ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),রাজনীতি প্রতিনিধি, বুধবার ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ || পৌষ ৩ ১৪৩১ :
নিজের ওপর হামলার প্রতিশোধ না নিয়ে উল্টো হামলাকারীকে ক্ষমা করে দিয়ে চরম উদারতা ও মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন বিএনপির আর্ন্তজাতিকবিষয়ক কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সিনিয়র সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। এমনকী, নিজের করা মামলার এজহারভুক্ত আসামি হলেও আটকের পর শিক্ষার্থীদের অনুরোধে তাকে ছেড়ে দেওয়ারও ব্যবস্থা করেন তিনি। ইশরাক হোসেনের এমন মহানুভবতায় আপ্লুত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
Advertisement
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, ২০২২ সালের ডিসেম্বর ৪ তারিখে ঢাকা বিভাগীয় মহাসমাবেশকে ঘিরে রাজধানীর পুরান ঢাকায় জনসংযোগ চালানো অবস্থায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ছাত্রলীগের ব্যাপক হামলার শিকার হন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। সেই হামলার ঘটানায় তখন থানায় কোনো মামলা না নিলেও পরবর্তীতে আদালতে মামলা করেন তিনি। সেই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাইনুদ্দীনকে শনাক্ত করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে তাকে রাত আনুমানিক ১০টার দিকে ধরে নিয়ে রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় সোপর্দ করেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল নেতারা।
আটকের খবরে মাইনুদ্দীনের আইন বিভাগের বন্ধুরা বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের সঙ্গে দেখা করতে তার বাসায় যায়। তবে ইশরাক হোসেন বাসায় না থাকায় তার সঙ্গে দেখা করতে পারেনি শিক্ষার্থীরা। পরে রাতেই কোতোয়ালি থানার সামনে জড়ো হন তারা। সেখান থেকেই ইশরাক হোসেনের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ইশরাক হোসেনের কাছে তাদের বন্ধুকে মাফ করে দিয়ে থানা থেকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করার জন্য দাবি জানান। ২০২২ সালের ইশরাক হোসেনের ওপর হামলার ঘটনায় ভুল করেছে উল্লেখ তার কাছে ক্ষমাও চান অভিযুক্ত মাইনুদ্দীনসহ তার বন্ধুরা। একই সঙ্গে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তাদের জোরালো ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেন তারা। এ সময় ইশরাক হোসেন তাদের দাবি মেনে নিয়ে অভিযুক্ত মাইনুদ্দীনকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান। পরে রাত আনুমানিক পৌনে ৩টায় তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
Advertisement
বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনও ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, নবীজিইতো তার ওপর অত্যাচার-নির্যাতনকারীদের মাফ করে দিয়েছেন। আর আমরাতো অতি নগণ্য মানুষ। একইসঙ্গে তিনি বলেন, ২০২২ সালে আমার ওপর যে ন্যক্কারজনক হামলা করেছিল ছাত্রলীগ। সেখানে আমার গাড়ি ভাঙচুর করেছিল তারা। আমিসহ মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিল আমার সঙ্গে বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী। সে সময়কার ঘটনার জন্য ওরা দুঃখ প্রকাশ করেছে। ঘটনায় ভুল করে এবং অনেকটা বাধ্য হয়েই অংশ নিয়েছিলেন জানিয়ে এজন্য ক্ষমাও চান অভিযুক্ত ওই ছেলেটি। ছাত্র আন্দোলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ভুমিকার কথা বিবেচনা করেছি। তবে ছাত্রলীগ নিয়ে তার অবস্থান কঠোর বলেও জানান ইশরাক হোসেন।
এ বিষয়ে কোতয়ালি থানার ওসি তদন্ত নাসির উদ্দির জানান, ২০২২ সালের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় মামলার আসামি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ৪র্থ বর্ষের মাইনুদ্দীনকে কিছু শিক্ষার্থী ধরে থানায় সোপর্দ করেন। পরে রাত আনুমানিক ১২টায় তার বন্ধু এবং সহপাঠিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় দেড়-দুইশো শিক্ষার্থী থানায় আসেন। পরে তারা মামলার ভুক্তভোগী ও বাদী বিএনপি ইশরাক হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন আসামির সহপাঠিরা। থানাতেই তার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেন তারা। এ সময় শিক্ষার্থীদের অনুরোধে ইশরাক হোসেন আসামির বিরুদ্ধে তার অভিযোগ তুলে নেন। একই সঙ্গে তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধও জানান। আমরা বাদীর অনুরোধে আসামিকে ছেড়ে দিয়েছি রাতেই।
এমন উদারতায় ব্যাপক প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন বিএনপির তরুণ এই নেতা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে অনেক বড় মনের পরিচয় দিয়েছেন ইশরাক হোসেন। অনেকেই বলছেন, তারা বাবা অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়ের প্রয়াত সাদেক হোসেনে খোকা যেমন উদার রাজনীতিবীদ ছিলেন, তার ছেলে হিসেবে তিনিও (ইশরাক হোসেন) বাবার মতোই বড় মনের এবং উদার রাজনীতিবীদ।
Advertisement
২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় মহাসমাবেশকে ঘিরে বিএনপির আল্টিমেটাম ও ফ্যাসিস্ট সরকারের দমনপীড়নের চরম অবস্থা। শুরু হয় ব্যাপক ধরপাকর। এরই মধ্যে সমাবেশ সফল করতে পুরান ঢাকা এলাকায় জনসংযোগ ও বিভিন্ন থানায় গিয়ে আটক নেতাকর্মীদের ছেড়ে দেওয়ার আহ্বানমূলক প্রচারণা চালায় ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক। এরই ধারাবাহিকতায় ডিসেম্বরের ৪ তারিখে রাজধানীর কোতোয়ালি থানা এলাকায় জনসংযোগ চালিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আসলে ইশরাক হোসেনের গাড়ি বহরে ভয়াবহ হামলা চালায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। এ সময় হামলাকারীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ইশরাক হোসেনের গাড়ি ভেঙে তছনছ করে ফেলে। এতে ইশরাক হোসেনসহ আহত হয়েছিলেন বিএনপি ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের অন্তত ৩০ জন নেতাকর্মী।
বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। ছবি : সংগৃহীত