ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),রাজধানীর জুরাইন প্রতিনিধি, শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪ || অগ্রহায়ণ ৭ ১৪৩১ :
রাজধানীর জুরাইনে সড়ক ও রেললাইনে অবস্থান নেয়া ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এসময় রিকশাচালকদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদুনে গ্যাস ছুড়েছে পুলিশ। এ সময় ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এতে এলাকার সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।
Advertisement
জুরাইনে রেললাইন অবরোধ করে বুধবার বেলা ১১ টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত প্রায় তিন ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন চালকরা। ব্যাটারি রিকশা বন্ধের প্রতিবাদ ও সড়কে চলতে দেয়ার দাবিতে তারা এই অবরোধ করেন।
ঢাকা মহানগরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশের প্রতিবাদে শুক্রবার তৃতীয় দিনের মত চালকরা রাস্তায় নামেন।
শ্যামপুর থানার এসআই নাজমুন নাহার গণমাধ্যমকে বলেন, রিকশাচালকরা বেলা ১১টা থেকে জুরাইন এলাকার সড়ক ও রেললাইন অবরোধ করে তাদের কর্মসূচি শুরু করেন।
রেললাইন আটকে তাদের এই বিক্ষোভের কারণে পদ্মাসেতু হয়ে দক্ষিণের পথে রেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায় বলে কমলাপুর স্টেশনের মাস্টার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন জানান। তিনি বলেন, রিকশা চালকরা বেলা ১১টা থেকে রেললাইনে অবস্থান করে বিক্ষোভ করছে। তখন থেকে ওই লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
দুপুর ১টার দিকে পুলিশ রিকশাচালকদের সড়ক ছেড়ে দিতে বললে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয় বলে এসআই নাহার জানান।
তিনি বলেন, পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
Advertisement
বিকেল ৩টা পর্যন্ত রিকশাচালকরা বিচ্ছিন্নভাবে সড়কে অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এর আগে জুরাইনে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালকরা। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি জুরাইন রেল স্টেশনে আটকা পড়ে নারায়ণগঞ্জ কমিউটার। অন্যদিকে কমলাপুরের শহরতলী স্টেশনে খুলনাগামী নকশিকাঁথা কমিউটার ট্রেন আটকা পড়ে। এ ছাড়া ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা-মাওয়া-পদ্মাসেতু রেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
খবর পেয়ে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের সরিয়ে দিতে চাইলে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে অবরোধকারীরা সড়ক থেকে পিছু হটলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে ট্রেন চলাচল এখনও শুরু হয়নি। এ ঘটনায় এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
ট্রেন চলাচল বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করে কমলাপুর স্টেশন মাস্টার আনোয়ার হোসেন জানান, দুপুর পৌনে ১২টার দিকে অবরোধের কারণে জুরাইন রেল স্টেশনে নারায়ণগঞ্জ কমিউটার আটকে যায়। একই কারণে খুলনাগামী নকশিকাঁথা কমিউটার ট্রেনটি কমলাপুরের শহরতলী স্টেশনে আটকে আছে বলেও জানান তিনি।
Advertisement
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি মাহমুদুর রাজীর হাইকোর্ট বেঞ্চ ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় তিন দিনের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নেওয়া কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে রুলও জারি করেন আদালত। হাইকোর্টের আদেশের পরদিন থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ করছেন ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকেরা। বৃহস্পতিবার রিকশা চালকদের অবরোধে স্থবির হয়ে যায় রাজধানী। এ সময় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ান তারা। অবরোধের কারণে প্রায় ৬ ঘণ্টা বন্ধ ছিল ট্রেন চলাচল।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, হাইকোর্ট থেকে অটোরিকশা বন্ধের যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা তারা মানেন না। এই নির্দেশ প্রত্যাহারও চান তারা। যতক্ষণ পর্যন্ত অটোরিকশা চালানোর অনুমতি না দেওয়া হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালন করবেন বলে জানিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। তবে সিটি কর্পোরেশন থেকে প্যাডেলচালিত রিকশার লাইসেন্স নেওয়ার বিধান থাকলেও ব্যাটারিচালিত রিকশার লাইসেন্স দেয়ার কোনো বিধান নেই। ২০১৩ ও ২০১৪ সালে ব্যাটারিচালিত রিকশার লাইসেন্স পেতে রিট করা করা হলে হাইকোর্ট ওই দুই রিটই খারিজ করে দেন।
জুরাইনে সড়ক ও রেললাইনে অবস্থান নেয়া ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত