ঝিনাইদহে ত্রিপল মার্ডার: ২ দিনেও মামলা হয়নি, জনমনে আতঙ্ক (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঝিনাইদহ প্রতিনিধি,রোববার   ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ||  ফাল্গুন ১০ ১৪৩১ :

ঝিনাইদহে ত্রিপল মার্ডারের ঘটনায় জনমনে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাতে নিহতদের পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এ ঘটনার দুদিন পার হলেও মামলা হয়নি; এখনো গ্রেফতার হয়নি কেউ।

Advertisement

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকেও উল্লেখযোগ্য কোনো অভিযানের খবরও পাওয়া যায়নি। তবে হত্যাকাণ্ডের ক্লু উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কাজ করে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) শৈলকুপা থানায় পৃথক তিনটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দক্ষিণ-পশ্চিমের এক সময়ের রক্তাক্ত জনপদ খ্যাত ঝিনাইদহে আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে চরমপন্থী দলগুলো। একসময় জাসদ গণবাহিনী, বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি, পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি ও সর্বহারা পার্টির মত নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থীদলের আধিপত্য ছিলো তুঙ্গে।

দীর্ঘদিন ধরেই এসব চরমপন্থী দলগুলোর আধিপত্য দেখা যায়নি। হঠাৎ করেই এক চরমপন্থী নেতাসহ তিনজনকে হত্যার পর আরেক চরমপন্থী সংগঠন পরিচয়ে গণমাধ্যমে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো, তাদের উত্থানের বার্তা বলে মনে করছেন অনেকে।
বিগত দশকগুলোতে হত্যার আগে ও পরে এসব নিষিদ্ধ চরমপন্থী দলের পক্ষ থেকে দেয়া হতো চিরকুট বা মোবাইল কল। তেমনিই ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে গত ২১ ফেব্রুয়ারি শৈলকুপার রামচন্দ্রপুর গ্রামের শ্মশান ঘাট এলাকায়। গুলি করে হত্যা করা হয় পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক কমান্ডার হানিফ ও তার দুই সহযোগীকে।

Advertisement


হত্যার দায় স্বীকার করে আরেক চরমপন্থী সংগঠন জাসদ গণবাহিনী পরিচয়ে আগের মতো গণমাধ্যম কর্মীদের হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েছে। চরমপন্থীদের এই উত্থানে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্ক। তাহলে কী চরমপন্থীরা আবারো মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে এমন গুঞ্জন জেলাজুড়েই।

এ দিকে নিহত তিনজনের ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে পরিবারের কাছে মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয়। পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক কমান্ডার হানিফকে হরিণাকুণ্ডুর আহাদনগর গ্রামে নামাজে জানাজা শেষে রাত ১১টার দিকে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয় ও তার শ্যালক লিটনকে শ্রীরামপুর গ্রামে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়। এ ছাড়া রাইসুল ইসলামকে রাত ৯টার দিকে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পিয়ারপুর গ্রামে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়।

মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার ঝিনাইদহ জেলা সভাপতি আমিনুর রহমান টুকু জানান, ৯০ দশকের দিকে ঝিনাইদহ জেলায় নিষিদ্ধ চরমপন্থী দলগুলোর ব্যাপক দৌরাত্ম্য ছিল। প্রতিদিনই খুনের খবর শুনে মানুষের ঘুম ভাঙতো। মাথা কেটে পরিবারের লোকজনের সামনেই ফুটবলের মতো খেলতো এসব সন্ত্রাসীরা। পুলিশও তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। মানবাধিকার লঙ্ঘন চরম পর্যায়ের পৌঁছে যায়।

তিনি আরও জানান, এসব ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য এ অঞ্চলে পুলিশ ক্যাম্প বৃদ্ধি করা হয়। প্রশাসনের তৎপরতায় এক পর্যায়ে চরমপন্থী দল নির্মূল হয়ে যায়। দীর্ঘদিন চরমপন্থী দলের কোনো তৎপরতা ছিল না। হঠাৎ শৈলকুপায় তিন খুনের মধ্যদিয়ে তাদের উপস্থিতি জানান দিলো।

আমিনুর রহমান টুকু জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চরমপন্থী তৎপরতা খুবই দুঃখজনক। চরমপন্থী দমনে তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুম জানান, নিহতদের পরিবারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। দাফন-কাফনের জন্য তারা শনিবার মামলা করতে কেউ আসেননি। রোববার তিন পক্ষই থানায় আসছে; মামলা প্রক্রিয়াধীন। এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।

ঝিনাইদহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া জানান, থ্রি মার্ডারের পর থেকে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ব্যাপক তৎপর রয়েছে। পুলিশের কাছে নানান ধরণের তথ্য আসছে। সেগুলো চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে। জাসদ গণবাহিনী নামে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে এ হত্যাকাণ্ডকে ভিন্ন দিকে নেয়ার অপচেষ্টা কিনা সেটাও দেখা  হচ্ছে।

Advertisement


এ ছাড়া হরিণাকুণ্ডুর কায়েতপাড়া বাওড় নিয়ে বিবাদমান দুই চরমপন্থীদলের মধ্যে এই খুনাখুনি কিনা তাও দেখা হচ্ছে। দ্রুত এই ত্রিপল মার্ডারের ক্লু উদ্ধার করতে আমরা সক্ষম হবো। অপরাধীরা পার পাবে না।
ঝিনাইদহে মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নেয়া হয়েছে। ফাইল ছবি