ধর্ষণ মামলার পলাতক আসামি অফিস করছেন দুদকে! (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),দুদক প্রতিনিধি,মঙ্গলবার   ১৮ মার্চ ২০২৫ ||  চৈত্র ৫ ১৪৩১ :

প্রেমিকার সঙ্গে বসবাস। হঠাৎ আরেকজনকে বিয়ে। কিছুদিন পর বিষয়টি জানতে পারেন দুজনই। মামলা করেন তারা। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলেও নিয়মিত অফিস করছেন দুদকের সহকারী কমিশনার মামুনুর রশীদ। এ নিয়ে দুদকের কাছে অভিযোগ দিয়ে বিচার পাননি ভুক্তভোগীরা। বলছেন, উল্টো প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা ব্যবহার করে হেনস্তা করা হচ্ছে তাদের। যদিও সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই কর্মকর্তা।

Advertisement

দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ। প্রেমিকাকে নিয়ে বসবাস করছিলেন ঢাকার আশুলিয়ার ভাড়া বাসায়। হঠাৎ একদিন প্রশিক্ষণের কথা বলে চলে যান সিরাজগঞ্জে। পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন আরেক নারীকে। কিছুদিন পর প্রতারণা ধরে ফেলেন দুজনই।


সাবেক স্ত্রী জানান, বিয়ের পরদিনই জানতে পারেন তার বাসায় এক মেয়ে থাকে। তার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। এ মেয়ে ছাড়াও আরও অন্যান্য মেয়ের সঙ্গে তার অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। যখন তার সামনে প্রমাণ আনা হয় তখন এ ভুক্তভোগীকে হুমকি দেয়।


সাবেক প্রেমিকা জানান, ২০২৩ সালে তার সঙ্গে বিয়ের তারিখ ঠিক হয়। কিন্তু তারিখের দুদিন আগে তিনি অন্য মেয়েকে বিয়ে করেন। যখন বিষয়টা তিনি জানলেন তখন অভিযুক্ত তাকে বোঝান, এটা হুট করে হয়ে গেছে এবং এক পর্যায়ে ওই ভুক্তভোগীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।

২০২৩ সালে মামুনুরের বিরুদ্ধে ঢাকায় ধর্ষণের মামলা করেন প্রেমিকা। পরে বিয়ের আশ্বাস দিলে ধর্ষণের মামলা তুলে নেন প্রেমিকা। এরপর তার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেন দুদক কর্মকর্তা। ২০২৪ সালে নতুন করে ধর্ষণ মামলা করেন প্রেমিকা। এদিকে, সিরাজগঞ্জে লাম্পট্য, প্রতারণা ও যৌতুকের মামলা করার পর ডিভোর্স দেন স্ত্রীকে। জারি হয় গ্রেফতারি পরোয়ানা। আইনের ভাষায় পলাতক হলেও নিয়মিত অফিস করছেন মামুনুর।

সাবেক প্রেমিকা জানান, মামলা হয়েছে কিন্তু পুলিশকে ভয় দেখিয়ে মামলা চাপা দেয়ার চেষ্টা করছে।

সাবেক স্ত্রীর অভিযোগ, বিয়ের পরদিন থেকে তাকে মারধর করতেন। মামলা হওয়ার পর এটা আদালতে প্রমাণিত হয় এবং ওয়ারেন্ট হয়। তিনি পলাতক আসামি।

এ নিয়ে দুদকে অভিযোগ দিয়েও বিচার পাননি ভুক্তভোগী দুই নারী। বলছেন, উল্টো প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা ব্যবহার করে তাদের হেনস্তা করছেন মামুনুর।

Advertisement


সাবেক প্রেমিকার অভিযোগ, দুদকে তিনি বেশ কয়েকবার অভিযোগ পাঠিয়েছেন, কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি কোনো উত্তর জানায়নি। বরং মামুনুর দুদকের ক্ষমতা দেখায়।

গত এক বছর ধরে ঘুরেও কোনো সুষ্ঠু বিচার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন তিনি। তিনি ধর্ষণ করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু তার বিরুদ্ধে আইন কিছু করছে না। বরং নানান হুমকি-ধামকি দিয়ে যাচ্ছে।

সাবেক স্ত্রী জানান, একটা মানুষের বিরুদ্ধে একাধিক মানুষের অভিযোগ আছে। হত্যা চেষ্টা, ধর্ষণ ও প্রতারণাসহ একাধিক মামলার আসামি হওয়ার পরেও দুদকের এমন একটা পোস্টে আছে। এবং প্রতিষ্ঠানটি উল্টো ভুক্তভোগী নারীর পরিবারকে হেনস্তা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগ অস্বীকার করে মামুনুর বলছেন, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে জড়িত ওই দুই নারী।

মামুনুর বলেন, ‘ঘটনাগুলো তো রিসেন্ট না, দুই বছর আগের ঘটনা।’

দুই বছর আগের ঘটনা হলে তো ঘটনা মিথ্যা হয়ে যাচ্ছে না, প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের উত্তরে মামুনুর বলেন, ‘না সেটা মিথ্যা হয়ে যাচ্ছে না।’

মামুনুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার তদন্ত করছে ঢাকার দারুস সালাম থানা। 
 
দারুস সালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিব উল হাসান জানান, তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। আর সিরাজগঞ্জ থানা পুলিশ বলছে, পলাতক মামুনুরকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

তিনি বলেন, ‘মামলার বেশ কিছু রিপোর্ট আমরা পেয়েছি। তদন্ত শেষ করে যত দ্রুত সম্ভব আমরা আদালতে প্রতিবেদন দিয়ে দিব।’

সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমরা এ আসামিকে গ্রেফতার করার চেষ্টা করছি। গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে। পলাতক থাকায় গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে না।’

Advertisement


ভুক্তভোগী দুই নারী বলছেন, তাদেরকে প্রায়ই হুমকি দিচ্ছেন মামুনুর। বিচার না পেয়ে উল্টা জীবননাশের শঙ্কায় দিন কাটছে তাদের।

অভিযুক্ত দুদকের সহকারী কমিশনার মামুনুর রশীদ। ছবি: সংগৃহীত