ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বিশেষ প্রতিনিধি,সোমবার ২৪ মার্চ ২০২৫ || চৈত্র ১১ ১৪৩১ :
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দুই নেতার ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে দলের অভ্যন্তরে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে এনসিপির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমের ভিন্নমুখী পোস্ট দলে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। নেতাদের কেউ কেউ একে ‘ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা অর্জনের রাজনীতি’ বলে অভিহিত করেছেন।
Advertisement
এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দেশের জনপ্রিয় জাতীয় দৈনিক। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,দলীয় ফোরামে আলোচনা ছাড়াই নেতাদের হুটহাট ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া নিয়ে এনসিপির ভেতরে চলছে নানা আলোচনা। নিজেদের মধ্যে আলোচনায় নেতাদের কেউ কেউ এমন প্রশ্নও তুলছেন যে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে এনসিপি হাস্যরসের বস্তু হয়ে উঠছে কি না।
গত ১১ মার্চ সেনানিবাসে হাসনাত আবদুল্লাহসহ দুজনের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে হাসনাত ফেসবুকে লেখেন, আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার এই পোস্টের পরপরই ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। পরে আজ রোববার সারজিস আলম এক ফেসবুক পোস্টে জানান, ‘যেভাবে এই কথাগুলো ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এসেছে, এই প্রক্রিয়াটি আমার সমীচীন মনে হয়নি।’
সারজিসের পোস্টের নিচে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ মন্তব্য করেন, ‘এসব কী ভাই! পাবলিকলিই বলছি, দুজনের একজন মিথ্যা বলছেন। এটা চলতে পারে না।’
এনসিপির নেতাদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, দলের মধ্যে আলোচনা না করে ফেসবুকে এমন পোস্ট দেওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এই ইস্যু নিয়ে উত্তপ্ত আলোচনা চলছে।
কেন্দ্রীয় নেতা খালিদ সাইফুল্লাহ লিখেছেন, ‘গুটিকয়েক ব্যক্তি ব্যক্তিগত চিন্তাপ্রসূত কথাবার্তা দলীয় সিদ্ধান্ত ছাড়াই বাইরে প্রকাশ করছেন। যদি সেলিব্রিটি ফেইস, কন্ট্রোভার্সি আর পপুলিজম দিয়েই রাজনীতি করতে চান, তাহলে আমাদের পার্টি থেকে বাদ দিয়ে টিকটকারদের এনে বসিয়ে দিন।’
Advertisement
আরেক নেতা লিখেছেন, ‘একটি দলের সদস্য হয়ে ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা অর্জনের রাজনীতি করবেন না। দলের কথাও ভাবতে হবে।’
দলের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা জানান, সেনাপ্রধানের সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি অনেকেই জানতেন না। ‘এ ধরনের অনানুষ্ঠানিক আলোচনা ফেসবুকে প্রকাশের ফলে ভবিষ্যতে কেউ এনসিপির সঙ্গে স্বস্তিতে আলোচনা করতে চাইবে না।’
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘ফেসবুককেন্দ্রিক অ্যাকটিভিজম থেকে বেরিয়ে এসে রাজনৈতিক পরিপক্বতা অর্জন করতে হবে।’ দলের পক্ষ থেকে দ্রুত এ বিষয়ে শৃঙ্খলা আনতে আলোচনা হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে গতকাল শনিবার সুইডেনভিত্তিক নেত্র নিউজের এক প্রতিবেদনে সেনাসদরকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, হাসনাত আবদুল্লাহর পোস্ট ‘সম্পূর্ণ রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি বৈ অন্য কিছু নয়’। এ ছাড়া ২৭ বছর বয়সী এই ছাত্রনেতার বক্তব্যকে “অত্যন্ত হাস্যকর ও অপরিপক্ব গল্পের সম্ভার” হিসেবেও আখ্যা দিয়েছে সেনাবাহিনী।
গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জানান, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই। এরপরই আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের চেষ্টা হচ্ছে বলে আলোচনা শুরু হয় এবং হাসনাতের পোস্ট আসে। তার পোস্টের পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ও বিভিন্ন সংগঠন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে কর্মসূচি পালন করে।
এনসিপির পক্ষ থেকে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে দলটির অবস্থান জানানো হয়। তবে সেনাপ্রধানের বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট মন্তব্য করা হয়নি।
Advertisement
এই বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে এনসিপির শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য শিগগিরই দলীয় ফোরামে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম ও আবদুল হান্নান মাসুদ