ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,(টিভি),রাজশাহী প্রতিনিধি, শুক্রবার, ০৯ আগস্ট ২০২৪, ২৫ শ্রাবণ ১৪৩১ : আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের বাড়ি রাজশাহী নগরীর উপশহরে। গত সোমবার (৫ আগস্ট) বিকাল থেকে সিটি মেয়র লিটনের বাড়িতে লুটতরাজ শুরু হয়। বাড়ির সব আসবাবপত্র, দরজা-জানালা থেকে শুরু করে পানির পাইপ পর্যন্ত তুলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু লিটনের বাড়ির ঠিক পেছনের শাহমখদুম থানা এলাকা একেবারেই সুরক্ষিত রয়েছে।
Advertisement
শাহমখদুম থানা এলাকায় রয়েছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) প্রধান কার্যালয়, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) অফিস, নির্মাণাধীন ওয়াসা ভবন এবং পাশেই চন্দ্রিমা থানা এলাকায় আছে পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস। এসব সরকারি দপ্তরে নাশকতা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেনি।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, স্থানীয় যুবদলের নেতাকর্মীরা এলাকাটিকে সুরক্ষিত রেখেছেন। শাহমখদুম থানা যুবদলের সদস্য রাসেল মোল্লা ও চন্দ্রিমা থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আরিফুজ্জামান এলাকাটিকে সুরক্ষিত রাখতে নেতাকর্মীদের নিয়ে দিনরাত পাহারা দিয়ে যাচ্ছেন। আশপাশের কোনো এলাকা থেকে মালামাল লুট করে এ এলাকা দিয়ে যেতে দেখলেও তারা আটকে দিচ্ছেন। তারপর সেই মালামাল উদ্ধার করে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
শাহমখদুম থানার পবাপাড়া, পবা নতুনপাড়া ও শিল্পীপাড়া মহল্লায় অন্তত ২৫০ হিন্দু পরিবারের বাস। এলাকায় রয়েছে চতুর্বেদী সার্বজনীন মন্দির। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এ মানুষগুলোর বাড়ি ও মন্দিরে যেন হামলা না হয়, তার জন্যও মাইকিং করা হয়েছে। মহল্লায় মহল্লায় যুবদলের কর্মীরা পাহারা দিয়েছেন। ফলে এলাকার কারও বাড়িতে হামলা হয়নি।
Advertisement
এলাকার বাসিন্দা সুষ্মিতা রানী বলেন, ‘গত সোমবার সকাল থেকে দেখছি এলাকায় ছেলে-পিলে পাহারা বসিয়েছে। কোনো হিন্দু মানুষের বাড়িতে যেন হামলা না হয়, তার জন্য তারা মাইকিং করছে। এর ফলে আমরা কিছুটা নিশ্চিন্তে আছি। সব এলাকায় যেন এ রকম সম্প্রীতি থাকে।’
নগরীর শালবাগান এলাকায় একটি বহুতল মার্কেট নির্মাণ করছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। বুধবার (৭ আগস্ট) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে এখান থেকে প্রায় ৭০০ কেজি রড লুট করে নিয়ে যাচ্ছিল ১২-১৩ জন যুবক। ভ্যানে করে রড নিয়ে শাহমখদুম থানার বিমানচত্বর এলাকায় গেলে এ যুবকদের আটকে দেন রাসেল ও আরিফুজ্জামান। এ রড উদ্ধার করে বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দুপুরে মার্কেট নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা প্রহরীর কাছে ফেরত দেওয়া হয়।
এলাকার নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে যুবদল নেতা মো. আরিফুজ্জামান বলেন, ‘কিছু টোকাই ও বখাটেরা আওয়ামী লীগ নেতাদের ঘরবাড়ি ও বিভিন্ন দপ্তরে লুটপাট করছে। এতে আমরা যারা আওয়ামী লীগবিরোধী তাদের বদনাম হচ্ছে। এ জন্য আমরা সতর্ক আছি যেন কেউ লুটপাট করতে না পারে। রাষ্ট্রের সম্পদ মানে জনগণের সম্পদ। এগুলো আমাদেরই রক্ষা করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা পাড়া-মহল্লায় পাহারা বসিয়েছি। এলাকায় কেউ সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর হামলা করতে পারবে না। আমার মনে হয়, প্রতিটি এলাকায় এখন আমাদের এভাবে কাজ করা উচিত।’
Advertisement
গত সোমবার সরকার পতনের পর রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চলেছে। আক্রান্ত হয়েছে নগর ভবন, হাইটেক পার্ক, চিড়িয়াখানা, সিনেপ্লেক্স, নগর পুলিশের সদর দপ্তরসহ বিভিন্ন স্থাপনা। কিন্তু একেবারেই সুরক্ষিত রয়েছে নগরীর শাহমখদুম থানা এলাকা। নগরীর বিভিন্ন থানায় এখন যেমন আগুনের ক্ষতচিহ্ন, সেখানে ব্যতিক্রম শাহমখদুম থানা। এটি এখনও সুরক্ষিত।