চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে মুহূর্তের মধ্যেই কীভাবে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়?

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি), চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি,শুক্রবার   ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ ||  মাঘ ১০ ১৪৩১ :

সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বেড়া দেয়াকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে দুই দেশের হাজার হাজার মানুষ মুখোমুখি অবস্থান নেয়।

Advertisement

২০২৫ সালের শুরু থেকেই সীমান্তের বিভিন্ন জায়গায় বিএসএফ’র কাঁটাতারের বেড়া দেয়াকে কেন্দ্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি ভারত বাংলাদেশের রাজনীতিতেও ইস্যু হচ্ছে।

সীমান্তে উত্তেজনা দেখা দেয় গত ১৮ জানুয়ারি। বিএসএফ’র বেড়া দেয়াকে কেন্দ্র করে ওইদিন মুহূর্তেই কয়েক হাজার মানুষ সীমান্তে জড়ো হয়েছিল। বিজিবি জানিয়েছে বাংলাদেশ অংশে ১০-১৫ হাজার মানুষ সীমান্তে সেদিন উপস্থিত হয়।

স্থানীয়রা জানায়, সেখানে সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায় বিএসএফ। দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর তৎপরতায় শেষ পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ছাড়াই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-মালদহ সীমান্তে দুই দেশের জনগণের মধ্যে এরকম অবস্থান ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা আগে কখনোই ঘটেনি।

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী গ্রামবাসীরা বলছেন, প্রয়োজন হলে আবার তারা সীমান্তে যাবেন এবং লড়তে প্রস্তুত আছেন। ঘটনার পর দুই দেশের সীমান্তে সাধারণ মানুষের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে কঠোর হয়েছে সীমান্তরক্ষায় নিয়োজিত বিজিবি এবং বিএসএফ। দুই সীমান্তে নজরদারি এবং টহল বেড়েছে।

গত এক সপ্তাহে দফায় দফায় গ্রামের সাধারণ মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে বাংলাদেশের বর্ডার গার্ড। দুদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর উচ্চ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে পতাকা বৈঠকও হয়েছে।

সীমান্তে এত মানুষ কীভাবে জড়ো হলো?

বাংলাদেশিরা অভিযোগ করেন, তাদের দিকে তীর ও পাথর নিক্ষেপ করা হয়। পাথরের আঘাতে কয়েকজন আহত হয়েছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কিরনগঞ্জ সীমান্তের কাছে ঘটনা শুরু হলেও চৌকা সীমান্তের কাছে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষের উপস্থিতি ছিল।

স্থানীয় জনগণের পাশাপাশি দূর দূরান্ত থেকে সাধারণ মানুষ ভিড় করেছিলেন সীমান্তের শূন্য রেখার কাছে। সীমান্তবর্তী কালীগঞ্জ গ্রামের কৃষক, সাধারণ মানুষ এবং বেশ কয়েকজন গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বতস্ফূর্তভাবে সাধারণ মানুষ অংশ নেয়। সেই সঙ্গে আশপাশের গ্রাম, উপজেলা এমনকি জেলা শহর থেকেও মানুষ হাজির হয়। ছিল উৎসুক জনতাও।

এত মানুষের উপস্থিতির পেছনে সীমান্তে শূন্য রেখার কাছে বিএসএফ’র বেড়া দেয়ার তৎপরতা নিয়ে ক্ষোভ একটা কারণ বলে জানান মুজিবর নামে একজন গ্রামবাসী। একই কথা জানান কালীগঞ্জের তরুণ কৃষক জিয়াউল হক।

তিনি বলেন, ‘গত ১৫ বছর থাইকাই ধরেন যে আমাদের কৃষকদেরকে মারে, সীমান্তে যাইতে দেয় না। তারপরে গুলিও করে। ওরা (বিএসএফ) গত ১৫ বছর ধরেই জ্বালায়।’

Advertisement

দলমত নির্বিশেষে মানুষ জড়ো হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন স্থানীয় গ্রামবাসী মো. আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, ‘অনেক জায়গার লোক এখানে আসছে। সব মানুষ আসছে (এটা শুনে) যে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে তারা ক্ষতিসাধন চালাইছে, তো বাংলাদেশের মানুষ আমরা তো আমাদের ক্ষতি হইতে দেব না। এটাতো আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছি। আমি বুড়া মানুষ নিজেই গেছি।’

পঞ্চাশোর্ষ মকবুল হোসেন নামে একজন গ্রামবাসী বলেন, মসজিদের মাইকিং শুনে তিনি সীমান্তে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে উপস্থিত হন। মহল্লায় প্রত্যেক মসজিদে মসজিদে মাইকিং হয়েছে যে ভারতের বিএসএফ এসে গাছ কাটছে, বরই গাছ, ফসল কাটছে, অমুক কাটছে। তখন দৌঁড়ায় গেছি।

এছাড়া সামাজিক মাধ্যমে লাইভ সম্পচার, এমনকি মোবাইলে কল করেও মানুষকে ডাকা হয়েছিল বলে তারা জানান।

তবে এ বিষয়ে পাল্টা অভিযোগ রয়েছে ভারতীয় গ্রামবাসীর। সীমান্তে নিরাপত্তাহীনতা ও সীমান্ত বেড়া দেয়ার মতো কারণ রয়েছে বলে জানান গ্রামবাসীরা।

ভারতের সুখদেবপুর গ্রামের বাসীন্দা বাবলু মণ্ডল বলেন, তারকাটার বেড়ার পরে ভারতের ১২শ বিঘা জমি রয়েছে। সেখানে চাষাবাদ করতে নানা সমস্যার শিকার হন তারা। গম কেটে নিয়ে যায়। শুধু গম না। আম যখন ফলে, পুরা আম নিয়ে চলে যায়। তারকাঁটার ওপারে আমরা দেখতে দেখতে ওরা কেটে নিয়ে চলে যায়।

মালদহ জেলার সুখদেবপুর গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য বিনয় মণ্ডল বলেন, ‘আমরা সবসময় আতঙ্কিত। আমরা চাইছি যে তাড়াতাড়ি তারের বেড়াটা হোক। না হলে আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই। আমাদের সবসময় রাত জেগে পাহারা দিতে হয় যে কখন বাংলাদেশ থেকে এসে আমাদের সবকিছু লুটপাট করে নিয়ে যায়। গরু-মহিষ চোরাচালানের কারবার হয়।’

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে এরকম জনবিক্ষোভের নজির খুব একটা নেই। দুই দেশের নাগরিকদের সীমান্তে জড়ো হওয়ার বিষয়টি চিন্তার বিষয় বলে মনে করেন সাবেক কূটনীতিক এম হুমায়ুন কবির।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সীমান্তে দুই দেশের মানুষ যখন মুখোমুখী দাঁড়ায় তখন যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। কারণ একটা মানুষ মারা গেলে এটা একটা বিরাট রকমের দুই দিকে উত্তেজনা বাড়াবে। আর যেহেতু দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীও সেখানে আছে, তারাও কিন্তু এতে সম্পৃক্ত হয়ে যাওয়ার একটা আশঙ্কা এখানে থাকে।’

এছাড়া সাবেক এই কূটনীতিক মনে করেন, ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগের পতনের পর বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা নতুন ধরনের সচেতনতা তৈরি হয়েছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

Advertisement