ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),যশোর প্রতিনিধি, বৃহস্পতিবার ১০ অক্টোবর ২০২৪ || আশ্বিন ২৫ ১৪৩১ :
যশোরে মোবাইল ফোনে অশ্লিল ভিডিও দেখে উত্তেজিত হয়ে পাঁচ বছরের শিশু তাসনিয়াকে যৌন নির্যাতন চালায় রিতু (১৬) নামে এক তরুণী। এক পর্যায়ে ওই শিশুকে সে হত্যা করে মরদেহ লেপের ভেতরে পেচিয়ে রাতের আধারে বাড়ির পাশের পুকুরে ফেলে দেয়। এরপর সাজানো হয় পানিতে ডুবে মৃত্যুর নাটক। অবিশ^াস্য ও নৃৃৃশংস এ ঘটনাটি ঘটায় তাসনিয়ার পাশের বাড়ির বাসিন্দা ইশিতা আক্তার রিতু। ঘটনাটি ঘটেছে গত ২০ জুলাই যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামে।
Advertisement
এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত রিতু, তার বাবা তহিদুর রহমান ও মা নিরু বেগমকে আটক করেছে পিবিআই যশোরের সদস্যরা। ঘটনার দুই মাস পর ক্লুলেস এ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পিবিআই।
শনিবার রাতে আটকের পর রোববার ঘটনাস্থল নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় রিতু ও তার বাবাকে। এসময় তারা নিজ মুখেই সব ঘটনা স্বীকার করে। পাঁচ বছরের শিশু তাসনিয়াকে কিভাবে হত্যা করা হয় তারও বর্ণনা দেন তারা। হত্যাকান্ডের বর্ণনা শুনে নিহত তাসনিয়ার বাবা-মা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ ধরনের নৃশংসতায় হতবাক হয়েছেন এলাকাবাসীও। তারা হত্যাকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবি জানান।
এলাকাবাসী জানান, মরদেহ পানিতে পাওয়ার পর তাদের ধারণাই ছিলো তাসনিয়া ডুবে মারা গেছে। তাই তারা মরদেহের ময়নাতদন্ত না করার জন্য পুলিশকে বারবার অনুরোধ জানান। কিন্তু তাসনিয়ার শরীরের কয়েকটি ক্ষত চিহ্ন দেখে সন্দেহ হয় বাঘারপাড়া থানার ওসি রোকিবুজ্জামানের। একপর্যায় ময়না তদন্তের পর বেরিয়ে আসে আঘাত ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে তাসনিয়াকে। সে সময় থানা পুলিশও রিতু ও তার পরিবারকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু তারা মুখ খোলেনি। ময়না তদন্তে আরও উঠে আসে হত্যার আগে তাসনিয়াকে যৌন নিপীড়ন করা হয়েছিলো। এ তথ্যে থানা পুলিশের তদন্ত ঘুরে যায় অন্যদিকে। তারা ধর্ষকের সন্ধানে মাঠে নামে। এ ঘটনায় নিয়মিত মামলা করেন তাসনিয়ার পিতা রজিবুল ইসলাম।
Advertisement
অন্যদিকে, পিবিআই যশোরের সদস্যরা পড়ে থাকে রিতুকে নিয়েই। ঘটনার পরই তড়িঘড়ি করে রিতুর বিয়ে দেয় ও তার একেক সময় একেক রকম তথ্য দেয়ায় সন্দেহ প্রকট হয়। এরপর ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে হত্যার লোমহর্ষক সব ঘটনা।
এ বিষয়ে পিবিআই যশোরের পুলিশ সুপার রেশমা শারমীন বলেন, এ ঘটনায় সেপ্টেম্বরে কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করে যশোর পিবিআই সদস্যরা। এরপর এসআই স্নেহাশীষের নেতৃত্বে একটি টিম দফায় দফায় ওই এলাকায় যায়। প্রথমে রিতুর বাবা হত্যার ঘটনাটি পুলিশের কাছে স্বীকার করেন।
Advertisement
এরপর বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। তিনি বলেন, তার মেয়ে রিতুর বিকৃত যৌন লালসার শিকার হয়েছেন তাসনিয়া। রিতু পর্ণোগ্রাফিতে আসক্ত ছিলো। ঘটনার সময় শিশুটি চিৎকার দেয়। পরে ওই শিশুকে শাবল দিয়ে আঘাত করে। এতে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এক পর্যায়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লেপ দিয়ে তার মৃতদেহ পেচিয়ে ঘরে রাখা হয়। পরে রাতের আধাঁরে তার মৃতদেহ পুকুরের পানিতে ফেলে দিয়ে ডুবে মৃত্যুর কথা প্রচার করা হয়। একই কথা স্বীকার করে নৃশংস ঘটনার হোতা রিতু। এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।