মসজিদ পুলিশিং: এসপি হাবিবের প্রয়াসে পাল্টে যাচ্ছে পরিস্থিতি

SHARE

mashjidঢাকা: শুক্রবার দিনটা ছুটির প্রথম দিন। কিন্তু সরকারি কর্মকর্তা হয়েও তার দিনের শুরুটা ভিন্ন। সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়লেন। নিজের দফতরকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলের অন্যখানে। রমজানের শেষ শুক্রবার (০১ জুলাই)। পবিত্র জুমাতুল বিদা। আজান হতেই ছুটলেন তিনি মসজিদে। ইমামের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে শুরু করলেন বয়ান। জঙ্গিবাদ আর উগ্রবাদের বিরুদ্ধে; বিপরীতে শান্তির ধর্ম ইসলামের অবস্থান।

এখানেও থেমে নেই কাজ। চলছে সমানতালে মুসুল্লিদের উদ্বুদ্ধের কাজ। এই মানুষটি হাবিবুর রহমান। ঢাকার পুলিশ সুপার (এসপি)। সরকারি দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে বদলে দিয়েছেন জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি।

অনন্য পুলিশিংয়ের মাধ্যমে তাকে বাহিনীর গর্ব বলেই মনে করেন সহকর্মীরা।

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো চালু করেছেন মসজিদ ভিত্তিক কমিউনিটি পুলিশিং। কেবল মসজিদই নয়, মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজভিত্তিক পুলিশিং চালু করে অনন্য এই পুলিশ সদস্য নিজেই। ২০১২ সালের ১৩ নভেম্বর পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদানের পরপরই বদলে যেতে থাকে জেলার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি।

প্রতিষেধক নয় প্রতিরোধ। এই ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করতেই নতুন নতুন ধারণা তুলে দেন সহকর্মীদের হাতে। ২০১৩ সালের শুরুতেই জোরদার করেন কমিউনিটি পুলিশিং। অল্পদিনেই ফল পেতে শুরু করেন জেলার বাসিন্দারা।

জনগণই যেখানে পুলিশের আসল অংশীজন, সেই জনগণকে নিয়েই পুলিশের কার্যক্রম। প্রথমস্তরেই গ্রাম পুলিশ, চৌকিদার, আনসার ভিডিপি সদস্যদের গুরুত্ব ও তাদের সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

উৎসব-পার্বণে তাদের হাতে উপহার তুলে দিয়ে নজির স্থাপন করে ঢাকা জেলা পুলিশ। পরের পর্বে সম্পৃক্ত করা হয় সুশীল সমাজকে। ওপেন হাউজ ডে কার্যকর করে নিশ্চিত করা হয় পুলিশের জবাবদিহিতা। সেখানে সাধারণ মানুষ খোলা মনে সরাসরি তুলে ধরে তাদের সমস্যা ও সমাধানের উপায়।

এরপর মসজিদ, মাদ্রাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একাত্ব হয়ে মাদক, ইভটিজিং, জঙ্গিবাদসহ নানা ইস্যুতে তৈরি করেন জনমনে সচেতনতা। যে কারণে উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসে মাদকের মামলা। অপরাধের খতিয়ানে পরিসংখ্যানটাও ক্রমে ছোট হতে থাকে।

মসজিদভিত্তিক কমিউনিটি পুলিশিং চালুর বিষয়ে ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, মসজিদ আমাদের কাছে শ্রদ্ধা আর বিশ্বাসের জায়গা। তাই এখান থেকেই শুরু। আমি চাই এই মসজিদ থেকেই মুসুল্লিরা মাদকসহ সামাজিক অপরাধের বিষয়ে সচেতন হবেন।

হাবিবুর রহমান যখন খতিবের অনুমতি নিয়ে মসজিদে কমিউনিটি পুলিশিং করছিলেন তখন পুরোপুরি নীরবতায় মুগ্ধ শ্রোতারা তন্ময় হয়ে শুনছিলেন তার বক্তব্য।

গুপ্ত হত্যা চলছে। সবাইকে সাবধান হতে হবে। হত্যাকারীরা ধরাও পড়ছে। আতঙ্ক নয়। জরুরি সচেতনতা। ইসলাম কোনো পুরোহিত বা যাজককে হত্যা কখনোই সমর্থন করে না। এটি ইসলাম বিরুদ্ধ। এটা উগ্রপন্থা,’ বলেন তিনি।

তিনি খুতবায় আরও বলেন, আসুন আমরা সবাই সতর্ক হই। আশপাশের সন্দেহভাজন মানুষদের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে সতর্ক হই।

ঢাকার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম বাংলানিউজকে জানান, এসপি স্যারের তত্ত্বাবধানে আমরা জেলার প্রতিটি স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসায় সচেতনতামূলক লিফলেট পোস্টার বিলি করেছি।

সাভার সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, এসপি স্যার আমাদের গর্ব। তার সব কাজেই অনন্য পরিচয়।

এসপি হাবিবুর রহমান বলেন, আমি চেষ্টা করছি মানুষের জন্য কিছু করার। আমি চলে গেলেও আমার পরবর্তীরা যেন এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখে। আরও উন্নত সেবার মাধ্যমে অসহায় ও নির্যাতিত মানুষের বন্ধু হবে পুলিশ। নতুন অফিসাররা এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে এটাই আমার প্রত্যাশা।