ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),লালমনিরহাট-বুড়িমারী প্রতিনিধি, মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪ || অগ্রহায়ণ ৪ ১৪৩১ :
লালমনিরহাট-বুড়িমারী রেল রুটের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভাণ্ডার রেলওয়ে স্টেশনের পাশে প্রায় ৭০ শতাংশ জায়গা দখল করে বিনোদন পার্কের আদলে নির্মিত স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সরকারি অর্থায়নে এই পার্কটি ব্যক্তিগত বিনোদনের জন্য গড়ে তুলেছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ছেলে রাকিবুজ্জামান আহমেদ। গত বছর অবৈধ এই স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ওই জায়গায় দুইবার যান। কিন্তু দলীয় প্রভাব উচ্ছেদ অভিযানে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
Advertisement
জানা গেছে, রাকিবুজ্জামান আহমেদ পিতার ও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে ওই জায়গা দখল করে বিনোদন পার্ক তৈরি করেন। এ স্থাপনাটি গড়ে তুলতে রাকিবুজ্জামান জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তর থেকে ভিন্ন নামে ২০টি প্রকল্পের মাধ্যমে দেড় কোটি টাকাও তুলেছেন। সরকারি টাকায় তিনি ওই পার্ক তৈরি করেছেন নিজের বিনোদনের জন্য, যেখানে জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ ছিল। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে নুরুজ্জামান ও রাকিবুজ্জামান পলাতক আছেন। তাদের দুজনের বিরুদ্ধেই পৃথক হত্যা মামলা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত তুষভাণ্ডার রেলওয়ে স্টেশনের পার্শ্ববর্তী জায়গাটিতে এলাকার দরিদ্র লোকজন বসবাস করতেন। পাশে অস্থায়ী দোকান বসিয়ে বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসা করতেন। কিন্তু রাকিবুজ্জামান দলীয় ক্ষমতা দেখিয়ে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট উঠিয়ে দিয়ে জায়গাটি দখল করে ঘিরে ফেলেন। মূল ফটকের ওপর বসান কংক্রিটের নৌকা। পাশে অবৈধভাবে তৈরি করেন আওয়ামী লীগ অফিস। এ ছাড়া ভেতরের অংশে একটি বড় পুকুর কেটে চারপাশ ঘিরে তৈরি করা হয় সড়ক।
Advertisement
বসানো হয় চেয়ার-টেবিল। রাকিবুজ্জামান সেখানে মাঝেমধ্যে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিতেন।
রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রেলওয়ের জায়গা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের শুরুতেই সাবেক মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদকে চিঠি দিয়ে কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি তোয়াক্কা করেননি।
রেলওয়ের বিভাগীয় সহকারী ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা (ডিইও) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, রেলওয়ের জায়গার ওপর গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার প্রস্তুতি আছে। এ মাসেই সেখান থেকে সব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। এরই মধ্যে রাকিবুজ্জামানের অবৈধ পার্কটি উচ্ছেদ করা হয়েছে। তবে পলাতক থাকায় বিষয়টি নিয়ে নুরুজ্জামান আহমেদ ও রাকিবুজ্জামান আহমেদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়নি।
Advertisement
নুরুজ্জামান আহমেদ ২০১৬ সালে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী এবং ২০১৯ সালে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০২৪ সালের মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েন তিনি। ২০১৪ সাল থেকে লালমনিরহাট-২ (কালীগঞ্জ-আদিতমারী) আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি।