ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি) ,ঢাকা প্রতিনিধি ,বৃহস্পতিবার, ২৯ আগস্ট ২০২৪, ১৪ ভাদ্র ১৪৩১ :
নিহত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিকে নিয়ে অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেওয়ায় এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমানকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। অবিলম্বে তাকে গ্রেফতার করে তার কাছে কী তথ্য-উপাত্ত আছে তাও জব্দ করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
Advertisement
সেই সঙ্গে বিদেশের মাটিতে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে মাহফুজুর রহমান যে বক্তব্য দিয়েছেন সে বক্তব্যেরও ধিক্কার জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা।
মঙ্গলবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সাংবাদিকদের ওপর পুলিশি নির্যাতন, দোষীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা এসব দাবি জানান। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) ও ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন এ কর্মসূচির আয়োজন করে।
বিক্ষোভ সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা বলেন, তদন্ত চলাকালে একটি বিষয় নিয়ে এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান অরুচিকর, মানহানিকর ও অসৌজন্যমূলক বক্তব্য দিয়ে পুরো সাংবাদিক সমাজকে অপমান করেছেন। তাই অবিলম্বে তাকে গ্রেফতার করে সাগর-রুনি হত্যার ক্লু খুঁজে বের করতে হবে।
Advertisement
“সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিদেশে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা কাপুরুষোচিত বক্তব্য ছাড়া আর কিছু না’ বলেও মন্তব্য করেন তারা।
সমাবেশে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, “সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে সাংবাদিক সমাজ যখন একত্রিত হয়ে আন্দোলন করছি, ঠিক তখনই মাহফুজুর রহমানের এমন বক্তব্য তদন্ত কাজকে প্রভাবিত করা ছাড়া অন্য কিছু না। “
তার কাছে কি কি তথ্য আছে, তা অবিলম্বে উদ্ধার করে নতুন করে তদন্ত শুরু করার জন্যও পুলিশ প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান তিনি।
ইকবাল সোবহান চৌধুরী আরো বলেন, “মাহফুজুর রহমান নিহত সাংবাদিক মেহেরুন রুনির ব্যক্তিগত চরিত্র সম্পর্কে অশালীন, অরুচিকর ও মানহানিকর যে বক্তব্য দিয়েছেন। এতেই প্রমাণ হয় যে, তিনি একজন বিকৃত রুচির মানুষ। মানুষরূপী পশু ছাড়া তিনি আর কিছুই নন। “
“মাহফুজুর রহমান রুনির সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা তাকেই প্রমাণ করতে হবে। মাহফুজুর রহমানকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে জানতে হবে, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের কি ভিডিও ফুটেজ তার কাছে রয়েছে। “
“তার মেয়ের সমতুল্য একজন নারী সাংবাদিকের চরিত্র সম্পর্কে কথা বলে তিনি বাংলাদেশের নারী সাংবাদিক সমাজকে অপমান করেছেন’ বলে মন্তব্য করেন ইকবাল সোবহান চৌধুরী।
প্রেসক্লাবের সামনে “সাংবাদিকরা আইনের উর্ধ্বে নয়“ লেখা সম্বলিত ব্যানার টাঙানোর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, “আমরা সব সময় বলি, সাংবাদিকরা আইনের উর্ধ্বে নন। সেই সঙ্গে বলছি, পুলিশ এবং সরকারও আইনের উর্ধ্বে নয়। আমরা পুলিশ কর্মকর্তা ও সরকারের কাছে যে দাবিগুলো জানিয়েছি, সেগুলো আইনসঙ্গত। “
তিনি বলেন, “তিন জন ফটো সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ধানমণ্ডি থানার ওসিকে এখনো প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়নি। কিন্ত শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। “
তিনি বলেন, “মুক্ত-স্বাধীন গণমাধ্যমের দাবিতে আমরা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছি। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ (মঙ্গলবার) বিকেলে সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধের দাবিতে জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে স্মারকলিপি পেশ করবো। “
ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের অন্য অংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, “সাংবাদিক নির্যাতনের চিত্র দেখে মনে হচ্ছে, সারা দেশ সাংবাদিক নির্যাতনের কারখানায় পরিণত হয়েছে। এটা আর মেনে নেওয়া হবে না। “
“এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান লন্ডনে গিয়ে সাগর-রুনি হত্যার ক্লু খুঁজতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে গেছেন“ বলে মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশ্য তিনি বলেন, “আর ৪৮ ঘণ্টা নয়, ড. মাহফুজুর রহমানকে গ্রেফতার করলেই সকল ক্লু পাওয়া যাবে। “
পুলিশ বাহিনীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের সূত্র পাওয়া গেছে। মাহফুজুর রহমানকে গ্রেফতার করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে কথিত খুনিদের গ্রেফতার করুন। “
“তাকে গ্রেফতার না করলে আমাদের আন্দোলন চলবে“ জানিয়ে তিনি বলেন, সারা দেশের সাংবাদিক সমাজকে সঙ্গে নিয়ে আরো কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
সাংবাদিকদের মান-সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলে এটিন বাংলার চেয়ারম্যান পার পাবেন না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সমাবেশে এটিএন বাংলার বার্তা সম্পাদক জ ই মামুন বলেন, “মাহফুজুর রহমানের বক্তব্য অরুচিকর। এই বক্তব্যের সঙ্গে এটিএন বাংলার সাংবাদিকদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। “
জ ই মামুনের এ সাহসী বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তার চাকরির ওপর আঘাত আসতে পারে। যদি তার চাকরির ওপর কোনো আঘাত আসে, তাহলে এটিএন বাংলা চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন সমাবেশের সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী।
Advertisement
বিক্ষোভ সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, বৈশাখী টেলিভিশনের সিইও মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি আব্দুস শহীদ, সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শাবান মাহমুদ প্রমুখ।
চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিকাল চারটায় স্পিকার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হবে।