ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র মহিউদ্দিন রনির বাবা মো. সেলিম হাওলাদারের (৫৪) ওপর হামলা চালিয়েছে যুবলীগ নেতা পরিচয় দেওয়া তিন ব্যক্তি। বুধবার বিকালে রাজধানীর পূর্ব রামপুরা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। হামলায় সেলিম হাওলাদার মারাÍক আহত হন। চাঁদাবাজিতে বাধা দেওয়ায় তার ওপর হামলা হয়। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রামপুরা থানায় মামলা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি মো. কবির সিকদারকে গ্রেফতার করে রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। তবে আদালত আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
শনিবার বিকালে মহিউদ্দিন রনি যুগান্তরকে বলেন, ‘আমার বাবা রামপুরার একটি প্রজেক্টে সিকিউরিটি গার্ডের দায়িত্বে আছেন। সেখান কিছু সন্ত্রাসী এসে ভবন নির্মাণের রড জোরপূর্বক নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। বাধা দিলে তারা আমার বাবাকে বেধড়ক মারধর করে। নিজেদের স্থানীয় যুবলীগ নেতা পরিচয় দেয়। এ ঘটনায় মামলার পর একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু অন্যরা পলাতক। আসামিরা এখন নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এই চক্রের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির আরও অভিযোগ রয়েছে।’
উল্লেখ্য, মহিউদ্দিন রনি রেলে টিকিট নিয়ে দুর্নীতি, নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিসহ বেশ কয়েকটি জনস্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আলোচনায় আসেন। এবার অন্যায়ের প্রতিবাদ করে তার বাবা হামলার শিকার হলেন।
Advertisement
জানতে চাইলে রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি অমানবিক। হামলাকারীরা ওই প্রজেক্ট থেকে কিছু রড সরিয়ে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু রনির বাবা সেটি করতে দেননি। তিনি রডগুলো একত্র করে গুছিয়ে রেখেছিলেন। তিনি তার দায়িত্ব সঠিকভাবেই পালন করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তার ওপর হামলা চালানো হয়। এ মামলার এক নম্বর আসামি কবির সিকদারকে (৪০) ঘটনার দিনই গ্রেফতার করা হয়েছে। সিরাজ ও অজ্ঞাতনামা আরও এক আসামিকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সেদিন যা হয়েছিল : হামলার শিকার সেলিম হাওলাদার বলেন, নির্মাণ কাজের পর অবশিষ্ট রড আমাদের প্রজেক্টের এক পাশে ছিল। পরে একটি গোডাউন তৈরি করে রডগুলো সেখানে রাখি। ঘটনার দিন বিকাল পৌনে ৫টার দিকে আসামিরা ঘটনাস্থলে আসে। আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। বলে, রডগুলো কই? তখন আমি তাদের বলি, আপনারা গালিগালাজ করছেন কেনো? রড আছে। এ কথা বলতেই কবির সিকদার আমাকে কিলঘুসি মারে। এতে আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়। আমি চিৎকার করলে সহকর্মী আনোয়ার হোসেন এসে আমাকে রুমে ঢুকিয়ে দেয়। তখন কবির পাশে পড়ে থাকা লোহার রডের এঙ্গেল দিয়ে দরজা ভেঙে রুমে প্রবেশ করে। এরপর আমার ডান হাত ও ডান পায়ে আঘাত করে গুরুতর জখম করে। সিরাজও একই কাজ করতে থাকে। এরই মধ্যে কবির রান্না ঘর থেকে বঁটি এনে হত্যার উদ্দেশ্যে আমাকে আঘাতের চেষ্টা করে। সহকর্মী আনোয়ার হোসেন ঠেকানোর কারণে প্রাণে বেঁচে যাই। কবির তখন আনোয়ারকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। এ সময় পাশে পড়ে থাকা টিনে তার বাম পাশের বৃদ্ধাঙ্গুল কেটে যায়।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, ঘটনাটি আমার ছেলে মহিউদ্দিন রনিকে মোবাইল ফোনে জানাই। সে বিষয়টি রামপুরা থানায় অবগত করে। খবর পেয়ে থানা থেকে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে আসে। তখন আসামিরা আমাদের প্রাণনাশসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়ে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় কবিরকে পুলিশ আটক করে এবং অন্যরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। এরপর আমার ছেলে ঘটনাস্থলে এসে আমাকে ও সহকর্মী আনোয়ারকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। চিকিৎসা শেষে থানায় গিয়ে মামলা করি।