বাড়ি ফিরে নিকটজনের সঙ্গে মিলে ঈদ উদযাপনের সুখ ও আনন্দের কাছে হার মেনেছে ট্রেনের টিকেটের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্লাটফর্মে লাইনে দাঁড়ানোর কষ্ট।
ঈদ সামনে রেখে রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীদের জন্য শুক্রবার কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে ৩ জুলাইয়ের টিকেট দেওয়া হচ্ছে।
সকালে স্টেশনে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কাউন্টারগুলোর সামনে প্লাটফর্মে সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে শত শত মানুষ।
অন্য দিনের তুলনায় শুক্রবার উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের ট্রেনের টিকেটের জন্য নারী-পুরুষের ব্যাপক ভিড় দেখা যায়। কেউ কেউ ১৮ ঘণ্টার ধরে অপেক্ষার পর পেয়েছেন কাঙ্ক্ষিত টিকেট।
ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী গোলাম মোস্তফা আলমগীর ৩ জুলাই রাজশাহী যাওয়ার টিকেট নিতে এসেছেন।
রাজশাহীর শীতাতপ শ্রেণির টিকেট নিতে এসেছিলেন রাজধানীর তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থী জহিরুল ইসলাম। ৯ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করেও টিকেট পাননি তিনি।
সকাল ৯টার দিকে তিনি বলেন, “সকাল ৮টায় টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে। এখন বলছে টিকেট নাই। টিকেট গেল কোথায়?”
ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় ভতির্র কোচিং করছেন সোলায়মান হোসেন। তিনি পাবনার ইশ্বরদীর টিকেট না পেয়ে উল্লারপাড়ার টিকেট নিয়েছে।
আবার টিকেট পাবেন কি না তা নিয়ে দোলাচলে থাকলেও কেউ কেউ ভোর থেকে অপেক্ষা করছেন।
রাজধানীর মুগদার একটি স্কুলের শিক্ষক আ. করিম পাবনার চাটমোহরের টিকেটের জন্য এসেছেন; লাইনে দাঁড়িয়েছেন ভোর ৪টায়।
তিনি বললেন, “আমার টোকেন নম্বর ৬৪।পরিস্থিতি যা দেখছি তাতে শেষ পর্যন্ত টিকেট পাব কিনা সন্দেহ।”
একই ভাব প্রকাশ পেল জামালপুরের টিকেট প্রত্যাশী শামীমা জেসমিন মিরার কণ্ঠে। ধানমণ্ডির এই গৃহিনী ও এসেছেন ভোর ৪টায়।
টিকেটের জন্য এই কষ্টকে টিকেট পাওয়ার আনন্দের চেয়ে বড় করে দেখছেন না: “তারপরও যদি টিকেট পাওয়া যায় সেই আশায় আছি।”
মানিকনগরের গৃহিনী শাহনাজ সুলতানা যাবেন দিনাজপুরে, লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন ভোর ৪টায়।
“অনেক কষ্ট তারপরও নিজের বাড়ি গিয়ে ঈদ করব। এর আনন্দই আলাদা।”
উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল ছাড়া অন্য গন্তব্যের টিকেটের কাউন্টারগুলোতে শুক্রবার তেমন ভিড়ে দেখা যায়নি।
কিশোরগঞ্জে যাওয়ার জন্য এগারসিন্দুর এক্সপ্রেসের টিকেট নিতে সকাল ৮টায় এসেছেন দিদাররুল আলম।তিনি বলেন, “তেমন একটা চাপ দেখা যাচ্ছে না। আশা করি টিকেট পাব।”
টিকেটপ্রত্যাশীদের পক্ষ থেকে ছোটখাট অভিযোগ থাকলেও বড় ধরনের অনিয়ম বা কালোবাজারির ঘটনা ঘটছে না বলে দাবি করেন জিআরপি থানার ওসি আব্দুল মজিদ।
তিনি বলেন, “টিকেট কালোবাজারির কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে কালোবাজারি সন্দেহে ৮/১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।”
ঈদের সময় সড়কে যানজটের ভোগান্তি এড়িয়ে স্বচ্ছন্দ্যময় যাত্রায় অনেকে ট্রেনকেই বেছে নেন। তবে টিকেট না পাওয়া নিয়ে অভিযোগ থাকে বরাবরই।
কমলাপুর স্টেশনের ব্যবস্থাপক সিতাংশু চক্রবর্ত্তী জানান, এবার ঈদের সময়টাতে প্রতিদিন ৩৩টি ট্রেনের ১৮ হাজার টিকেট বিক্রি হবে।
বিভিন্ন ট্রেনে অতিরিক্ত ৮৪টি বগি সংযোজন করা হবে। এছাড়া ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-পার্বতীপুর ও ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রুটে তিন জোড়া অতিরিক্ত ট্রেন চলবে।
কমলাপুর স্টেশনে কাউন্টার সংখ্যাও আগের চেয়ে তিনটি বাড়িয়ে ২৩টি করা হয়েছে। নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য রয়েছে আলাদা একটির কাউন্টার।
স্টেশন ব্যবস্থাপক জানান, এবার ৬৫ শতাংশ টিকেট উন্মুক্ত বিক্রির জন্য রাখা আছে। মোবাইল ও অনলাইনে বিক্রির জন্য টিকেট রয়েছে ২৫ শতাংশ।
এছাড়া ভিআইপিদের জন্য ৫ শতাংশ এবং রেলওয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ৫ শতাংশ টিকেট রাখা আছে বলে জানান তিনি।
ঈদ উপলক্ষে ১ জুলাই থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত সাপ্তাহিক বন্ধের দিনও আন্তঃনগর ট্রেন চালু থাকবে বলে রেলওয়ে জানিয়েছে।
স্টেশনে টিকিট বিক্রির শৃঙ্খলা রক্ষায় রেলের নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ-র্যাবও রয়েছে।
* ২৩ জুন | ২ জুলাইয়ের টিকেট |
* ২৪ জুন | ৩ জুলাইয়ের টিকেট |
* ২৬ জুন | ৪ জুলাইয়ের টিকেট |
* ২৭ জুন | ৫ জুলাইয়ের টিকেট |
* প্রতিদিন বিক্রি | ১৮ হাজার টিকেট |
* ফিরতি টিকেট | ৪ জুলাই থেকে |