https://youtu.be/m4XLwIR9V1M?si=QkQ90k3xzSf8An4V
ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),শিক্ষা প্রতিনিধি, শুক্রবার ২৯ নভেম্বর ২০২৪ || অগ্রহায়ণ ১৪ ১৪৩১ :
ঢাকার মাতুয়াইলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ডেমরা অংশের পাশেই ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ। গত সোমবার সকালে কলেজটিতে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাটসহ নানা তাণ্ডব চালানো হয়। এতে কলেজটির ৫০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা হয়েছে।
Advertisement
এদিকে শ্রেণিকক্ষ থেকে শুরু করে কলেজের প্রায় প্রতিটি কক্ষ ভাঙচুর করা হয়। কোথাও কম, কোথাও বেশি। আপাতত শিক্ষার পরিবেশ নেই। এতে শিক্ষাজীবন অনিশ্চয়তায় পড়ার আশঙ্কা শিক্ষার্থীদের।
কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, এমন কিছু নেই, যা ভাঙচুর করা হয়নি। স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে সময় লাগবে। তবে প্রশাসনের সহযোগিতায় একাডেমিক কার্যক্রম দ্রুত চালু করতে চায় কর্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত, মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিতের মৃত্যুর বিচার দাবিতে গত রোববার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ এবং সোহরাওয়ার্দী কলেজে হামলা-ভাঙচুর চালান মোল্লা কলেজসহ ৩৫টি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এরপর গত সোমবার দুপুরে সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা-ভাঙচুর চালান।
গতকাল বুধবার সকালে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে গিয়ে দেখা যায়, একটা ভবনেই ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ এবং ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির নামফলক। বেজমেন্টসহ ১২ তলা ভবনটির সামনের ফুটপাত ও রাস্তায় পড়ে আছে ভাঙা কাচ। বাইরে থেকে কলেজটির ১ নম্বর ভবনের প্রতিটি তলায় কাচ ভাঙার চিহ্ন চোখে পড়ে। ভবনে ঢুকেই গাড়ি রাখার বেজমেন্টে তেমন একটা ভাঙচুর বোঝা গেল না। তবে সিঁড়ি বেয়ে প্রথম তলায় উঠতেই পড়ে রয়েছে কাচ ভাঙা টুকরা। ওই তলার সর্বত্রই হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের চিহ্ন। বৈদ্যুতিক পাখাগুলোও ভাঙা। এক পাশে কলেজের লাইব্রেরি; যার অধিকাংশ বই মেঝেতে ও টেবিলে এলোমেলো হয়ে আছে। পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে কিছু বইও। অন্য পাশেই শিক্ষার্থীদের আর্থিক ব্যবস্থাপনার কলেজ কাউন্টার। ভাঙচুর ও লুটপাটের চিহ্ন রয়েছে কাউন্টারটিতে। প্রশাসনিক কর্মকর্তার কক্ষ, বাথরুমসহ সিসি টিভির কন্ট্রোল রুমেও ভাঙচুর করা হয়েছে।
Advertisement
দ্বিতীয় তলায় রয়েছে কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষক, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কক্ষসহ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ল্যাবরেটরি। অধ্যক্ষের কক্ষ, টেবিল, আলমারিসহ সব ভাঙচুর করা হয়েছে। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কক্ষে পড়ে আছে পরীক্ষার খাতা, নম্বরপত্র, প্রশংসাপত্র ও ভাঙচুর করা জিনিসপত্র।
ঢাকার মাতুয়াইলে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে গত সোমবার হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুট করা হয়। এতে ভবনের (বায়ে) যেমন ক্ষতি হয়েছে, তেমনি তছনছ করা হয়েছে (ডানে) আসবাবসহ সবকিছু। ছবি: আজকের পত্রিকা
সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটও তছনছ কলেজের ১ নম্বর ভবনটির ৯ থেকে ১১ তলা পর্যন্ত কারিগরি শিক্ষার জন্য ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির কার্যক্রম চলে। তাদের ব্যবহত শ্রেণিকক্ষ ও ল্যাবেও ভাঙচুর করা হয়েছে। লুটপাট করা হয় এসব ল্যাবের সব যন্ত্রপাতিও। কলেজ সূত্রে জানা যায়, কলেজের প্রায় ৭০টি কম্পিউটার, ১২ থেকে ১৩টা ল্যাপটপ, ৩০টি প্রজেক্টর, অন্তত ১৫টি এসিসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ভাঙচুর ও লুট করা হয়েছে। ২০০-এর বেশি রুমের মধ্যে ক্লাসরুম রয়েছে প্রায় ১৬০টি। ২২-২৪টি ল্যাবরেটরি, একটি লাইব্রেরিসহ সব কটি কক্ষেই ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে।
অনিশ্চয়তায় শিক্ষার্থীরা
এদিকে আগামী ২ ডিসেম্বর ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের বোর্ড পরীক্ষা। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরও সামনে বিভিন্ন পরীক্ষায় বসার কথা। কিন্তু হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের কারণে অনিশ্চয়তায় পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা।
মো. শিহাব উদ্দিন সীমান্ত নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এখন অনিশ্চয়তায় আছি আমাদের পরীক্ষা ও ক্লাস শুরু নিয়ে।’
বুধবার সকাল পর্যন্ত ভবনটি পাহারায় ছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। প্রশাসনের সহযোগিতায় একাডেমিক কার্যক্রম চালু করতে চায় কলেজ কর্তৃপক্ষ। ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির অধ্যক্ষ মো. ইরাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘কলেজের সবকিছু ভাঙচুর ও লুট করা হয়েছে। এখনো আমাদের শিক্ষার্থীদের নানাভাবে উসকানি ও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে আছে।’
একটি কক্ষের ফাইলপত্রও রক্ষা পায়নি হামলাকারীদের হাত থেকে। ছবি: আজকের পত্রিকা
কলেজ সূত্রে জানা যায়, কলেজটিতে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ৭ হাজারের বেশি এবং পলিটেকনিকের ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। হামলা ও লুটপাটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার কলেজের অধ্যক্ষ ওবায়দুল্লাহ নয়ন বলেন, হামলা-লুটপাটের ঘটনায় কলেজের ৫০ কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ওই ঘটনায় কলেজের অধ্যক্ষ ওবায়দুল্লাহ নয়ন বাদী হয়ে গত মঙ্গলবার রাতে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা করেছেন। এতে অজ্ঞাতনামা ৮ থেকে ৯ হাজার আসামি করা হয়েছে।
Advertisement
মামলার বিষয়ে যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মো. ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। যাচাই-বাছাই করে দোষীদের গ্রেপ্তার করা হবে।’