তুরিন আফরোজকে প্রসিকিউশন থেকে অপসারণ (ভিডিও)

SHARE

য়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি) ,বিশেষ প্রতিনিধি , শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩০ ভাদ্র ১৪৩১ : 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর পদ থেকে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজকে অপসারণ করা হয়েছে। পেশাগত অসদাচরণ, শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগে তাকে অপসারণ করা হয়েছে বলে গতকাল সোমবার এক প্রজ্ঞাপনে জানিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।

Advertisement

গতকাল থেকেই এ আদেশ কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়। তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলার এক আসামির সঙ্গে গোপন আঁতাতের অভিযোগ উঠেছিল। এই অভিযোগে গত বছরের ৯ মে আমাদের সময়ে ‘প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ বরখাস্ত হতে পারেন : যুদ্ধাপরাধ মামলার আসামির সঙ্গে গোপন বৈঠক’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। অপসারণের আদেশ জারির পর গতকাল সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, যে আসামির সঙ্গে তুরিন আফরোজ গোপন বৈঠক করেছিলেন, ওই মামলার অভিযোগ গঠন হওয়ায় এই প্রসিকিউটরকে অপসারণ জরুরি হয়ে পড়েছিল। মন্ত্রী আরও বলেন, তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, যে মামলা তিনি নিজে (পরিচালনা) করছিলেন, সে মামলার একজন আসামির সঙ্গে তিনি আলাপ-আলোচনা করতে গিয়েছিলেন। আলোচনার সময় এও বলেছিলেন এ মামলার কোনো সারবত্তা নেই। সেই কথোপকথন টেপ করা হয়। টেপ করা কথোপকথনগুলো এবং তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অভিযোগ আমাদের কাছে পাঠান। এ অভিযোগ নিয়ে সাক্ষীদের কাছে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এবং তার সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন যতটুকু মনে করি হয়েছিল।

Advertisement

যে সাক্ষ্যপ্রমাণ আছে সেগুলো কিন্তু অল আর ডকুমেন্টরি। সেই জন্য আমরা সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে অব্যাহতি দিয়েছি।গত বছরের ৯ মে আমাদের সময়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০১৭ সালের ১১ নভেম্বর জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক ডিজি মেজর (অব) ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে করা মামলাটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকে। এর এক সপ্তাহ পরই তিনি ওয়াহিদুল হককে মোবাইলে ফোন করে সাক্ষাৎ করতে চান। তাকে যে কোনো দিন আটক করা হতে পারে বলেও জানান। প্রথমে ১৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় ওয়াহিদুল হকের গুলশানের বাসায় তাদের সাক্ষাতের সময় নির্ধারণ হয়। এ সময় সহকারী ফারাবী বিন জহির অনিন্দ্যকে নিয়ে তুরিন আফরোজ স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বোরকা পরে তার বাসায় যাবেন বলে জানান। পরে সাক্ষাতের স্থান পরিবর্তন হয়। তারা গুলশানে অলিভ গার্ডেন নামে রেস্টুরেন্টে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে তারা প্রায় তিন ঘণ্টা অবস্থান করে মামলার নথিপত্র নিয়ে আলোচনা করেন। তখন ওয়াহিদুল হককে তুরিন আফরোজের সহকারী ফারাবী বলেন, আপনি যে পদে ছিলেন, তাতে তো ২০-২৫ কোটি টাকা এমনিতেই ক্যাশ থাকার কথা। এ সময় ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ও গ্রেপ্তারের আদেশের অনুলিপি নিয়ে আলাপ হয় বলে জানা গেছে।’আসামির সঙ্গে কথোপকথনের অডিও রেকর্ড ফাঁস হওয়ার পর ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু আইন মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠান। এর পর তুরিনকে ট্রাইব্যুনালের সব মামলা পরিচালনা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। গতকাল আইন ও বিচার বিভাগের সলিসিটর অনুবিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে তুরিনের নিয়োগ বাতিল করা হয়। এখন পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, কাজটা যে আমি খুশি হয়ে করেছি, তা নয়।

Advertisement

কিন্তু তাকে অব্যাহতি দেওয়াটা জরুরি হয়ে পড়ে। কারণ যে মামলা নিয়ে কথা হচ্ছে, সেই মামলায় চার্জ গঠন হয়ে গেছে, সেই কারণে এই ব্যাপারটি একটি নিষ্পত্তি টানা দরকার ছিল, সেজন্য এটা করা হয়েছে। তুরিনের এত দিনের কাজে নিজের সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, যে কারণে আজ তাকে অব্যাহতি দেওয়া হলো, তার আগ পর্যন্ত তিনি কিন্তু নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে গেছেন। এ ব্যাপারে (ওয়াহিদুলের সঙ্গে সাক্ষাৎ) তার সেন্স অব জাজমেন্ট কেন কাজ করেনি, আমি জানি না। তার দিক থেকে এসব বক্তব্য যেটি ধারণ করা হয়েছে, যেটি তার গলা বলে প্রমাণিত হয়েছে, এটি তিনি কেন করলেন, আমরা বুঝতে পারছি না। এটি দুঃখজনক।তুরিন অভিযোগ করেছেন, তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে আনিসুল হক বলেন, তার সঙ্গে কথা হয়েছে, যে প্রমাণাদি আছে, সেটা যদি এখন ইয়ে করতে চান, সেটা তো ওপেন। টেপ করা কথাবার্তা আমরা পেয়েছি এবং তার বিরুদ্ধে নালিশ হয়েছে।

আমরা সার্বিকভাবে আলোচনা করার পর তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।এর আগে ব্যারিস্টার তুরিন সাংবাদিকদের বলেন, আমাকে কোনো তদন্তের ভেতর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়নি। আমাকে কেউ কিছু জিজ্ঞাসাও করেনি, কোনো কিছুই করা হয়নি। তো এক বছর চার-পাঁচ মাস পরে হঠাৎ করে…তদন্তে তো আত্মপক্ষ সমর্থনেরও একটি জায়গা থাকে। কোনো তদন্ত কমিটি করা হয়েছে কিনা, সেটিও আমি জানি না।তিনি আরও বলেন, আমাকে কেউ কিছুই এ পর্যন্ত জানায়নি। গত বছরের ৯ মে থেকে আজ পর্যন্ত এক বছরে একটিবারও আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য কোনো রকম এক্সপ্লেনেশন, কোনো কিছুই জানতে চাওয়া হয়নি।