চট্টগ্রাম: পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম ওরফে মিতু আক্তার হত্যার ‘অস্ত্রদাতা’ এহতেশামুল হক ওরফে হানিফুল হক ভোলা ওরফে ভোলাইয়াকে (৪১) ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন চট্টগ্রামের একটি আদালত। ভোলার সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া মনির হোসেন ওরফে মনিরকে (২৮) অস্ত্র মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (২৮ জুন) মিতু হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ভোলাকে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম নাজমুল হাসান চৌধুরীর আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। ওই মামলায় ভোলাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমাণ্ডের আবেদন জানানো হয়।
এদিকে মনিরকে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম নওরিন আক্তার কাঁকনের আদালতে হাজির করা হলে তাকেও কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়। অস্ত্র মামলায় ভোলা ও মনিরকে ১০ দিনের রিমাণ্ডে নেয়ার আবেদন জানায় পুলিশ। তবে রিমাণ্ড শুনানির সময় নির্ধারণ করেনি আদালত।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (প্রসিকিউশন) নির্মলেন্দু বিকাশ চক্রবর্তী বাংলানিউজকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
এর আগে সোমবার (২৭ জুন) রাত তিনটার দিকে নগরীর বাকলিয়া থানার রাজাখালী থেকে ভোলা ও মনিরকে গ্রেফতার করা হয়।
এসময় তাদের কাছ থেকে মিতু হত্যায় ‘ব্যবহৃত’ একটি দেশিয় তৈরি পয়েন্ট থার্টি টু বোর রিভলবার, এর ৬ রাউন্ড গুলি ও একটি সেভেন পয়েন্ট সিক্স ফাইভ বোর বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়।
অস্ত্রগুলো আসলেই মিতু হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়েছিল কিনা সেটা জানতে সিআইডির ব্যালাস্টিক প্রতিবেদনের জন্য পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন দেবদাস ভট্টাচার্য।
ভোলা রাজাখালী এলাকার মৃত সিরাজুল হকের ছেলে। তার বিরুদ্ধে ১৬টি মামলা রয়েছে।
গ্রেফতার অপরজন হলেন মনির হোসেন ওরফে মনির (২৮)। মনির কুমিল্লার মুরাদনগরের জাফরনগর গ্রামের মৃত ওয়াহিদ মিয়ার ছেলে। নগরীতে বাকলিয়ার রাজাখালী এলাকার কবির সওদাগর কলোনির পাশে এরশাদের কলোনিতে একটি ভাড়া বাসায় থাকতো মনির।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানান, মিতু হত্যায় অংশ নেয়া ওয়াসিম ও আনোয়ার আদালতে জবানবন্দিতে জানিয়েছে ভোলা তাদের খুনের জন্য অস্ত্র সরবরাহ করেছে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভোলাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ভোলা জানায়, মিতু হত্যায় সে অস্ত্র সরবরাহ করলেও হত্যার সময় সে ঘটনাস্থলে ছিল না। হত্যাকাণ্ডের পর অস্ত্রগুলো ফেরত নেয় সে। পরে অস্ত্রগুলো মনিরের কাছে গচ্ছিত রাখে।
ভোলার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মনিরের বাসায় অভিযান চালিয়ে মিতু হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা হয়। মনিরকেও গ্রেফতার করা হয়।
তিনি বলেন, অস্ত্রদাতা হিসেবে ভোলাকে মিতু হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। কার নির্দেশে হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়েছে এ ব্যাপারে জানতে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বাকলিয়া থানায় অস্ত্র আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
কিন্তু মিতু হত্যার সঙ্গে মনিরের কোন সংশ্লিষ্টতা না থাকায় তাকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়নি। তবে তার নামেও বাকলিয়া থানায় অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের হয়েছে।
এর আগে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া ওয়াসিম ওরফে মোতালেব ও আনোয়ার নামে আরও দুজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। রোববার দুজনই আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে মিতু হত্যায় তাদের দায় স্বীকার করেছে।
গত ৫ জুন সকালে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় নগরীর ও আর নিজাম রোডে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত ও গুলিতে নিহত হন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনায় বাবুল আক্তার নিজে বাদি হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই সিএমপির গোয়েন্দা ইউনিটের সঙ্গে তদন্তে নামে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন এবং কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। আইজির নির্দেশে ঘটনা তদন্তে পাঁচটি সমন্বিত টিমও গঠন করা হয়।
রোববার ওয়াসিম ও আনোয়ারকে গ্রেফতারের আগে শুক্রবার রাতে বাবুল আক্তারকে রাজধানীতে তার শ্বশুরের বাসা থেকে তুলে নিয়ে টানা ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
মামলার বাদিকে আসামির মতো তুলে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করায় হত্যাকাণ্ডের কারণ নিয়ে দেশজুড়ে কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে। গত দুই দিনে হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা বাবুল আক্তার নিজেই ছিলেন, এমন ইঙ্গিত কিংবা সন্দেহ প্রকাশ করে খবর প্রকাশ করেছে দেশের নানা সংবাদমাধ্যম।
ঘটনার মোটিভ কি তা জানতে, জবানবন্দিতে উল্লেখিত মুছাকে পেতে হবে বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ।