ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বিশেষ প্রতিনিধি, শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪ || কার্তিক ২৪ ১৪৩১ :
মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নিতে গিয়ে সুরুজ মিয়া নামে এক চালককে ছুরিকাঘাত করে যাত্রীবেশী ছিনতাইকারী। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে পালিয়ে যায় সে। গুরুতর আহত হয়েও পুলিশকে না জানিয়ে চালক ভর্তি হন হাসপাতালে। সেখানে মারা যান তিনি। ক্লুলেস এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশকে বিক্রি করতে হয়েছে কখনো জাম, কখনো বাদাম। সম্প্রতি গ্রেফতার করা হয় ঘটনায় জড়িত চারজনকে।
Advertisement
এক নারী গত ২১ জুন সকালে কাফরুল থানায় গিয়ে পুলিশকে জানান, তার স্বামীর মরদেহ পড়ে আছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। পুলিশের অনুমতি ছাড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মরদেহ হস্তান্তর করবে না তাই থানায় ছুটে আসা। কার মরদেহ, এই নারীই বা কাফরুল থানায় কেন? প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে থাকে পুলিশ।
ওই নারী পুলিশকে জানান, গুরুতর আহত অবস্থায় দুই দিন আগে অর্থাৎ ১৯ জুন তার স্বামীকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে মিরপুরের কালশির ভাড়া বাসায় পৌঁছে দেন চার ব্যক্তি।
তদন্তের একপর্যায়ে আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করতে থাকে পুলিশ। কাফরুল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামরুল ইসলাম বলেন, ওই নারী জানান যে তার স্বামীকে আহত অবস্থায় উদ্ধারকারীরা তার মোবাইলে কল দিয়েছিলেন। পরে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ওই নাম্বার দিয়ে তাদের এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনাস্থালে আসি।
এসআই সাইফুল জানান, কাফরুলের বর্ণমালা সড়ক অর্থাৎ ঘটনাস্থলের একটি ফুটেজ আসে পুলিশের কাছে। যেখানে একটি মোটরসাইকেল থামতে দেখা যায়। একজনকে খুব দ্রুত দৌড়ে পালিয়ে যেতে দেখা যায়। ফুটেজে দেখা ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে গিয়ে সম্ভাব্য যেসব রাস্তা লোকটি ব্যবহার করতে পারে সেসব রাস্তার সব ফুটেজ সংগ্রহ করতে থাকে পুলিশ।
Advertisement
একটি ফুটেজে স্পষ্ট ধরা পড়ে লোকটির চেহারা। এরপর ফুটেজে দেখা ব্যক্তিকে ধরতে মাঠে নামে টিম কাফরুল। টিমের সদস্যদের মধ্যে একজন বিক্রি শুরু করেন জাম, আরেকজন বাদাম। অবশেষে গ্রেফতার করা হয় তাকে, যাকে দেখা গেছে ফুটেজে।
এএসআই মাহমুদুল বলেন, ম্যানুয়ালি কাজের সিদ্ধান্ত নিই। আমার ব্যাচমেট বিএম সাদ্দাম এলাকায় দুইদিন জাম বিক্রি করেন। আর আমি বিক্রি করি বাদাম। এভাবে অনেক গোপন তথ্য পাওয়া যায়। একজনকে সন্দেহ হয়। কিন্তু এতে আমি নিশ্চিত ছিলাম না। আবার যদি নিরপরাধ কাউকে ধরি, তবে তো আসল অপরাধী ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে। সাদ্দাম আমার কাছ থেকে একটু দূরে ছিলেন। পরে তাকে ফোন দিই। কারণ সেখানে গ্যাং থাকতে পারে। এভাবে সজীব নামে একজনকে আটক করি। স্বাভাবিক যারা অপরাধ করে, তাদের বডি ল্যাংগুয়েজ অটোমেটিকলি পরিবর্তন হয়ে যায়। তো সজীবকে ধরার পর কথা বলি। তখন সে নার্ভাস হয়ে যায়।
এসআই বিএম সাদ্দাম বলেন, ওই সন্দেহভাজনের হাঁটাচলার সমস্যা ছিল। তখন তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করি। এতে আমাদের সন্দেহ আরও বেড়ে যায়। কিছুটা নিশ্চিত হওয়ার পর আরও জিজ্ঞাসাবাদ করি। তখন এক পর্যায়ে কিছুটা বলল। পরে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ঘটনার সময় তার পরনে থাকা কাপড়ের সন্ধান করি। বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে তার বন্ধুর বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে একটি ব্যাগের ভেতর ওই পোশাক ভেজা অবস্থায় পাই।
এদিকে এই ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে তারা একটি গ্যাংয়ের সন্ধান পান। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সহকারী কমিশনার হাসান মুহাম্মদ মুহতারিম জানান, এই গ্যাংয়ের টার্গেট মোটরসাইকেল রাইড শেয়ার করেন এমন ব্যক্তি। ১৯ জুন রাতে সুরুজ মিয়া রাত ১২টার পর বের হয়েছিলেন রাইড শেয়ার করতে। টার্গেটে পরিণত হন তিনি।
ডিএমপির সহকারী কমিশনার বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকেই শনাক্ত করেছি এবং আইনের আওতায় আনা হয়েছে। আশা করছি, এর সুষ্ঠু বিচার হবে।
Advertisement
এ ছাড়া তদন্তে আরও একটি বিষয় উঠে আসে। সুরুজ মিয়া রাইড শেয়ার করতেন রাত ১২টার পর। কারণ তার মোটরসাইকেলের কোনো কাগজপত্র ছিল না।