চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর ছাত্রশিবিরের বিজ্ঞপ্তি সেই সাজ্জাদ-সারোয়ার শিবিরের কেউ নন! (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),চট্টগ্রাম প্রতিনিধি,মঙ্গলবার   ১৮ মার্চ ২০২৫ ||  চৈত্র ৫ ১৪৩১ :

চট্টগ্রামের আলোচিত এইট মার্ডার মামলার মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি সাজ্জাদ আলী খান এবং তার একসময়ের সহযোগী সারোয়ার হাসানকে ‘শিবিরকর্মী’ নয় বলে দাবি করেছে চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর ছাত্রশিবির।

Advertisement

সোমবার (২১ অক্টোবর) গভীর রাতে সিভয়েস২৪’এ পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এমন দাবি করে সংগঠনটি।

বিজ্ঞপ্তিতে সিভয়েস২৪’সহ জাতীয় ও স্থানীয় একাধিক গণমাধ্যমে সোমবার নগরের চান্দগাঁওয়ে সাজ্জাদ ও সারোয়ার গ্রুপের গোলাগুলিতে এক যুবক নিহতের ঘটনায় প্রকাশিত সংবাদে তাদের ‘শিবিরকর্মী’ বলে পরিচয় দেওয়ার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর ছাত্রশিবিরের প্রচার সম্পাদক সালাউদ্দিন আকাশের পাঠানো ওই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সিভয়েস২৪, বাংলা ট্রিবিউন, ডেইলি স্টার, প্রথম আলো, আজকের পত্রিকাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাজ্জাদ ও সারোয়ারকে শিবিরকর্মী আখ্যা দিয়ে প্রকাশিত সংবাদ ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ বলে দাবি করা হয়।

নগর ছাত্রশিবির উত্তর সভাপতি ফখরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি তানজীর হোসাইন জুয়েলের বরাতে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘হত্যাকাণ্ডে জড়িত সারোয়ার ও সাজ্জাদ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাথে কোনোকালেই সম্পৃক্ত ছিলেন না। ছাত্রশিবিরের মতো একটি সুশৃঙ্খল সংগঠনকে বিতর্কিত করতে এই সর্বৈব মিথ্যা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে বলে মনে করছি। আর সংবাদে অভিযুক্ত সারোয়ার ও সাজ্জাদকে ঢালাওভাবে শিবিরের কর্মী দাবি করা হলেও সংবাদপত্রের নীতি অনুযায়ী নেতৃবৃন্দের বক্তব্য নেওয়ারও প্রয়োজনবোধ করেননি সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক।’

‘এমন বিতর্কিত সংবাদ প্রকাশ ছাত্রশিবিরের মতো ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপপ্রয়াস’ উল্লেখ করে ভবিষ্যতে ইসলামী ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে এই ধরনের ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ তথ্য প্রচার করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

সিভয়েস২৪’র বক্তব্য

ডাবল মার্ডারের আসামি সাজ্জাদ এবং মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত সাজ্জাদ আলী খানের একসময়ের সহযোগী সারোয়ার হাসান ওরফে বাবলা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয়দের কাছে যুগ যুগ ধরে ‘শিবিরকর্মী’ হিসেবেই পরিচিত। স্থানীয়রাও তাদের শিবির ক্যাডার বলেই ডাকেন।

এক বছর দুবছর নয়, সুদীর্ঘ বছর ধরে তাদের শিবিরকর্মী হিসেবেই আখ্যায়িত করে আসছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও। শুধু সিভয়েস২৪ নয়, কোনো গণমাধ্যম কাউকে বিশেষ পরিচিতিতে বিশেষায়িত করে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং স্থানীয়রা তাদের যেভাবে চিনেন, জানেন এবং বলেন; ঠিক সেভাবেই তাদের পরিচিতি তুলে ধরা হয়েছে।

এছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে একাধিকবার চেষ্টা করেও শিবিরের দায়িত্বশীল কারো সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে শিবিরের একটি সূত্র সিভয়েস২৪’কে বলেছিল, ‘সারোয়ার কখনো শিবির করেননি।’ আমরা প্রকাশিত সংবাদে সেই তথ্যটিও সংযুক্ত করেছিলাম।

আর হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত ছোট সাজ্জাদ ওরফে বুড়ির নাতিকে সংবাদের কোনো অংশেই শিবিরকর্মী হিসেবে সম্বোধন করা হয়নি।

সংবাদে আলোচিত এইট মার্ডারে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত সাজ্জাদ আলী খান ‘শিবির ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিত বলে তুলে ধরা হয়েছে।

কে এই সাজ্জাদ আর সারোয়ার

আলোচিত এইট মার্ডার মামলার মৃত্যুণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি সাজ্জাদ আলী খান। বর্তমানে বিদেশে পলাতক। বিদেশে বসেই নির্মাণাধীন ভবন, বাসাবাড়ি এমনকি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজির অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চট্টগ্রামের চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছিলেন এই সাজ্জাদ। চাঁদা না দিলে প্রাণে মারার হুমকি নয়তো হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন সময়ে ভুক্তভোগী ও পুলিশের বরাতে এমন অহরহ অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এই সাজ্জাদের সহযোগী হিসেবে অপরাধজগতে পদার্পণ করেন ছোট সাজ্জাদ ওরফে বুড়ির নাতি। ছোট সাজ্জাদ বায়েজিদ বোস্তামী থানা-সংলগ্ন হাটহাজারীর শিকারপুরের মো. জামালের ছেলে। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজির ১০টি মামলা রয়েছে। সবশেষ ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা-পুলিশ অস্ত্রসহ সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে। অবশ্য পরের মাসে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন।

Advertisement

অন্যদিকে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করা এই সাজ্জাদ আলী খানের একসময়ের ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ সারোয়ার হোসেন বাবলা। চার বছর জেল খেটে পালিয়ে যান ভারতে। সেখানে পালিয়ে থাকা ‘বড়ভাই’ সাজ্জাদের দেখভালে ছিলেন দুবছর। ২০২০ এ দেশে ফিরেই গ্রেপ্তার হন ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। পরে বের হয়ে চার বছর পালিয়ে ফের গ্রেপ্তার হন ২০২৪ সালের জুলাইয়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যমতে, নগরের ডবলমুরিং, পাঁচলাইশ ও বায়েজিদ বোস্তামি থানায় হত্যা, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধে মোট ১৮টি মামলা রয়েছে। সবগুলোতে জামিনে রয়েছেন তিনি।

চান্দগাঁওয়ে গোলাগুলিতে যুবক খুনে যেভাবে এলো সাজ্জাদ-সারোয়ারের নাম

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, চান্দগাঁওয়ে ইট বালুর ব্যবসা করেন নিহত যুবক আফতাব উদ্দীন তাহসীন। সোমবার বিকেলে শমসেরপাড়ার উদুপাড়া এলাকায় আফতাবের ব্যবসার জন্য আনা বালু ও ইট রাখেন। এ কারণে আফতাব সেখানে আসেন। কিছুক্ষণ পর সেখানে একটি নোহা মাইক্রোবাস আসে। প্রথমে গাড়ির ভেতর থেকে আফতাবকে লক্ষ্য করে একটি গুলি ছোড়া হয়। এরপর সন্ত্রাসী সাজ্জাদ ও তাঁর সহযোগীরা মাইক্রোবাস থেকে নেমে আফতাবের ঊরু ও পায়ে পরপর চারটি গুলি করে চলে যান। আশপাশে লোকজন থাকলেও তাঁদের হাতে অস্ত্র থাকায় কেউ এগিয়ে আসেননি।

নিহত তাহসীন নগরের ওমরগণি এমইএস কলেজের ছাত্র ছিলেন। ওই কলেজের রাজনীতিতে তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপকমিটির সদস্য আরশাদুল আলম বাচ্চুর অনুসারী হিসেবে সক্রিয় ছিলেন। আর পলাতক মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত সাজ্জাদ আলী খানের সেকেন্ড ইন কমান্ড সারোয়ার স্থানীয় প্রভাব বজায় রাখতে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ছাত্রলীগকর্মীদের সাথেও সখ্যতা গড়ে তোলেন। সেই সুবাদে তাহসীন সারোয়ারের সাথেই চলাফেরা করতেন।

পুলিশ বলছে, তাহসীন ওই এলাকায় ইট, বালু ও সিমেন্টের ব্যবসা করতেন। তার এই ব্যবসায় সহযোগী ছিলেন সারোয়ার।

তাহসীনের ভাই তানভীর বলছেন, ‘সন্ত্রাসী সাজ্জাদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে লেখালেখি করতেন তাহসীন। ইট ও বালুর ব্যবসা থেকে তাহসীনের কাছেও চাঁদাও চান সাজ্জাদ। এ কারণে তাহসীন আদালতে জিডিও করেন দুই মাস আগে।’

ছোট সাজ্জাদের সাম্প্রতিক অপকর্ম

সোমবারের ঘটনার আগে ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেল চারটার দিকে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার কালারপুল এলাকায় শটগান হাতে সাজ্জাদ হোসেনসহ আরও দুজন গুলি করতে করতে একটি নির্মাণাধীন ভবনে প্রবেশ করেন। এরপর ওই ভবন মালিকের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।

২৯ আগস্ট নগরের বায়েজিদ বোস্তামি থানার অক্সিজেন–কুয়াইশ সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করে মাসুদ কায়সার (৩২) ও মোহাম্মদ আনিস (৩৮) নামে দুজনকে হত্যা করা হয়। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ব্যবসা ও রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে দুপক্ষের দ্বন্দ্বের জেরেই এ খুন হয়। এই চাঞ্চল্যকর ডাবল মার্ডারের ঘটনার দুই মামলায় সাজ্জাদ ও তার সহযোগীদের আসামি করা হয়।

এছাড়া ৫ জুলাই বায়েজিদ থানার বুলিয়াপাড়া এলাকায় একটি বাসায় গুলি করেন সাজ্জাদ তাঁর সহযোগীদের নিয়ে। আর গত বছরের ২৭ অক্টোবর চাঁদা না পেয়ে দলবল নিয়ে মো. হাছান নামের এক ঠিকাদারের চান্দগাঁও হাজীরপুল এলাকার বাসায় গিয়েও গুলি করে ওরা।

Advertisement

৫ আগস্ট সরকার পতনের পর প্রকাশ্যে বারবার এমন অস্ত্রবাজির ঘটনা ঘটলেও পুলিশ যেন ‘ছুঁতে’ পারছে না সাজ্জাদ-সারোয়ারকে। আর এ নিয়ে আতঙ্কে আছেন বায়েজিদ-চান্দগাঁওয়ের স্থানীয়রা। এলাকায় সাজ্জাদের চাঁদা দাবির বিষয়টি অনেকটা প্রকাশ্যেই চলে। মূলত নির্মাণাধীন ভবন ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক চাঁদা নেয় এই সন্ত্রাসী।