অভিনয় করতে চাই না (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি) ,বিনোদন প্রতিনিধি ,মঙ্গলবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯ ভাদ্র ১৪৩১ 

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের সময় উপস্থাপিকা হিসেবে অসামান্য পরিচিতি পেয়েছেন দীপ্তি চৌধুরী। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে গণমাধ্যম, এখনো সবখানে তাঁকে নিয়ে চর্চা। চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে আবার সাহায্য নিয়ে ছুটছেন বিভিন্ন জেলায়। এরই মধ্যে পেয়েছেন চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব। সমসাময়িক প্রায় সব বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন কামরুল ইসলাম

দীপ্তি চৌধুরী ছবি : সংগৃহীত

Advertisement

ত্রাণ সহায়তা নিয়ে হবিগঞ্জ গিয়েছেন দেখলাম…

হ্যাঁ, সোমবার [২৬ আগস্ট] ভোরে হবিগঞ্জ গিয়েছিলাম। দিনভর সেখানে থেকে রাতে ঢাকায় ফিরেছি। পাশাপাশি যাঁরা স্থানীয় পর্যায়ে ত্রাণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদেরও সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। আমার মনে হয়েছে, যেসব জায়গা সামগ্রিকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেখানে ত্রাণ বেশি যাচ্ছে।

তবে দেশে এমন অনেক জায়গা রয়েছে, যেখানে কয়েকটা ইউনিয়ন বা গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তারা সেভাবে সাহায্য পাচ্ছে না। সে জন্যই আমি হবিগঞ্জে গিয়েছি। শুকনা খাবার, খাবার স্যালাইন ও ওষুধ দিয়েছি।

সঙ্গে ছিল পোশাক, যেগুলো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের থেকে পেয়েছি। এ ছাড়া স্যানিটারি ন্যাপকিন ও বাচ্চাদের ডায়াপার দিয়েছি। মানুষকে সহযোগিতা করতে পেরে খুব ভালো লেগেছে।

 

 

এমন দুর্যোগে এবারই প্রথম গেলেন? 

আগেও সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি।

যতটুকু পারা যায়। আমাদের দেখলে যদি কারো একটু ভালো লাগে। শুধু ত্রাণসামগ্রীই না, বুকে জড়িয়ে একটু সাহস জোগানোও বড় ব্যাপার। শনি ও রবিবার আমি ছিলাম কুমিল্লায়। পেশাগত কাজও ঠিক রাখতে হচ্ছে।

এ জন্য এক দিনে পাঁচ-ছয়টা শো করছি। যাতে মাঝে একটা দিন ছুটি নিয়ে যেতে পারি। দু-এক দিনের মধ্যে নোয়াখালী যাব। আজ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি চ্যারিটি কনসার্টে উপস্থাপনা করব।  মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য যেকোনো কাজে আমি স্বাচ্ছন্দ্যে অংশ নেব।

 

 

চ্যানেল আইয়ের টু দ্য পয়েন্ট টক শোতে সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের সঙ্গে পর্বটি প্রচারের পর আপনাকে নিয়ে বিপুল আলোচনা-প্রশংসা হয়েছে। এরপর নিশ্চয়ই উপস্থাপনায় আপনার কদর বেড়েছে?

আমি শুরু থেকে চ্যানেল আইতে উপস্থাপনা করছি। এখানে আমরা যাঁরা কাজ করি, তাঁরা অন্য চ্যানেলে সাধারণত যুক্ত হই না। তবে সময়-বিষয়বস্তুর সমন্বয় করে বিভিন্ন চ্যানেলে অতিথি, আলোচক হিসেবে যাচ্ছি। উপস্থাপক হিসেবে কোনো চ্যানেলের সঙ্গে প্রফেশনালি যুক্ত হব না। বিভিন্ন করপোরেট শো আগেও করেছি, সামনেও করব।

পর্দায় টু দ্য পয়েন্টে কথা বলেন। বাস্তবেও কি আপনি এমনই?

একদম। আমি টু দ্য পয়েন্টে কথা বলতে ভালোবাসি। বাইচান্স অনুষ্ঠানের নামও এটা। সময় ভীষণ দামি। সুতরাং এদিক-ওদিক না বলে, টু দ্য পয়েন্টে কথা বলাই শ্রেয়। তবে ‘টু দ্য পয়েন্ট’ আপাতত বন্ধ রেখে আমি নতুন একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করছি ‘এখন কী চাই’। আমরা কেমন বাংলাদেশ চাই, আইন-শৃঙ্খলা, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন জায়গায় যে জং ধরেছে, সেগুলোতে কেমন সংস্কার হতে পারে, সেসব নিয়ে অনুষ্ঠানটি। এখানে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ থাকেন, তাঁদের মূল্যবান মতামত তুলে ধরেন।

 

অনুষ্ঠানে নানা রকম মানসিকতার মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হয়। কখনো কি মনে হয়েছে উপস্থাপনা আর করবেন না? 

কখনো মনে হয়নি। ক্যামেরার বাইরে যখন থাকি, তখন আমি ব্যক্তি দীপ্তি। ক্যামেরার সামনে বসলে আমার দায়িত্ব অনেক বড়। আমি শুধু নিজের মনের প্রশ্ন করি না, অন্য অনেকের প্রশ্নও করি। তাই কারো আচরণ, মতাদর্শ আমাকে প্রভাবিত করে না। অনুষ্ঠানের দীপ্তি আর বাইরের দীপ্তির মধ্যে তফাত আছে। ব্যক্তি অনুভূতিকে উপস্থাপনায় জায়গা দিইনি, চেষ্টা করব আগামীতেও না দিতে।

Advertisement

ছোটবেলায় আবৃত্তি, গান, অভিনয়ের চর্চা করতেন। উপস্থাপনায় জড়িয়ে গেলেন কিভাবে?

ঘটনাক্রমে। সোশ্যাল ওয়ার্ক ও ডেভেলপমেন্ট নিয়েই আমার কাজ। কৈশোরে ‘স্বর্ণকিশোরী’ নামে একটি সংস্থায় কাজ করতাম। এটা ২০১৬ সালের কথা। আমি তখন ক্লাস এইটে পড়ি। চ্যানেল আইতে তাদের একটি অনুষ্ঠান হতো। একপর্যায়ে ওই অনুষ্ঠান উপস্থাপনা শুরু করি। এই সূত্রে দেশ-বিদেশে ছুটে চলা, কিশোর-কিশোরীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা। সেখান থেকেই উপলব্ধি হয়, মানুষের কাছে পৌঁছানোর ভালো একটি মাধ্যম উপস্থাপনা। এইচএসসি পাস করার পর চ্যানেল আই থেকে প্রস্তাব পাই পেশাদার উপস্থাপক হওয়ার। এভাবেই যুক্ত হওয়া। উপস্থাপক হতে হবে, এই ভেবে যেমন বড় হইনি, আবার যেকোনো মূল্যে উপস্থাপনা করেই যাব, এ রকমও না। যত দিন মানুষের উপকারে আসতে পারব, তত দিন করে যাব।

 

গান-আবৃত্তির চর্চা কি ধরে রেখেছেন এখনো?

গানের অনুশীন এখন করাই হয় না। ছোটবেলায় হারমোনিয়ামে যেটুকু শেখা, তা-ই। আবৃত্তিচর্চা এখনো করি, তবে স্টেজে না। কারণ স্টেজে আমি উপস্থাপকের ভূমিকায় থাকি। তখন তো নিজে নিজে বলতে পারি না, একটা আবৃত্তি করব!

 

জাজ মাল্টিমিডিয়ার চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছেন শুনলাম। কী ভাবছেন? করবেন?

আমার সঙ্গে তাঁদের সরাসরি যোগাযোগ হয়নি। একটি মাধ্যমে আমাকে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। তাঁদের শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছি, সিনেমায় অভিনয় করতে আগ্রহী নই। অনেক আগে থেকেই আমার দর্শন, অভিনয় করতে চাই না। একেবারে ভবিষ্যতের কথা তো আমরা কেউ-ই বলতে পারি না। তবে মনে হয় না অভিনয় করব।

 

ক্যারিয়ার হিসেবে উপস্থাপনা কেমন?

খারাপ না। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, ফজলে লোহানী কিংবা ফারজানা ব্রাউনিয়া—তাঁরা উপস্থাপক হিসেবেই তারকা হয়েছেন। এখনকার সময়ে অনেকে উপস্থাপনা দিয়ে মিডিয়ায় এসে পরে অন্য কিছুতে জড়িয়ে যান। আবার অনেকে অভিনয়ে জনপ্রিয় হয়ে পরে উপস্থাপনায় আসেন। আমার মনে হয়, উপস্থাপনাকে আরো সমৃদ্ধ করার সুযোগ রয়েছে। কেউ যদি একাগ্র হয়ে উপস্থাপনা করেন, তাহলে মানুষের মন জয় করতে পারবেন। উপস্থাপনা খুব গুরুত্বপূর্ণ বুদ্ধিবৃত্তিক শিল্প। এটাকে অবশ্যই মানুষ ভালোবাসেন।

 

এখনকার সময়টা খুব অস্থির। কেউ রাতারাতি জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠে যাচ্ছেন তো পরক্ষণেই আবার নিন্দিত হয়ে একেবারে তলানিতে নেমে যাচ্ছেন। এ নিয়ে আপনার ব্যাখ্যা কেমন?

খুব ভালো একটা প্রসঙ্গ। সোশ্যাল মিডিয়ায় কাউকে ভালো বানালে মনে হয় তার সব ভালো, আর কাউকে খারাপ বানালে তার সব খারাপ। এখান থেকে সবার বের হয়ে আসা উচিত। ভালো-মন্দ মিলিয়েই মানুষ। যাচাই না করে কোনো খবর বিশ্বাস করা উচিত নয়। সোশ্যাল মিডিয়াতেও সুনাগরিকের ভূমিকা পালন করতে হবে।

 

আপনি নিজেও জেনারেশন জেডের তরুণী। আপনার দৃষ্টিতে এই প্রজন্ম কেমন?

এই প্রজন্ম খুব স্পষ্টভাষী। তারা সরাসরি কথা বলতে ভয় পায় না। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে ভয় পায় না। আমাদের আগের প্রজন্মের মধ্যে যে তৈলমর্দনের স্বভাব, সেটা আমাদের প্রজন্মের মধ্যে কম। আমরা গ্লোবাল সিটিজেন, পুরো পৃথিবীর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ। অ্যান্ড উই আর ভেরি স্মার্ট। কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। যেমন স্রোতে গা ভাসিয়ে দিই। এই জায়গায় যদি একটু সচেতন থাকতে পারি, তাহলে বাংলাদেশ ও পৃথিবীকে বদলে দেওয়ার মতো শক্তি আমাদের আছে।

 

উপস্থাপনায় আপনার উৎসাহ-অনুপ্রেরণা কারা?

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার যখন উপস্থাপনা করতেন, তখন তো পাইনি। এখন আগের ভিডিওগুলো দেখি, ভালো লাগে। ফারজানা ব্রাউনিয়া একজন বলিষ্ঠ নারী উপস্থাপক, তাঁকেও খুব ভালো লাগে।

Advertisement