নতুন রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে ভাবছেন সমন্বয়করা (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি) ,ঢাকা প্রতিনিধি ,মঙ্গলবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯ ভাদ্র ১৪৩১ 

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা কমিটিতেও রয়েছে তাদের দু’জন সমন্বয়ক।

এদিকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে থাকায় রাজনীতির মাঠে হঠাৎ করেই বিএনপিকে বেশ উজ্জীবিত দেখা যাচ্ছে।

Advertisement

এসবের মধ্যেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে নতুন কোনো রাজনৈতিক দল গঠন হবে কি না তা নিয়ে উঠছে প্রশ্নও। নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়ে কী ভাবছেন এর সমন্বয়করা?

গত ৮ আগস্ট বঙ্গভবনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ গ্রহণের পরই এ নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এবং উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘জনগণ যদি মনে করে তরুণরাই রাষ্ট্রের হাল ধরবে তবে জনগণের সেই আহ্বানে সাড়া দেওয়ার জন্য তরুণরা প্রস্তুত আছে।’

পর দিন দুপুরে নাহিদ ইসলাম এবং আসিফ মাহমুদের উপদেষ্টা হবার বিষয়ে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। সেখানে তিনি লেখেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে থাকার কারণে তাদের সামনের ইলেকশনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে।’

এরপর থেকেই আলোচনায় আসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়টি।

‍Sarjisবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম। ছবি: সংগৃহীত

‘তাহলে কি এবার রাজনীতির মাঠেও দেখা যাবে সমন্বয়কদের’- এমন প্রশ্নের জবাবে গণমাধ্যমকে সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ‘মানুষ ভিন্ন একটি রাজনৈতিক দল তরুণদের নেতৃত্বে দেখতে চায়, যারা সৎভাবে এবং ন্যায়সঙ্গতভাবে বাংলাদেশে সুন্দর সমাজ গঠন করবে। বাংলাদেশের মানুষের চাওয়ার সে জায়গা থেকে আমাদের মনে হচ্ছে, জাতীয় পর্যায়ে আমরা একটি রাজনৈতিক চিন্তাধারায় যেতে পারি।’

Advertisement

সরকার পতনের পর দল গঠনের বিষয়ে প্রথম ভাবনা আসে বলে জানান তিনি। তবে পুরো বিষয়টিই এখনো আলোচনার পর্যায়ে থাকায় কবে, কীভাবে এবং কোন কাঠামোতে দল গঠন হবে কিংবা কারা দলের নেতৃত্বে থাকবে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাতে পারেননি এই সমন্বয়ক।

এদিকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রয়োজন ‘ফুরিয়ে এসেছে’ বলেই মত আরেক সমন্বয়ক উমামা ফাতেমার। ১০ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন তিনি।

Umamaবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

সেখানে তিনি লেখেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম। আমাদের নেতৃত্বদের মধ্যে ৬ জুলাই এর দিকেই এই প্ল্যাটফর্মকেন্দ্রীক একটা বোঝাপড়া তৈরি হয়ে যায়। সেটা ছিল, এই আন্দোলনের মঞ্চ থেকে পরবর্তীতে রাজনৈতিক সংগঠন হবে না। এই আন্দোলনের মঞ্চকে রাজনৈতিক কাঠামোতে পরিণত করলে আমাদের গণঅভ্যুত্থান তার আকাঙ্ক্ষা থেকে বিচ্যুত হবে।’

‘অনেক সুবিধাভোগী গোষ্ঠী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। ভাবখানা এমন যেন তারা একটা কিছু! ছাত্র-জনতা একেকটা অবজেক্ট! নতুন স্বৈরাচার গজানোর আগেই ছাত্র-জনতার সচেতন হওয়া প্রয়োজন। নয়তো এই ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামক আমাদের আন্দোলনের প্ল্যাটফর্মটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের পরিবর্তে গোষ্ঠীস্বার্থ রক্ষার হাতিয়ারে পরিণত হবে এবং দ্রুত মানুষের আস্থা হারাবে। আমাদের বুঝতে হবে, কোথায় আমাদের থামতে হবে।’

তাহলে কি রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্তটি সমন্বয়কদের একটি অংশের? দল গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্তই বা কীভাবে নেওয়া হচ্ছে? এ প্রশ্নের জবাবে সমন্বয়ক সারজিস আলম জানান, ‘সব সমন্বয়ককে নিয়েই আলোচনা হচ্ছে। সবার সিদ্ধান্তের আলোকে আমরা চিন্তা করছি আমরা এমন একটি রাজনৈতিক কাঠামোতে যাব। আমরা সবাইকে একসঙ্গে রেখেই অফিসিয়াল ঘোষণা দেব।’

এদিকে রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলাপ চললেও রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়টিকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন আরেক সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। সেক্ষেত্রে কেবল রাষ্ট্রের প্রয়োজন এবং জনতার চাহিদার ভিত্তিতে দল গঠনের বিষয়ে ভাবা হবে বলে জানান তিনি।

Hasnatবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত

তিনি বলেন, ‘বিদ্যমান লেজুড়বৃত্তিক রাজনৈতিক দলের ঊর্ধ্বে উঠেই কাজ করার সুযোগ যতক্ষণ থাকছে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে জায়গাটিতেই কাজ করতে আমরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করব। কিন্তু যখনই ছাত্র-নাগরিকদের চাহিদা তৈরি হবে যে পলিসি মেকিংয়ের ক্ষেত্রে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়দের অংশ নেওয়া দেখতে চাই এবং সেটা নতুন ধরনের কোনো রাজনৈতিক এপ্রোচের মধ্য দিয়ে তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যারা রয়েছে তারা ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’

Advertisement

অনেকটা একই কথা বলছেন আরেকজন সমন্বয়ক তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমরা কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করব কি না সেটি একটি সময়কালীন সিদ্ধান্ত। আমরা আশা করবো সবকিছু স্থিতিশীল পর্যায়ে পৌঁছানোর পর আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারব যে আমাদের রাজনৈতিক অবস্থান কী হবে।’