খালেদা জিয়াকে নিয়ে ঢাকা ছাড়ল এয়ার অ্যাম্বুলেন্স (ভিডিও)

SHARE

য়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),রাজনীতি প্রতিনিধি,বুধবার   ০৮ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২৪ ১৪৩১ :

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিয়ে ঢাকা ছেড়েছে ‘বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স’; যেটি কাতারের দোহায় বিরতির পর স্থানীয় সময় সকালে লন্ডনে পৌঁছানোর সূচি রয়েছে।

Advertisement

সাত বছর পর হিথ্রো বিমানবন্দরে মা-ছেলের দেখা হওয়ার কথা; বুধবার সকালে সেখানে তারেক রহমান মাকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত থাকবেন বলে বিএনপির তরফে বলা হয়েছে।

সব জল্পনার অবসান শেষে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টায় শাহজালাল বিমানবন্দরের ভিআইপি টারমাক থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনকে বহনকারী উড়োজাহাজটি রানওয়ের দিকে এগোতে থাকে; এর কয়েক মিনিটের মধ্যে উড়াল দেয় সেটি।

খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আলহামদুলিল্লাহ, ম্যাডামকে নিয়ে বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স যাত্রা শুরু করেছে। আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে ম্যাডামের জন্য দোয়া চাই।”

এর আগে রাত পৌনে ১১টার দিকে ৮ নম্বর গেইট দিয়ে শাহজালাল বিমানবন্দরে প্রবেশ করে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর। কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে তিনি ১১টা ১০ মিনিটে কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ওঠেন।

বিমানবন্দরে আসার পথে সড়কজুড়ে নেতাকর্মীদের বিদায়ী শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। গুলশানের বাসা ফিরোজা থেকে তার গাড়িবহর বিমানবন্দরের দিকে যত এগিয়েছে নেতাকর্মীদের ঢল ততই বেড়েছে।

দলের আহ্বান এড়িয়ে নেত্রীকে বিদায় জানাতে তারা একযোগে নেমে আসেন সড়কে, এতে বাড়তে থাকে যানজট। ফলে তার গাড়ি চলতে থাকে ধীর গতিতে। গুলশান থেকে বিমানবন্দরের পথটুকু যেতে সময় লাগে দেড় ঘণ্টার মত। এতে রাত ১০টা এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ছেড়ে যাওয়ার সূচি পিছিয়ে যায়।

বাসা থেকে বের হওয়ার আগে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার ও তার স্ত্রী কানিজ ফাতিমা, প্রয়াত ভাই সাঈদ ইস্কান্দারের সহধর্মিনী নাসরিন ইস্কান্দারসহ আত্বীয় স্বজনরা বিদায় জানান।

পরে রাত ৮টা ১৬ মিনিটে খালেদা জিয়ার গাড়ি বহর বাসা থেকে রওনা হওয়ার পর গুলশান অ্যাভিনিউ, গুলশান-২, বনানী কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ, কাকলী দিয়ে বিমানবন্দর সড়কে উঠতেই পেরিয়ে যায় এক ঘণ্টার মত। তাদের মুহুর্মুহু স্লোগানের মধ্যে এগিয়ে যায় খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়িবহর। বাকি পথ যেতে লাগে আধা ঘণ্টার মত।

বিএনপি চেয়ারপারসন বিমানবন্দরের কাছাকাছি পৌঁছানোর পর হাজারো নেতাকর্মীর একটি মিছিল তার গাড়ির পেছন-পেছন স্লোগান দিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে।

রাত পৌনে ১১টার দিকে তার গাড়ি বহর বিমাবন্দরের ৮ নম্বর গেইট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে।

পরে বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির পাঠানো বিশেষ উড়োজাহাজে করে তিনি লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার জেনে রাজকীয় বহরের এ বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়েছিলেন কাতারের আমির, যা সোমবার রাত সাড়ে ৭টায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়।

দলের চেয়ারপারসনকে বিদায় জানাতে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ছিলেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়ি ৮ নং গেট দিয়ে সরাসরি ভিআইপি টারমার্কে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের সামনে পৌঁছে।

সেখানে মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা অ্যাম্বুলেন্সের সামনে দাঁড়িয়ে দলীয় প্রধানকে বিদায় জানান।

‘বুধবার লন্ডন পৌঁছাবে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি’

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক জাহিদ হোসেন বলেন, ‘‘ঢাকা থেকে প্রথমে দোহায় যাবে অ্যাম্বুলেন্সটি। সেখানে যাত্রাবিরতি শেষে লন্ডনের হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।”

হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনকে সরাসরি অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে লন্ডন ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, “এ ক্লিনিকেই ম্যাডামকে ভর্তি করা হবে। হিথ্রো বিমানবন্দরে হাসপাতালের চিকিৎসকরাও উপস্থিত থাকবেন তাকে রিসিভ করতে।”

প্রাথমিক পরিকল্পনায় তার লন্ডন হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা বলা হলেও এখন যুক্তরাজ্যের হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়াই চূড়ান্ত হয়েছে।

যুক্তরাজ্যে গিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ভর্তি হবেন ‘লন্ডন ক্লিনিকে’, যেখানে ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি ধনাঢ্য ব্যক্তিরা চিকিৎসা নিতে যান।

Advertisement

‘বিমানবন্দরে থাকবেন তারেক রহমান’

জাহিদ বলেন, ‘‘সাত বছর পর মাকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে মূল টার্মিনালে তারেক রহমান সাহেব, তার সহধর্মিনী জোবাইদা রহমান, তার মেয়ে জাইমা রহমান, লন্ডন বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন থাকবেন। তারাই ম্যাডামকে বরণ করবেন।

‘‘হিথ্রোর আনুষ্ঠানিকতা শেষে ম্যাডাম লন্ডন ক্লিনিকের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন এরকম সিডিউল আামার কাছে আছে।”

সবশেষ সাড়ে সাত বছর আগে যুক্তরাজ্যেই চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া। সেবার চোখ ও পায়ের চিকিৎসা নিয়েছিলেন।

লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, আর্থ্রাইটিস, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ নানা জটিলতায় তিনি ভুগছেন।

সেই কারণে ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই বিএনপি চেয়ারপারসনের লন্ডনযাত্রার পর আর কোনো বিদেশ সফর হয়নি।

ওই সময় লন্ডন গেলে তিনি তারেক রহমানের বাসায় ছিলেন।

৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। ২০১৮ সালে একটি মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর তাঁর অসুস্থতা বাড়ে।

এমন পরিস্থিতিতে দল ও পরিবার এবং মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে তার বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। কিন্তু সরকার তাতে সাড়া দেয়নি। অসুস্থ নেত্রীর বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে রাজপথে টানা আন্দোলন করেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। তবুও সরকারের অনুমতি মেলেনি।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পাঁচ মাস বাদে সেই পথ সুগম হয়। চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার সব প্রস্তুতি শেষ হয়।

‘দেশবাসীর কাছে বার্তা’

খালেদা জিয়াকে বিদায় দেওয়ার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে সাংবাদিকদের বলেন, “ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতনে মিথ্যা মামলায় বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে ৬ বছর তাকে আটক করে রাখা হয়েছিল। এই আটক করে রাখার সময়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। যার ফলে তিনি অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।

”তারপরে আমরা বারবার ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারকে অনুরোধ করেছিলাম চিকিৎসার জন্য তাকে বাইরে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হোক। কিন্তু এই ফ্যাসিস্ট হাসিনা কোনো কথাতে কর্ণপাত করেননি।”

তিনি বলেন, ‘‘আল্লাহর অশেষ রহমতে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরে আজকে যখন দেশনেত্রী সমস্ত মিথ্যা মামলা থেকে মুক্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য তিনি লন্ডনে গেছেন এটার জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাচ্ছি।

‘‘আশা করছি, সুচিকিৎসা করে তিনি আবার দেশের মানুষের কাছে ফিরে আাসবেন। যাওয়ার সময়ে তিনি আবার বলেছেন, যে, আপনি গণমাধ্যমের মাধ্যমে দেশবাসীকে বলবেন যে, তারা আমার জন্য দোয়া করেন।

”দেশ যেন ভালো থাকে, গণতন্ত্রকে যেন প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে যেন আমরা সবাই মিলে এফোর্ড করি।”

সঙ্গে যাচ্ছেন কারা

লন্ডনের পথে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিশেষ উড়োজাহাজে তার পুত্রবধূ ছোট ছেলে আরফাত রহমানের স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান সিঁথি থাকবেন। সঙ্গে থাকবেন চারজন চিকিৎসক ও প্যারামেডিক্স।

বিএনপি চেয়ারপারসনের মেডিকেল বোর্ডের ছয়জন সদস্যও যাবেন তার সঙ্গে। তারা হলেন, মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক এফএম সিদ্দিক, অধ্যাপক নরুদ্দিন আহমেদ, ডা. জাফর ইকবাল, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন ও ডা. মোহাম্মদ আল মামুন।

এছাড়া চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এনামুল হক চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল ও খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তারসহ ব্যক্তিগত কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী।

চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এনামুল হক চৌধুরী বলেন, “বিমানটিতে সর্বাধুনিক চিকিৎসা সুবিধার যন্ত্রপাতি, মেসিনারি ও ল্যাবরেটরিও হয়েছে।”

 

Advertisement