‘মানুষ কি মানুষকে এভাবে মারতে পারে?’

SHARE

শামীমের মা কোহিনুর বেগম, ডানে আহত অবস্থায় পড়ে থাকা শামীম

য়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি,শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ :

ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন ষাটোর্ধ্ব কোহিনুর বেগম। বাড়ি জুড়ে মানুষের ঢল। সবাই সহানুভূতি জানাচ্ছেন তাকে। তবে সেসবে খুব একটা সাড়া নেই তার। ক্ষণে ক্ষণে বিলাপ করে বলছিলেন, ‘মানুষ কি মানুষকে এভাবে মারতে পারে? আমার বাবাকে ওরা মেরে ফেললো…’!

Advertisement

গতকাল বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ঢাকার সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গণপিটুনিতে’ নিহত শামীম মোল্লার বাড়িতে গিয়ে এমন দৃশ্য চোখে পড়লো।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯ তম আবর্তন ও ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী শামীম মোল্লা ছিলেন পার্শ্ববর্তী আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকার বাসিন্দা।

গতকাল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে দুই দফা ‘গণপিটুনির’ শিকার হন শামীম মোল্লা। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে আটক করে আশুলিয়া থানা পুলিশ। পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালে মৃত অবস্থায় তাকে গ্রহণ করে পুলিশ। ইসিজি করে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। রাতেই শামীম মোল্লার পরিবারের কাছে মৃত্যুসনদ বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

শামীম মোল্লার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পরিবার ও এলাকায়। গ্রামজুড়ে মেধাবী ও দানের হাত ছিল বলে পরিচিতি রয়েছে তার।

Advertisement

শামীম মোল্লার বাড়ি জুড়ে এদিন মানুষের ভিড়। সবার মধ্যে শোকের আবহ। আফসোস করছেন অনেকেই। ঘরের দরজায় বসে ছিলেন শামীমের মা কোহিনুর বেগম। ছেলের কথা জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলে ওঠেন, ‘আমার ছেলে খারাপ ছিল না। মানুষের উপকার করছে। আমার ছেলেরে বিনা দোষে মারছে। এইডার বিচার চাই। যে মারছে বিচার চাই।’

বাবা লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমার ছেলে কি অন্যায় করছে? মেধাবী ছিল আমার ছেলে। পড়াশোনা করে পাশ করেছে। বাসা নিয়ে থাকতো জাহাঙ্গীরনগরের পাশে। আমার ছেলের হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই। আমি বিচার চাই।’ বলতে বলতেই অদম্য কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

শামীমের বাবা লুৎফর রহমান

 

শামীমের হত্যার বিচারের দাবি জানিয়ে তার বোন বলেন, ‘নির্মমভাবে আমার ভাইকে যারা মারলো, তাদের বিচার চাই। তাকে এভাবে মারলো! এভাবে কি একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে মারতে পারে?’

এদিকে এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

 

বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক জাহিদুল ইসলাম ইমন বলেন, ‘১৫, ১৬ ও ১৭ জুলাই যে হামলা হয়েছিল শিক্ষার্থীদের ওপর, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ব্যক্তির নাম তার জবানবন্দিতে উঠে এসেছিল। সেই একাধিক নামের সংশ্লিষ্টতা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে থাকতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। বিষয়টি তদন্তে জোর নজর দেওয়া হোক।’

এছাড়া এমন হত্যাকাণ্ড কাম্য নয় জানিয়ে জড়িতদের বিচারের দাবি করেন তিনি।

Advertisement

গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ মো. জুয়েলুর রহমান বলেন, ‘গতকাল রাত ৯টার দিকে অচেতন অবস্থায় তাকে আমরা গ্রহণ করি। পরবর্তীতে তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাই। ইসিজি করে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হই। পরে মৃত্যুর সনদ তার বড় ভাইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়।’

ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আহম্মদ মুঈদ বলেন, ‘পিটুনি হোক আর যেভাবে হোক একটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। আইনতো নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। এ ঘটনায় মামলা হবে।’