এবারের কোরবানিতে দেশীয় গরুই যথেষ্ট

SHARE

ঢাকা: কোরবানির চাহিদা মেটাতে এবারের ঈদ-উল আযহায় দেশীয় গরুই যথেষ্ট বলে মনে করেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। গত কোরবানিতে শেষ সময়ে বাড়তি দামে গরু বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে মাংসের দাম বাড়তি হওয়ার কারণে অনেক চাষি ঝুঁকছেন গরু পালনে। ফলে এবার কোরবানির গরু দেশেই মজুদ রয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

গাবতলী স্থায়ী পশুর হাটে গেলে কুষ্টিয়ার ব্যবসায়ী মজনু মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘গত ‌কোরবানির ঈদে গরুর দাম ভালো হয়েছে। বর্তমানে হাট থেকেই ৪৫০ টাকা মাংসের দরে গরু বেচাকেনা চলছে। যে কারণে চাষিরা প্রচুর পরিমাণে গরু পালছে। অন্যবার যে একটা গরু পালছে, এবার সেই চাষি ৪ থেকে ৫টি গরু পালছে’।

ভারত থেকে যেন কোনো ধরনের গরু আমদানি না করা হয় সে দাবিও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। অনেকে বলছেন, ভারত থেকে গরু এলে চাষি ও ব্যবসায়ীদের লোকসান গুণতে হবে। কারণ, কোরবানিতে কিছু বাড়তি আয়ের আশায় প্রচুর বিনিয়োগে গরু পালন করেছেন তারা।

ঝিনাইদহের শৈলকুপার ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলী বাংলানিউজকে বলেন, ‘ভারতের গরু না এলে আমাদের দেশের জন্য ভালো। গৃহস্তদের বাড়িতে প্রচুর গরু আছে। দাম পাওয়ার আশায় সন্তানের মতো আদর করে গরু পালছে চাষিরা। সরকার হঠাৎ করে যদি বর্ডার খুলে দেয়, তবে চাষি ও ব্যাপারিদের মরে ভুত হওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। ভারতের গরু এলে বড় লোকেরা সস্তায় গরু কিনে কোরবানির হাট থেকে হাসতে হাসতে বাড়ি ফিরবে। কিন্তু ব্যাপারি ও চাষিরা ঈদ করতে পারবে না। কাদতে কাদতে চাষি ও ব্যাপারিদের বাড়ি যাওয়া লাগবে’।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এবং ব্যবসায়ীদের হিসাব মতে, দেশে বছরে ১ কোটি ৪০ লাখের মতো গরু ও মহিষ জবাই হয়। এর ৬০ শতাংশই হয় কোরবানির ঈদে। সে হিসেবে কোরবানির গরুর চাহিদা তৈরি হয় সর্বোচ্চ ৪০ লাখের মতো।

কোরবানির জন্য এবার ৩২ লাখ গরু এবং দুই লাখ মহিষ ও ৭৫ লাখ ছাগল-ভেড়া প্রস্তুত রয়েছে। সামনে এ সংখ্যা আরও বাড়বে।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পরিচালক (উৎপাদন) মো. মোক্তার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, সারাদেশে গরুর খামার রয়েছে প্রায় ৬০ হাজার। দেশের প্রতিটি উপজেলায় গড়ে ৬০-৭০টি ছোট খামারও গড়ে উঠেছে। এসব খামারের মালিকরা মূলত মৌসুমি ব্যবসায়ী। খামার ও চাষিদের গোয়ালে চলতি বছর মোট ৮০ লাখ গরুর বাচ্চা উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১০ লাখ রোগসহ নানা কারণে মারা গেছে। ৮ থেকে ১০ লাখ কসাইয়েরা জবাই করেছে। বাকিগুলোর মধ্যে ৩০ থেকে ৩২ লাখ গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘কোরবানিতে মোট ৪০ লাখ গরুর চাহিদা থাকে। আমাদের হাতে ৩২ লাখ গরু ছাড়াও ছাগল ও ভেড়া প্রস্তুত রয়েছে প্রায় ৭৫ লাখ। তবে কিছু চাষি আছেন, যারা বাড়ির গরু কোরবানি দেন- সেগুলো বাড়তি’। ‘কোরবানিতে কোনো ধরনের গরুর ঘাটতি হবে না, প্রচুর মজুদ রয়েছে। গত কোরবানির ঈদে গরুর দাম বাড়তি হওয়ার কারণে এবার চাষিদের গরু পালনে ঝোঁক বেশি লক্ষ্য করেছি। তবে ভারত থেকে গরু না এলে চাষিরা হাফ ছেড়ে  বাঁচবেন’।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যে দেখা গেছে, বাংলাদেশে ২৮ লাখ পরিবার সরাসরি গবাদি পশু পালনের সঙ্গে জড়িত। দেশে গরুর সংখ্যা ২ কোটি ৩৬ লাখ এবং মহিষের সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। এর মধ্যে গাভি ও বকনা বাছুর রয়েছে প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ। ছাগল ও ভেড়ার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২ কোটি ৫৫ লাখ। মোট গরুর ৬০ শতাংশই পালন করা হয় কুষ্টিয়া, যশোর, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা জেলায়।

ভারতসহ মায়ানমার, নেপাল, ভুটান ও পাকিস্তান থেকে কোরবানির আগে গরু আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়। এবার আমদানি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।