ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,(টিভি),বিশেষ প্রতিনিধি,সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১ : ‘একসময় প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্কে বিচ্ছেদ হলে নিজের মতো জীবনযাপন করছিলাম। নতুন সুখের আশায় বিয়ে করে ঘরও বাঁধি। কিন্তু সাবেক প্রেমিক যে এত বড় সর্বনাশ করবে তা ভাবতেও পারিনি। প্রেম ছিল, তাই বলে দলবল নিয়ে ধর্ষণ, এটা ছিল চিন্তার বাইরে।’ গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর খিলক্ষেতের বনরূপা এলাকায় স্বামীর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হওয়া ওই নারী সাংবাদিকদের এভাবেই তার দুঃখের কথা বলছিলেন। ঘটনার পর থেকে মানসিক যন্ত্রণায় দিন কাটছে তার।
Advertisement
এই ধর্ষণকাণ্ডের মূলহোতা আবুল কাশেম সুমন ভুক্তভোগী ওই নারীকে বিয়ে করতে চেয়েছিল। কিন্তু ওই নারী অন্য আরেকজনকে বিয়ে করায় ক্ষোভ থেকে তাকে পাশবিক নির্যাতন এবং সংঘবদ্ধ ধর্ষণের নেতৃত্ব দেয় সে। এ ঘটনায় আবুল কাশেমসহ সাত আসামি সবাইকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জড়িতরা সবাই বখাটে এবং মাদকাসক্ত। অন্য আসামিরা হলো পার্থ বিশ্বাস (২০), নূর মোহাম্মদ (২০), হাসিবুল হাসান (১৯), রবিন হোসেন (২৮), মীর আজিজুল ইসলাম (২৩) ও মেহেদী হাসান (২২)।
মামলার বাদী ভুক্তভোগী নারী জানান, সাত আসামির মধ্যে কাশেম ও কম বয়সী তিনটি ছেলে তাকে ধর্ষণ করেছে। বাকিরা তাদের সহায়তা করেছে। আর সবাই তাকে মারধর করেছে। তিনি জানান, ২০১৯ সালে আবুল কাশেমের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। আনসার বাহিনীতে কাজ করার সুবাদে তিনি গাজীপুরে গেলে কাশেমও সেখানে যায়। একটি ভাড়া করা কক্ষে স্বামী-স্ত্রীর মতো বসবাস করতেন। কিন্তু কাশেমকে বিয়ে করতে বললে রাজি হয়নি। মাদকাসক্ত হওয়ার কারণে একসময় কাশেমের সঙ্গে বসবাস করা কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। টাকার জন্য মারধরও করত কাশেম।
Advertisement
ওই নারী আরও জানান, দুই বছরের সম্পর্ক শেষ করে ২০২১ সালে তিনি গ্রামের বাড়িতে চলে যান। তবে কাশেম তার পিছু ছাড়েনি। বিভিন্ন সময় ফোন দিয়ে তার সঙ্গে বাজে ব্যবহার করত এবং টাকা চাইত। একসময় নিজের সুখের কথা চিন্তা করে গত ১৮ জুন তিনি অন্য একজনকে বিয়ে করেন। এরপর থেকেই তার ওপর প্রতিশোধ নিতে সুযোগ খুঁজছিল আবুল কাশেম।
ওই নারী জানান, বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে সাভার বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছিলেন। কিন্তু আবুল কাশেম সবসময় নজরদারি রাখতেন তার ওপর। গত শুক্রবার স্বামীকে নিয়ে সাভার থেকে রাজধানীর এয়ারপোর্ট এলাকায় ঘুরতে এসেছিলেন। ঘোরাঘুরি শেষে খিলক্ষেতের বনরূপা এলাকায় বাসের জন্য যাত্রী ছাউনিতে অপেক্ষা করছিলেন তারা। সেখানে সড়ক থেকে স্বামীসহ তাকে তুলে নেয় আবুল কাশেম ও তার সহযোগীরা। এরপর রাতের অন্ধকারে তাদের ওই এলাকার ঝোপের মধ্যে নিয়ে স্বামীকে মারধরের পর মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর তার ওপর পাশবিকতা চালায় সাতজন।
Advertisement
ভুক্তভোগী নারী বলেন, ওই রাতে একাধিকবার তাকে নিয়ে স্থান পরিবর্তন করা হয়। গভীর রাতে তার গলা টিপে ধরে কাশেম। এরপর অন্য সহযোগীরা তাকে নির্যাতন চালায় এবং ধর্ষণ করে। একসময় টাকা দেওয়ার কথা বললে ভোরের দিকে তাকে ছেড়ে দেয় কাশেম। তিনি ওই সময় হাঁটতে হাঁটতে খিলক্ষেতে একটি সেতুর কাছে এসে এক নিরাপত্তাকর্মীর মোবাইল ফোন থেকে স্বামীকে ফোন করেন। তখন স্বামী ও পুলিশ সদস্যরা এসে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান। ভুক্তভোগী ওই নারীর একটাই দাবি, কাশেম ও তার সহযোগীরা যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায়।
প্রেম ছিল, তাই বলে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ!’