কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা দিয়ে জামাইকে ছাড়িয়ে আনব: সন্ত্রাসী সাজ্জাদের স্ত্রী (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),চট্টগ্রাম প্রতিনিধি,শুক্রবার   ১১ এপ্রিল ২০২৫ ||  চৈত্র ২৮ ১৪৩১ :

পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ ওরফে বুড়ির নাতি সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্নার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে তিনি বলেন, কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করে জামাইকে জেল থেকে বের করে আনব।

গতকাল (১৫ মার্চ) রাত ১০টার দিকে ঢাকার একটি শপিং সেন্টার থেকে ছোট সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপরই তামান্নার ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

ভিডিওতে তামান্না বলেন, “আমার জামাই গতকাল রাতে গ্রেপ্তার হয়েছে, এটা নিয়ে এত হা-হুতাশ করার কিছু নেই। মামলা থাকলে গ্রেপ্তার হবেই। কিন্তু যারা ভাবছেন, সাজ্জাদ আর বের হতে পারবে না, তাদের জন্য এক বালতি সমবেদনা। আমরা কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করে জামাইকে বের করে আনব। সে বীরের বেশে ফিরে আসবে।”

তিনি আরও বলেন, “যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। এতদিন আমরা পলাতক ছিলাম, এখন পালানোর পালা তাদের। আমার জামাই আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে আমার কাছে আসবে, তখন খেলা শুরু হবে। খেলা মাত্র শুরু করেছো তোমরা, শেষ করব আমরা। সাজ্জাদের সমর্থকরা দোয়া করো, যেন ১০-১২ দিনের মধ্যেই জামিন করিয়ে ফেলতে পারি।”

এদিকে, শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। রোববার (১৬ মার্চ) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বক্কর সিদ্দিক তার রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রসিকিউশন) মো. মফিজ উদ্দিন। তিনি জানান, চান্দগাঁও থানার একটি হত্যা মামলায় পুলিশ সাজ্জাদের ১৪ দিনের রিমান্ড চায়, তবে আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

নগরীর চান্দগাঁও থানার অদূরপাড়ায় সংঘটিত তাহসিন হত্যা মামলার আসামি ছোট সাজ্জাদ। ২০২৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর বিকেলে প্রকাশ্যে গুলি করে তাহসিনকে হত্যা করা হয়। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সন্ত্রাসী সারোয়ার হোসেন ওরফে বাবলার সঙ্গে ছোট সাজ্জাদের দ্বন্দ্বের জেরেই তাহসিন খুন হন। তাহসিন ছিলেন বাবলার অনুসারী।

শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদকে ধরিয়ে দিতে পুলিশ পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। গত ২৮ জানুয়ারি সামাজিক মাধ্যমে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসিকে হত্যার হুমকি দেন সাজ্জাদ। এরপর ৩০ জানুয়ারি পুলিশ ঘোষণা দেয়, সাজ্জাদকে ধরতে তথ্য প্রদানকারীদের নগদ অর্থ পুরস্কার দেওয়া হবে।

Advertisement

ফেসবুক লাইভে সাজ্জাদ ওসিকে অক্সিজেন মোড়ে ধরে পেটানোর হুমকি দেন এবং বলেন, “তুকে ল্যাংটা করে পেটাবো।” তিনি পুলিশ কমিশনারের উদ্দেশে বলেন, “ওসি আরিফ চাঁদাবাজি ও আমার সন্তান হত্যার সঙ্গে জড়িত। তাকে বদলি করতে হবে।”

২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর নগরের অক্সিজেন মোড়ে পুলিশ সাজ্জাদকে ধরতে অভিযান চালালে সে গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যায়। ওই ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যসহ চারজন গুলিবিদ্ধ হন।

অপরাধ জগতে প্রবেশের পর দিন দিন বেপরোয়া হয়ে ওঠে সাজ্জাদ। গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগের এক তরুণ নেতার আশ্রয়ে চলে যায় সে। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, হত্যা ও অস্ত্র মামলাসহ অন্তত ১০টি মামলা রয়েছে। ২০২৩ সালের ১৭ জুলাই পুলিশ অস্ত্রসহ সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে, তবে পরের মাসেই জামিনে মুক্তি পায়।

সাজ্জাদের বাড়ি হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুরে। তার বাবার নাম মো. জামাল উদ্দিন। ২০২৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর নগরের চান্দগাঁও থানার অদূরপাড়া এলাকায় ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিন তাহসিনকে (২৭) গুলি করে হত্যা করে সাজ্জাদ বাহিনী। তারও আগে, ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে বায়েজিদ বোস্তামী থানার কালারপুল এলাকায় শটগান হাতে নিয়ে এক ভবনের মালিকের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে সাজ্জাদ।

Advertisement

২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করে মাসুদ কায়সার (৩২) ও মোহাম্মদ আনিস (৩৮) নামে দুজনকে হত্যা করা হয়। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ব্যবসা ও রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। চাঞ্চল্যকর এই ডাবল মার্ডার মামলায় সাজ্জাদ ও তার সহযোগীরা আসামি।

ছবিঃ সংগৃহীত