মধ্যরাতে গাবতলীতে যাত্রী হয়রানি

SHARE

mid night gabtoliঢাকা: ‘লালমনিরহাট যাবো। এখানে এসেছি রাত সাড়ে ১১টায়। রাত ১২টা থেকে বসিয়ে রেখেছে তারা। বলছে, লালমনিরহাটের গাড়ি আসবে। কিন্তু প্রায় দুই ঘণ্টা হয়ে গেছে, একটি গাড়িও আসেনি। তাও বলছে, গাড়ি আসছে-আসছে। এখন সারারাত বাসস্ট্যান্ডে বসে থাকতে হবে কিনা কে জানে।’

বুধবার (২৯ জুন) মধ্যরাত ২টার দিকে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে দাঁড়িয়ে এ কথা বলছিলেন লালমনিহাটের বাসের জন্য অপেক্ষমান যাত্রী রাসেদুল ইসলাম। তার মতোই অপেক্ষায় বসে থাকতে দেখা গেল আরও জনাবিশেক যাত্রীকে, যাদের মধ্যে রয়েছেন নারী-শিশু-বৃদ্ধও।

রাত ১২টার পর বন্ধ হয়ে যায় গাবতলী বাস টার্মিনালের সব পরিবহনের টিকিট কাউন্টার। সেই সুযোগে সক্রিয় হয়ে ওঠে একটি চক্র। আর তাদের হাতে হয়রানির শিকার হতে হয় রাসেদুল ইসলামের মতো নারী-শিশু-বৃদ্ধসহ দূরপাল্লার যাত্রীদের। এবারের ঈদকে সামনে রেখে চক্রটির প্রতারণার পরিসর আরও বেড়েছে। বুধবার মধ্যরাতে গাবতলী টার্মিনাল এলাকা ঘুরে যাত্রী হয়রানির তেমন চিত্রই দেখা যায়।

টার্মিনালের সামনের রাস্তায় একটা ছোট্ট টেবিল পাতা। তার ওপরে কিছু টিকিট রাখা। সঙ্গে রয়েছে একটি চেয়ার ও দু’টি বেঞ্চ। এই টেবিল-চেয়ার সাজিয়ে ‘টিকিট বিক্রি’ করছে ৭-৮ জনের একটি দল। এই দলটি সক্রিয় থাকে ভোর ৫টা পর্যন্ত।

তাদের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, যখন টার্মিনালের সব ধরনের দূরপাল্লার বাস গাবতলী থেকে চলাচল বন্ধ হয়, সেসময় থেকে শুরু হয় এই কার্যক্রম। কাউন্টার বন্ধ থাকে বলে মধ্যরাতের যাত্রীদের গাড়িতে তুলে দিতেই তারা রাত জেগে এই ‘সেবা’ কার্যক্রম চালিয়ে থাকে।

টার্মিনালের সব পরিবহনের কাউন্টার বন্ধ থাকার পরও কীভাবে যাত্রীদের গাড়িতে তুলে দেন? এমন প্রশ্নের জবাবে অস্থায়ী টিকেট কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা দেলোয়ার হোসেন দিলু বাংলানিউজকে বলেন, অনেক বাস নারায়ণগঞ্জসহ ওই অঞ্চল থেকে ‍গাবতলী হয়ে যায়। বাস মালিক সমিতির অনুমতি নিয়েই গভীর রাতে যাত্রীদের সেবা দেওয়ার জন্য আমাদের এই কার্যক্রম।
তিনি বলেন, রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, নওগাঁ, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, লালমনিরহাটসহ উত্তরাঞ্চলের সব রুটের শ্যামলী, ঈগল, হানিফ, সোহাগ, মামুন স্পেশাল ও মিতু পরিবহনের সিট ফাঁকা থাকলে যাত্রী তুলে দেই।

এ বিষয়ে আলামিন নামের আরেকজন জানান, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থান থেকে একাধিক পরিবহন গাবতলী হয়ে মধ্যরাতে উত্তরাঞ্চলে যায়। আর অনেক সময় এসব গাড়ির সিট ফাঁকা থাকে। তখন যাত্রীদের সেসব গাড়িতে তুলে দেই।

আলামিনের কথা, টাকার জন্য আমরা এই কাজ করি না। যাত্রীদের সেবার জন্য রাত জেগে কাজ করি। কয় টাকা আসে এখান থেকে সেটা বড় কথা নয়, কতো মানুষের উপকার হচ্ছে সেটাই বড় কথা।

তিনি জানান, প্রতিযাত্রীর জন্য পরিবহন থেকে ২০-৫০ টাকা বকশিস পান তারা। তবে যাত্রীর কাছ থেকে পরিবহনের নির্ধারিত ভাড়াই নেন।

দিলু-আলামিনরা এমন দাবি করলেও যাত্রীদের অভিযোগ ভিন্ন। তারা বলছেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রেখে কেবলই যাত্রীদের হয়রানি করছে চক্রটি। উপরন্তু যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেয়।

ইমরান নামে বগুড়ার এক যাত্রী জানান, রাত ১২টার দিকে তিনি গাবতলী এসেছেন। লোকাল গাড়ি চলাচল করছে। তিনি সেসব গাড়িতে ওঠেন না। তখন এই চক্রের সদস্যরা তাকে ভালো গাড়িতে তুলে দেওয়া বলে আশ্বাস দেয়। টিকিট কেটে নিলেও রাত ২টা পর্যন্তও কোনো খবর নেই বাসের।

ইমরান বলেন, এরা আসলে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে। শুধু শুধু যাত্রীদের বসিয়ে রেখে কস্ট দিচ্ছে।

ইমরানের বক্তব্য অনুযায়ীই দেখা যায়, অশীতিপর বৃদ্ধা-নারী-শিশুসহ আরও জনাবিশেক যাত্রীকে এভাবে অপেক্ষায় বসিয়ে রেখেছে চক্রটি। কোনো পরিবহন এলেও সেসব সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছে।

যাত্রীরা জানান, কাউন্টার নির্ধারিত ভাড়া রাখার কথা বলে যাত্রীপ্রতি ৫০-১০০ টাকা বেশি নিচ্ছে চক্রটি। অর্থাৎ তারা পরিবহন থেকেও ‘বখশিস’ নিচ্ছে, ‘বখশিস’ নিচ্ছে যাত্রীর কাছ থেকেও।