ঢাকা: ‘বছরে দুইটা ঈদ আসে, অনেক সাধ-আহ্লাদ থাকলেও পূরণ করতে পারি না। এরপরও সাধ্য না থাকলেও বাচ্চাদের জন্য কিছু কিনতে হয়। ভালো-মন্দ রান্নাও করতে হয়। এসব না করলে ছেলে-মেয়েগুলো কান্নাকাটি করে। তাই নানা উপায় করে জোগাড় যন্ত্র করতে হয়েছে’।
এভাবে নিজের ঈদ প্রস্তুতির কথা জানান রাজধানীর আগারগাঁও বস্তির বাসিন্দা রেহানা আক্তার। মানুষের বাসায় কাজ করে ছয় সদস্যের খরচ চালান তিনি। তার সঙ্গে আছে পক্ষাঘাতগ্রস্থ স্বামীর চিকিৎসার খরচ। দীর্ঘ ৭ বছর ধরে বিছানায় পড়ে আছেন তার স্বামী। ঈদের দিন সকালে এখানে রান্না করে মালিকের বাসায় যেতে হবে রেহানা আক্তারকে।
রাত পোহালে মহা আনন্দের ঈদ। তাই সবাই এখন ব্যস্ত ঈদের আয়োজন নিয়ে। ইতোমধ্যে ঈদকে কেন্দ্র করে নিজেদের সাধ্যমতো মার্কেট সেরে ফেলেছেন অনেকেই। তবে সবার জন্য ঈদ সমান খুশি নিয়ে আসে না। অনেক সময় উৎসব অসহায়-দুস্থ, গরিব ও বস্তিতে বসবাসকারীদের কাছে অনেকটা বিড়ম্বনার হয়ে যায়। কারণ, সারাদিনের উপার্জন দিয়ে পরিবারের খাদ্য সংগ্রহ করাই কষ্ট। সেখানে ঈদের জন্য নতুন পোশাক কেনা অনেকটা স্বপ্ন হয়ে পড়ে। এরপরও নিজেদের সাধ্যের মধ্যে বা সাধ্যের বাইরে গিয়ে ‘ঈদ আয়োজন’ করতে হয় বলে জানান বস্তিবাসীরা।
বুধবার (০৬ জুলাই) ঈদের আগের দিন আগারগাঁও বস্তিতে সরেজমিনে ঘুরে বাসিন্দাদেরও ঈদের প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়। সেখানে একটা গরু জবাই করে এক কেজি, হাফ কেজি করে মাংস সবাই ভাগ করে নিচ্ছেন। এছাড়া সাধ্যমতো সেমাই চিনি কিনে নিয়েছেন। অনেকেই যেখানে কাজ করেন, সেখান থেকে কিছু সাহায্য পেয়েছেন, তা দিয়ে বাচ্চাদের নতুন পোশাক কিনে দিয়েছেন। তবে বস্তির অনেক শিশুর ভাগ্যে একটিও নতুন পোশাক জোটেনি।
আগারগাঁও বস্তিতে থাকেন মুচির কাজ করা আজিজার রহমান। বস্তির সামনে ঈদ উপলক্ষে গরু জবাই হলে এক কেজি গরুর মাংস কেনেন তিনি। তিন সন্তানের জনক আজিজারের কাছে সন্তানদের জন্য নতুন পোশাক কেনা কাছে স্বপ্ন। তবে সে স্বপ্ন পূরণ করতে পারেননি তিনি।
আজিজার রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার খাবার জোগাড় করাই কষ্ট। ঈদের পোশাক ক্যামনে কিনবো? বাচ্চারা চাইছিলো দিতে পারি না। ঈদের দিনের জন্য সেমাই কিনেছি, মাংস কিনলাম, পরিবারের সবাই মিলে খাবো’।
বাবা-মা মারা যাওয়ার পর বৃদ্ধা নানীর কাছে বড় হয়েছে রিমি (৯) ও শাওন (৭)। এ বয়সেই উপার্জনে নেমে পড়েছে রিমি। তাদের পাশের ঘরে থাকা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ভিক্ষুকের সঙ্গে আগারগাঁওয়ে ভিক্ষা করে। ভিক্ষার চার ভাগের এক ভাগ পায় সে। সেই টাকায় ভাইয়ের জন্য শার্ট কিনেছে রিমি।
বাংলানিউজকে রিমি বলে, ‘নানী মানুষের বাসায় কাজ করেন। বুড়া হইছেন, কাজ করিবার পারেন না। আমার টাকায় সংসার চলে। ঈদে ভাইরে শার্ট কিনে দিয়েছি। আমি কিছু নেই নাই’।
রিকশাচালক শাহাজাহানের এক ছেলে এক মেয়ে। মেয়ে শাহাজাদীর জন্য কাপড় আনলেও ছেলের জন্য কিনতে পারেননি।
তিনি বলেন, ‘গরিব মানুষের আবার ঈদ! তারপরও সবার জন্য কেনার ইচ্ছা ছিলো, কিন্তু পারি নাই। ঈদের দিনের খরচ তো আছেই। এই অল্প ইনকামে ঈদ করন যায় না’।
বস্তির বাসিন্দা মাজেদা বলেন, ‘আমার বেটা মানুষ মাসের ১০ দিন কাজ করেন, বাকি দিনগুলো নেশা করে ঘরে বসে কাটান। আমি কিছু বলতে গেলে মারতে আসেন। এজন্য নিজেকেই পাঁচজনের সংসার চালাতে হয়্। দুই জনে সংসার চালালে ঈদে বাচ্চা-কাচ্চাগুলোকে কিছু দিতে পারতাম। আমি একা আর কি করতে পারি!’