ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি,রোববার ০৫ জানুয়ারি ২০২৫ || পৌষ ২১ ১৪৩১ :
ব্যবসায়ী কামেল আমিন তাবেথ ১৯৬২ সালে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে যান। পরবর্তীতে তিনি একাধিক ঝমকালো পার্টির আয়োজন করে দেশটির উচ্চ শ্রেণির মানুষের মন জয় করে একজন ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি পান। কিন্তু তিন বছর পর দামেস্কের কেন্দ্রে মারজে স্কয়ারে তাকে প্রকাশ্যে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারা হয়। কারণ এলি কোহেন সিরিয়াতে গিয়ে হয়ে যান কামেল তাবেথ। তিনি ইসরায়েলের গোয়েন্দা বাহিনী মোসাদের একজন ক্ষমতাধর গুপ্তচর হিসেবে কাজ করতেন। খবর এনডিটিভি
Advertisement
ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ এখন কোহেনের মরদেহ উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করেছে। কারণ তিনি ইসরায়েল গোয়েন্দা বাহিনীর একজন কিংবদন্তি। কোহেন সিরিয়ার রাজনীতি এবং সামরিক বাহিনীর তথ্যগুলো যেভাবে ইসরায়েলকে সরবরাহ করেছে তার জন্য ১৯৬৭ সালে তেল আবিব সিরিয়ার সঙ্গে ছয় দিনের যুদ্ধে জয় পায়।
কয়েক দশক চেষ্টার পরও কোহেনের মরদেহ কোথায় রাখা হয়েছে তার হদিস পায়নি ইসরায়েল। কারণ তেল আবিব যেন তার মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যেতে না পারে তার জন্য সিরিয়া কর্তৃপক্ষ কোহেনের মরদেহ একাধিকবার স্থানান্তর করে।
কোহেন ১৯২৪ সালে মিশরের আলেক্সজান্দ্রিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার মিশরীয় ইহুদি। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠিত হলে কোহেনের পরিবার মিশর ছেড়ে চলে আসে। ১৯৫৭ সালে জায়ানবাদী কার্যক্রমে জড়িয়ে কোহেন মিশরীয় ইহুদিদের ইসরায়েলে আসতে সহযোগিতা করে।
Advertisement
পরবর্তীতে ইসরায়েলি গোয়েন্দা বাহিনীতে কাজ করার পর তাকে ১৯৬০ সালে মোসাদে নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি আরবি, স্প্যানিশ, ফরাসি ভাষায় পারদর্শী হওয়াতে মোসাদের কার্যক্রমকে একটি শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যান। তিনিই পরবর্তীতে কামেল আমিন তাবেথ হয়ে উঠেছিলেন। একজন সিরিয়ান ব্যবসায়ী তার পরিবার নিয়ে আর্জেন্টিয়ায় চলে যান। কামেল আমিন তাবেথ হয়ে ওঠা কোহেনও আর্জেন্টিয়ার বুয়েন্স আইরেসে চলে যান। সেখানে তিনি আরব এবং সিরিয়ানদের মাঝে নিজেকে এমনভাবে উপস্থাপন করেন যে তারা তাকে বিশ্বাস করতে শুরু করে। এর মধ্য দিয়ে তিনি তার মিশন বাস্তবায়ন করেন।
১৯৬২ সালে কোহেন সিরিয়ার দামেস্কে চলে আসেন। সেখানে তিনি নিজেকে এমনভাবে গড়ে তোলেন যে কেউ তাকে সন্দেহ করেনি। ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যেই তিনি নিজেকে সিরীয় সমাজে মানিয়ে নেন। ওই সময়ে সিরিয়াতে রাজনৈতিক এবং সামরিক ব্যক্তিদের বিভিন্ন পার্টি অনুষ্ঠিত হত। যেখানে কোহেন তার বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে। এভাবে সে সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা গোলান মালভূমি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে সিরিয়ার সঙ্গে ছয় দিনের যুদ্ধে গোলন মালভূমি দখল করে নেয় ইসরায়েল। আর এ কাজে মাস্টারমাইন্ড ছিল কোহেন।
১৯৬৫ সালে কোহেনের গোয়েন্দা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের সহযোগিতায় সিরিয়ান বাহিনী ইসরায়েলের সঙ্গে কোহেনের রোডিও যোগাযোগের সন্ধান পায়। ওই বছরই ২৪ জানুয়ারি সিরিয়ান কর্তৃপক্ষ কোহেনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে।
Advertisement
আন্তর্জাতিকভাবে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা সত্ত্বেয় সিরিয়া কর্তৃপক্ষ তাকে ১৯৬৫ সালের ১৮ মে জন সম্মুখে ফাঁসি কার্যকর করে।
কোহেন, ছবি: সংগৃহীত