২ হাজার টাকায় সন্তান বিক্রি, রক্ত বেচে ফিরিয়ে আনেন মা (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি), গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি,বুধবার   ০৯ এপ্রিল ২০২৫ ||  চৈত্র ২৬ ১৪৩১ :

স্বামীর নির্যাতনে শারীরিক অসুস্থতা আর মেয়েকে হারিয়ে মানসিকভাবে কিছুটা ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছিলেন সাথী বেগম (২০)। এখন ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালে বিছানায়। হাসপাতালে থেকেও ভুলে যায়নি মমত্ববোধ। সুযোগ পেলেই মেয়েকে জড়িয়ে ধরে চুম এঁকে দিচ্ছে কপালে আর দুই গালে।

Advertisement

 

মানসিক ভারসাম্য কিছুটা হারালেও চোখের ভাষায় যেন বুঝিয়ে দিচ্ছেন কেমন ছিল পারিবারিক নির্যাতন। একমাত্র কন্যা সন্তানকে মাদকের টাকা যোগাতে স্বামী বিক্রি করে দিলেছিল মাত্র ২ হাজার টাকায়। বিষয়টি জানার পর সাথী বেগম নিজের রক্ত বিক্রি করে দুই হাজার টাকা ফেরত দিয়ে একমাত্র মেয়েকে ফিরিয়ে আনেন। মায়ের এই ভালবাসার একমাত্র মেয়ের বয়স এখন মাত্র ৮ মাস। পরম মমতায় মেয়েকে নিয়ে সাথী বেগমের দিন কাটছে এখন রাস্তায় রাস্তায়।

মেয়েকে সাথে নিয়ে0 খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ভিক্ষা করেন সাথী বেগম। বিষয়টি নজরে আসে ‘স্বপ্ন ফেরিওয়ালা’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের। মা ও মেয়ের চিকিৎসার্থে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়েছে সংগঠনটি।

সাথী বেগমের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের সাথী বেগমের মা দ্বিতীয় বিয়ে করলে তার বাবাও দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এরপরই সৎ মায়ের সংসারে নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হতে থাকেন তিনি। এক পর্যায়ে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বলাকইড় উত্তরপাড়া গ্রামের মুরাদ মোল্ল্যার সাথে বিয়ে দেওয়া হয় তাকে। কয়েক মাস সুখের সংসার হলেও এরপর সাথী বেগমের উপর নেমে আসে নির্যাতন। মুখ বুঝে নির্যাতন সহ্য করার বছর খানের পর তাদের সংসার আলোকিত করে আসে ফুটফুটে একটি কন্যা সন্তান।

Advertisement

ভাঙা পা নিয়ে হাসপাতারের বিছানায় শুয়ে সাথী বেগম বলেন, “যে স্বামী আমার সন্তানকে বিক্রি করে দিতে পারে তার সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। ভিক্ষা করেই যদি খেতে হয় তাহলে স্বামী দিয়ে কী হবে? মেয়েকে এভাবেই বাঁচাব। আমি এখন রাস্তার মানুষ।”

স্বামীর বিচার চান কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সাথী বেগম বলেন, “বিচার চেয়ে কী হবে? জানোয়ারকে শাস্তি দিয়ে কি মানুষ বানানো যায়? তাকে কোথায় খুঁজে পাবেন যে শাস্তি দিবেন? আমি বিচার চাই না, আমি নিরাপদ একটা আশ্রয় চাই। সেখানে মেয়েকে নিয়ে নিরাপদে থেকে কাজ করে মেয়েকে মানুষের মত মানুষ করতে পারব।”

সংগঠনের সভাপতি মিজানুর রহমান মানিক বলেন, “সাথী বেগম নিজেই একজন বাচ্চা। তার কোলে রয়েছে আরো একটি বাচ্চা। আমরা তার চিকিৎসা করাছি। তবে তার দাবী একটি নিরাপদ আশ্রয়ের। আমরা চেষ্টা করব তাকে একটি নিরাপদ আশ্রয় দিতে।”

 

মমতাময়ী এ মায়ের চিকিৎসার জন্য সমাজের বৃত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জীবিতেষ বিশ্বাস বলেন, “সাথী বেগম ও তার কন্যা সন্তানকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। তবে সাথী বেগমের পায়ের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া প্রয়োজন।”

হাসপাতালের বিছানায় সন্তান কোলে হাস্যোজ্জ্বল সাথী বেগম