বাঁশখালীতে ভুয়া পরিচালক সেজে মাদরাসার নামে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,(টিভি),ইসলাম প্রতিনিধি,বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১‘নবীর শিক্ষা করোনা ভিক্ষা’ এ বাণীটি কিতাবে/বই-পুস্তকে থাকলেও নেই আমাদের আমলে। প্রতিদিন হুজুর ছদ্মবেশে, মাদরাসার ছাত্র সেজে মসজিদ-মাদরাসার ভূয়া রশিদ বানিয়ে নানা ফন্দিফিকির করে চাঁদা আদায় করতে তৎপর বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট। এরকম ভূয়া রসিদ নিয়ে চাঁদা আদায় করার বিষয়টি কয়েকবছর থেকে মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়ে গেছে। অনেক স্থানেই সারাবছর দেখা যায় বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, লিল্লাহবোডিং ও বার্ষিকসভা এর নামে চাঁদা আদায় করতে। সারা বছর এদের অল্প পরিসরে দেখা গেলেও বছরের শুরুতে এদের আনাগোনা বেড়ে যায় কয়েকগুন। আপনারা খেয়াল করবেন এরা বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানার নাম করে রশিদ দিয়ে টাকা আদায় করে। বাঁশখালী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহবোডিং এর রসিদ কম দেখা গেলেও দূরদুরান্তের মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহবোডিং এর নামে রশিদ দেখা যায় প্রায় সময়। এদের বেশীরভাগই হলো নিজেদের ছাপানো ভুয়া রশিদ। এদের র‍য়েছে এলাকা বা মহল্লা ভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপ। তারা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে চাঁদা আদায় করে।

Advertisement

উপজেলার শিলকুপ ইউনিয়নের মনকিচর লক্ষিপুর পাড়ায় মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারী) গ্রামিণ বাসা-বাড়ীতে মেয়েদেরকে নানা অভাব অভিযোগের কথা বলে, মাদরাসার জন্য কোরআন ক্রয় করা কথা বলে, এতিমখানার কথা বলে বাসার সামনে পাঞ্জাবি পাজামা ও টুপি পরিহিত দুইজন বয়ষ্ক লোক এক মহিলার সাথে কথা বলতে দেখে সন্দেহ হলে স্থানীয় লোকজন তাদেরকে ঘিরে রাখে। এগিয়ে গিয়ে তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তাদের একজন জাকের হোসেন চকোরিয়া উপজেলার পেকুয়াস্থ শাহ্ মজিদিয়া ইসলামিয়া নুরুল উলুম তা’লিমুল কোরআন বালক/বালিকা  মাদ্রাসা হেফজখানা ও এতিমখানার সহকারী পরিচালক কখনো পরিচালক বলে পরিচয় দেয়। এভাবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে টাকা তুলছেন এই প্রশ্ন রাখলে তারা সঠিক উত্তর না দিয়ে উল্টাপাল্টা বোঝাতে চেষ্টা করে। মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহবোডিং’র নামে চাঁদা আদায়ের প্রশাসনের কোন অনুমতি আছে কিনা জিজ্ঞাসা করলে তারা মাদরাসার নামে প্যাড বানিয়ে ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ভূয়া প্রত্যয়ণপত্র বানিয়ে লেমেনেটিং করা কাগজ ও বেশ কয়েকটি রশিদ বই দেখা যায়। ভূয়া লিফলেট বানিয়ে ওই মাদরাসার সহকারি-পরিচালক, খামের চিঠিতে পরিচালক লেখা দেখা যায়। একই মাদরাসার নামে একটি লিফলেটে ভিন্ন একজনকে ওই মাদরাসার পরিচালক ও মোবাইল নং পাওয়া যায়। একই মাদরাসার পরিচালক  মাও. মু. জয়নাল আবেদিন বলেন- ‘লোকটি প্রতারক, ভূয়া পরিচালক সেজেছে, আমি মাদরাসার নামে কোন প্যাড ও চেয়ারম্যানের প্রত্যায়ণপত্র দিই নাই। লোকটি আমার মাদরাসার নাম ভাঙ্গিয়ে পরিচালক দাবী করলেও মুলত সে প্রতারক।’

 

জানতে চাইলে জাকের হোসেন নামের ওই প্রতারক বলেন- ‘৮ থেকে ১০ বছর ধরে এ কাজে জড়িত। আমি কোন পড়ালেখা জানিনা। বিভিন্ন মাদরাসার সাথে কন্টাক্ট করে প্রতিদিন চাঁদা তুলি। এতে প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১২শত টাকা পাই। বিনিময়ে

৪-৫শত টাকা নিজের পারিশ্রমিক নিই।

 

ওই সময় সন্দেহ আরো ঘনিভূত হলে বাঁশখালী থানার ওসি মু. রেজাউল করিম মজুমদারকে ফোন করলে তিনি বলেন, ‘বাসা বাড়িতে কোন বিজ্ঞাপন করা, কিছু বিক্রি করতে আসা বা কোন কিছুর জন্য চাঁদা আদায় করতে হলে ইউএনও সাহেব বা থানার অনুমতি প্রয়োজন হয় এবং তিনি আরো জানান এই ভাবে অনেকেই এসে কোন বাড়িতে লোক না থাকলে বা মহিলা থাকলে ডাকাতি বা ধর্ষন করার সম্ভবনা থাকে অনেক বেশী তাই পরিচিত লোক না হলে বাড়ির দরজা না খোলার জন্য তিনি সবার প্রতি অনুরোধ করেন।’

Advertisement

এই দুই জনের কাছে মসজিদ, এতিমখানার নামে নিজেদের তৈরি ভুয়া রশিদ পাওয়া যায়। এমন কি তাদের রশিদের নাম্বারে কল করলে বন্ধ পাওয়া যায়। এদের সাথে কিছু ভূয়া চক্র বিশেষভাবে তৎপর থাকে। তাই সকলের কাছে হাত জোড় করে অনুরুধ করলে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে এক ঈমাম সাহেব বলেন- ‘দেশের প্রায় সকল মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহবোডিং গুলো মানুষের অনুদানের উপর পরিচালিত হয়। তাই অনেকেই বিভিন্ন জায়গায় অর্থ সংগ্রহ করতে যায়। আর দ্বীনদার মুসলমান ভাই আল্লাহকে সন্তুষ্টি ও আল্লাহ রাজিখুশি ও আখেরাতের জন্য কিছু সওয়াব কামায় করতে প্রচুর দান করে থাকেন। আবার অনেকে তাদের বাবা মা ভাই বোন আত্বীয় স্বজনের নামেও দান করে থাকেন, আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনেকে ধর্মকে পুঁজি করে টাকা উপার্জনের সহজ রাস্তা বেছে নিয়েছে এই ভাবে। তিনি বলেন- ‘আপনারা অবশ্যই দান করবেন তবে সেটা নিজ একাকার মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহবোডিং’এ, নিজের গরিব আত্মীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশীদের। তবে নিজ এলাকা বাদেও দান করতে কোন সমস্যা নেই কিন্তু সেটা যেন সঠিক হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।’

 

সমাজের সচেতন মহল মনে করেন, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দান করুন ঠিক আছে তবে সেটা অবশ্যই জেনে বুঝে করবেন। এই ধরনের ভ্রাম্যমান ভাড়া করা লোকদের হাতে দান করতে গিয়ে নিজের জীবন ও জান মালের ক্ষতি করবেন না।

Advertisement

এলাকাবাসি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করে বলেন, এই ধরনের বিষয়ে প্রশাসনকে আরো কঠোর ভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহবোডিং এর নামে টাকা আদায় করার একটি নীতিমালা তৈরী করতে হবে।