারেজ মালিকদের একজন মো. সুজন খান তাকে পাউরুটি–চা এনে দিতে বললে সে ভাইকে রেখে দোকানে যায়। ফিরে এসে দেখে আবু বমি করছে, পেট ফুলে আছে। পাশে অভিযুক্ত কিশোর দাঁড়ানো। কী হয়েছে, জানতে চাইলে ওই কিশোর তাকে জানায়, মোটরসাইকেল পরিষ্কার করার পাম্প দিয়ে সে আবুর পায়ে বাতাস দিয়েছে। তাতে আবু বমি করছে। এ কথা শুনে বিশ্বাস না হওয়ায় জিহাদ আবুর প্যান্ট খুলে দেখে মলদ্বার দিয়ে রক্ত পড়ছে। রক্ত কেন পড়ছে, জানতে চাইলে ওই কিশোর তাকে বলে, পায়ে বাতাস দেওয়ায় আবুর পেট ফুলে গেছে, পরে সে মুখের ভেতর পাম্প করে বাতাস দিয়ে পেটের বাতাস বের করার চেষ্টা করেছে। একপর্যায়ে বমি করতে করতে আবু অচেতন হয়ে পড়লে সুজনসহ কয়েকজন আবুকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পরিবারের দাবি, অভিযুক্তরা শিশু আবুকে একা পেয়ে মজার ছলে হত্যা করেছে।
Advertisement
এর আগে ২০১৫ সালে খুলনায় রাকিব (১২) এবং ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জে ইয়ামিন (১৩) নামের দুই কিশোরের পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে হত্যার ঘটনা দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।
শিশুটির বাবা প্রথম আলোকে বলেন, “দুপুর ৩টার দিকে ঘটনাটি ঘটে। তিনি তখন বাসায় ছিলেন। গ্যারেজের দুই মালিকের একজন সুজনসহ কয়েকজন তার ছেলেকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে গেছে শুনে সেখানে ছুটে যান। সেখানে গিয়ে শোনেন তার ছেলেকে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়েছে। শিশু হাসপাতাল থেকে বলা হয়, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ওই হাসপাতালে পৌঁছে তিনি দেখেন, বড় ছেলে জিহাদের কোলে আবু নিথর পড়ে রয়েছে। চিকিৎসক তার ছেলেকে মৃত ঘোষণা করেছেন।” বড় ছেলে জিহাদ পড়াশোনায় ভালো নয় বলে কাজ শেখার জন্য গ্যারেজে দিয়েছিলেন বলে দাবি করেন শিশুটির বাবা।
পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে পায়ুপথে বাতাস ঢোকানোর কারণে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। একজন কিশোরকে আটক করা হয়েছে। কিশোর হওয়ায় তাকে সমাজসেবা কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। পুলিশ তদন্ত করে বোঝার চেষ্টা করছে, কে কী উদ্দেশ্যে শিশুটির পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়েছিল। গ্যারেজে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। অন্য এক দোকানের সিসিটিভির ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে।”
Advertisement
পুলিশের সংগ্রহ করা ওই সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, একজনের কোলে অচেতন আবু। সঙ্গে কয়েকজন। আবুকে কোলে নিয়ে তারা রিকশায় ওঠছেন।
আবুর বায়ু পথে বাতাস দিয়ে হত্যা