ইউএনওকে ফাঁসাতে গিয়ে ফাঁসলেন কৃষকলীগ নেতা

SHARE

য়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),নেত্রকোনার মদন  প্রতিনিধি, বুধবার ০৯ অক্টোবর ২০২৪ ||  আশ্বিন ২৪ ১৪৩১ :

নেত্রকোনার মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহ আলম মিয়াকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজের পাতানো ফাঁদে ফাঁসলেন নূরুল আলম কামাল মণ্ডল নামের এক কৃষকলীগ নেতা।

ওই কৃষকলীগ নেতা প্রতিবেশী খায়রুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির নাম ব্যবহার করে ইউএনওর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ দেন জেলা প্রশাসকের কাছে। পরে ওই অভিযোগের সূত্রে গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হয়। এ নিয়ে এলাকায় শুরু হয় তোলপাড়।

Advertisement

প্রতারণা করে তার নাম ব্যবহার করে মিথ্যা অভিযোগের বিষয়টি জানতে পেরে খায়রুল ইসলাম চট্টগ্রাম থেকে সম্প্রতি এলাকায় আসেন। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তার নাম ব্যবহার করে কৃষকলীগ নেতা নূরুল আলম কামাল মণ্ডল ইউএনওর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় ওই কৃষকলীগ নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দেন খায়রুল ইসলাম।

গতকাল শনিবার সকালে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস।

ভুক্তভোগী খায়রুল ইসলাম নেত্রকোনার মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী গ্রামের মৃত সুলতু মিয়ার ছেলে। তিনি দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে চট্টগ্রামে পরিবারসহ বসবাস করেন এবং সেখানেই দিনমজুরের কাজ করেন।

অভিযুক্ত নূরুল আলম কামাল মণ্ডল মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী গ্রামের মাওলানা আব্দুল মন্নাফের ছেলে। কামাল মণ্ডল মদন পৌর কৃষক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক।

স্থানীয় লোকজন ও লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, জলমহাল থেকে রাজস্ব আত্মসাতের কথা উল্লেখ করে গত ৪ সেপ্টেম্বর মদনের ইউএনওর বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি অভিযোগ করেন গোবিন্দশ্রী গ্রামের খায়রুল ইসলাম। কিন্তু খায়রুল কয়েক বছর ধরে জীবিকার তাগিদে পরিবার নিয়ে চট্টগ্রামে থাকেন। ইউএনওর বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। খায়রুল নিরক্ষর মানুষ। তার জাতীয় পরিচয়পত্রে টিপসই থাকলেও অভিযোগে খায়রুলের স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় সমালোচনার সৃষ্টি হলে খায়রুলের সঙ্গে স্থানীয় সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা যোগাযোগ করলে তিনি চট্টগ্রাম থেকে মদন আসেন। পরে জানতে পারেন তার নাম ঠিকানা ব্যবহার করে কৃষকলীগ নেতা গোবিন্দশ্রী গ্রামের প্রতিবেশী নূরুল আলম কামাল মণ্ডল ইউএনওর বিরুদ্ধে ভুয়া অভিযোগটি দায়ের করেন। প্রতারণা করে হয়রানি করার জন্য কামালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে গত ২ অক্টোবর জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন খায়রুল।

খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামে দিনমুজুরির কাজ করে সংসার চালাই। ৬ মাস আগে একবার বাড়িতে এসেছিলাম। এরপরে আর বাড়ি আসা হয়নি। এখন আমার নাম ঠিকানা ব্যবহার করে ইউএনও স্যারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমি তো ইউএনও স্যারকে চিনি না। জীবনে কখনো তাকে দেখিনি। আমি জীবনে ডিসি স্যারের অফিসে যাইনি। বাড়িতে এসে জানতে পারলাম প্রতিবেশী কৃষকলীগ নেতা কামাল আমার নাম ব্যবহার করে ডিসি অফিসে অভিযোগ করেছে। ওই ভুয়া অভিযোগপত্রে দেখলাম আমার স্বাক্ষর রয়েছে। অথচ আমি নিরক্ষর মানুষ, ভোটার আইডিতেও টিপসই দিয়েছি। তাই এই ঘটনায় জড়িত কামালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ডিসি মহোদয়ের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। যেন এমন প্রতারণা করার সাহস আর কেউ না করে। ’

গোবিন্দশ্রী গ্রামের মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘কৃষকলীগ নেতা কামাল দলীয় প্রভাবে এলাকার খাল দখল ও খাস জমি দখল করে বিক্রি করেছে। সব সময় এলাকায় বিশৃঙ্খলা তৈরি করে রাখে। প্রভাব টিকিয়ে রাখতে কয়েক মাস আগে তিনি সাংবাদিকের কার্ড নিয়েছে। খায়রুল ইসলামের মতো একজন নিরীহ মানুষের নাম ব্যবহার করে ইউএনওর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করার প্রতিবাদ জানাই।’

Advertisement

এ বিষয়ে অভিযুক্ত কৃষকলীগ নেতা কে এইচ এম নূরুল আলম কামাল বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এটা কাঁদা ছোড়াছুড়ি ছাড়া আর কিছু নয়।’

ইউএনও মো. শাহ আলম মিয়া বলেন, ‘গত মাসে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ার খবর শুনেছি। আমি কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকলে অবশ্যই আমার বিরুদ্ধে যথাযথ নিবেন। কিন্তু উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে কেউ এ কাজ করে থাকলে তদন্তের মাধ্যমে তা বের হয়ে আসুক। অপরাধী যেই হোক তার বিরুদ্ধে যেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’

মদন উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. নূরুল আলম তালুকদার বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি জানতে পেরেছেন গোবিন্দশ্রী গ্রামের মৃত সুলতু মিয়ার ছেলে খায়রুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি ইউএনওর বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। বর্ণিত বিষয়ে সত্যতা যাচাই করে প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার জন্য দাবি জানাই।’

Advertisement

জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নূরুল আলম কামাল মণ্ডল