ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি) ,ঢাকা প্রতিনিধি ,রোববার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৭ ভাদ্র ১৪৩১ :
২৭ বছর ধরে পুলিশে চাকরি করছে ময়নাল হোসেন। বর্তমানে তিনি রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের জ্যেষ্ঠ উপপরিদর্শক। তার স্ত্রী পারভীন আক্তার। এই দম্পতির তিন ছেলে। বড় ছেলে রবিউল আউয়াল পড়ছেন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে, মেজ ছেলে জাহিদ হাসান মস্কো সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটিতে পড়ছেন আর সবচেয়ে ছোট ছেলে ইমাম হাসান ভূঁইয়া তাইম ছিলেন নারায়ণগঞ্জের সরকারি আদমজী নগর এমডব্লিউ কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
Advertisement
“ছিলেন” বলতে হচ্ছে কারণ, ইমাম হাসান আর এখন বেঁচে নেই। সম্প্রতি সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গুলিতে নিহত হয়েছেন তিনি। আর গুলির অভিযোগ পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধেই।
গত ২০ জুলাই যাত্রাবাড়ীর কাজলা পদচারী–সেতুর কাছে গুলিবিদ্ধ হন ইমাম হাসান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে সেদিন খুব কাছে থেকেই পুলিশ সদস্যরা ইমাম শিক্ষার্থীদের দিকে গুলি ছুড়ছেন। আর সেখানেই গুলিবিদ্ধ হন ইমাম হাসান তাইম।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় গুলিবিদ্ধ ইমাম হাসানকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন রাহাত হোসাইন নামে তার এক বন্ধু।
নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, টানা আন্দোলনে যখন উত্তাল যাত্রাবাড়ী, তখন ইমাম হাসান সে আন্দোলনে অংশ নেন। ছেলের পাশে থাকতে তার মা পারভীন আক্তারও কয়েক দিন ফুটপাতে বা একটু নিরাপদ জায়গায় বসে থেকেছেন। তবে ঘটনার দিন ২০ জুলাই তিনি বাসায়ই ছিলেন। এদিন দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল ছিল। সেই সময় ইমাম হাসান বন্ধুদের সঙ্গে পদচারী–সেতুর পাশে লিটন স্টোরে চা খেতে গিয়েছিলেন।
পারভীন আক্তার প্রথম আলোকে জানান, ছেলে বের হওয়ার আধঘণ্টার মধ্যেই গুলি লাগার খবর আসে।
তিনি বলেন, “পুলিশের ছেলে পুলিশেরই গুলিতে মরল, আমার স্বামী এই প্রতিদান পাইল? আমার ছেলেরে কতগুলা গুলি দিছে, ছেলে তো চোর-সন্ত্রাসী ছিল না। যে মারল, তার একটুও মায়া লাগে নাই? মারতে কয়টা গুলি লাগে? …আমি সঠিক বিচারটা চাই।”
এদিকে ইমাম হাসানের সুরতহাল প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ডান হাতের কনুইয়ের নিচে কবজি পর্যন্ত চারটি ছিদ্র…মাথা থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত প্রায় ১০০টি কালো ছিদ্র ও জখম।
সুরতহাল প্রতিবেদনে মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে সুরতহাল প্রস্তুতকারী কর্মকর্তা মন্তব্যের ঘরে মৃতের বাবা ময়নাল হোসেনের ভাষ্য হিসেবে লিখেছেন, ভিকটিমকে কোটা আন্দোলনকারীরা মারপিট ও গুলি করে জখম করে।
Advertisement
তবে এ বিষয়ে ময়নাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, “সেখানে দায়িত্বরতরাই নিজেদের ‘মনমতো’ এ কথা লিখেছেন।” সরাসরি গুলি লেখা যাবে না, ছিদ্র লিখতে হবে—ওপর থেকে এমন নির্দেশ আছে বলে তাকে জানানো হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ইমাম হাসানের বড় ভাই রবিউল আউয়াল প্রথম আলোকে বলেন, “ভিডিও ফুটেজ হাতে পাওয়ার পর বুঝতে পারছি, যে পুলিশ গুলি করেছেন, তিনিই বারবার বাবাকে ফোন করে নানা তথ্য জানতে চেয়েছেন। বাবার সঙ্গে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে গিয়েছি। তারা সমবেদনা জানালেও আইনি ব্যবস্থা নিতে কোনো পরামর্শ দেননি। বরং বাবার কোনো কিছু করার দরকার নেই, পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে এমন কথাও বলেছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।”
ভাইয়ের হত্যাকাণ্ডের বিচার পেতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান রবিউল আউয়াল।
সেদিন গুলিবিদ্ধ ইমাম হাসানকে পেছন থেকে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা রাহাত হোসাইন প্রথম আলোকে জানান, তিনি, ইমাম হাসান, শাহরিয়ার আজাদ এখানে বসে চা খাচ্ছিলেন। কয়েকজন পুলিশ এসে চায়ের দোকান থেকে তাদের তিনজনকে বের করে প্রথমে মারধর করেন। পরে ইমাম হাসানকে লক্ষ্য করে গুলি চালান এক পুলিশ। পেছন থেকে তিনি (রাহাত) যখন ইমাম হাসান টেনে নিচ্ছিলেন, তখনো পুলিশ গুলি করছিল। তার পায়েও গুলি লাগে।
Advertisement
সেদিন তাদের সঙ্গে থাকা শাহরিয়ার আজাদের বাবাও পুলিশে কর্মরত।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশ গুলি করার সময় এক বন্ধু ইমাম হাসানকে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করছেন/সংগৃহীত