ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,(টিভি),বিশেষ প্রতিনিধি,বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১ : অতি লোভে তাঁতি নষ্ট- এই প্রবাদটি নিজের ওপর সফলভাবে প্রয়োগ করেছেন সাদিক অ্যাগ্রোর কর্ণধার আলোচিত শাহ ইমরান হোসাইন। কোরবানির ঈদে উঁচু দরে পশু বিক্রি করতে প্রচার-প্রচারণার যে বিশাল আয়োজন করেছিলেন, তাই এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তার জন্য।
‘উচ্চবংশীয়’ একটি বিদেশি চোরাই গরুর দাম কোটি টাকা হাঁকিয়ে সম্প্রতি ব্যাপক আলোচনায় আসেন বাংলাদেশের কাউবয় হিসেবে পরিচিত ইমরান। তার দুঃসাহস দেখে অনেকেই তখন বলেন, চোরের মার বড় গলা। তারপরও থামেননি তিনি। আবার ব্যাপক আলোচনায় আসেন কোরবানির ঈদের ঠিক আগেই। এবার তিনি জড়িয়ে পড়েন উচ্চমূল্যের আরেকটি ‘চোরাই’ ছাগলকাণ্ডে।
Advertisement
আগে বহুবার পার পেয়ে গেলেও এবার কিন্তু রেহাই মিলছে না আলোচিত এই খামারির। ইমরানের জাল-জালিয়াতি ও অবৈধ সম্পদের খোঁজে অভিযানে নেমেছে দুদক। একে একে থলে থেকে বেরিয়ে আসছে অসংখ্য বেড়াল। সাদা চোখে ইমরানকে খামারি মনে হলেও, তলে তলে তিনি আন্তঃদেশীয় গরু পাচার চক্রের বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর, এই সিন্ডিকেটই দেশের ৭৫ হাজার কোটি টাকার পশু ব্যবসার বিরাট অংশের নিয়ন্ত্রক।
সিন্ডিকেটে ক্ষমতাধর কয়েকজন রাজনীতিবিদ, আমলা ও সরকারি কর্মকর্তা ইমরানের সঙ্গী হয়েছেন বলেও অভিযোগ। বলা হচ্ছে, দুর্নীতির মাধ্যমে তাদের বানানো অঢেল কালো টাকার গন্তব্য ছিল সাদিক অ্যাগ্রো। সারাদেশে বিস্তৃতভাবে ইমরান গড়ে তুলেছেন অসংখ্য খামার। অনেকটা লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা সেসব খামারেই ঢুকতো গাদা গাদা কালো টাকা। এরপর সাদা হয়ে তা বেরিয়ে যেত। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে ইমরানের গড়ে তোলা একেকটা খামার কি কালো টাকা সাদা বানানোর মেশিন?
দুর্নীতি ও অবৈধ উপায়ে বিপুল সম্পদ বানানোয় অভিযুক্ত পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদও সাদিক অ্যাগ্রোতে বিনিয়োগ করেছেন বলে খবর বেরিয়েছে। শোনা যাচ্ছে আরও কয়েকজনের নাম। তবে এখানেই থামছে না ইমরানের আমলনামা। তার বিরুদ্ধে রয়েছে জবরদখল করে সরকারি সম্পত্তি হাতানোর অভিযোগ। ইমরানের ধুর্তমির চিত্র এখন প্রকাশ্যে। জাল-জালিয়াতি করে রাষ্ট্রের হেফাজতে থাকা সম্পদও নিজের করে নিয়েছেন তিনি।
আর এসবের মধ্যেই শাহ ইমরান হোসাইনের বিশাল খামার সাম্রাজ্যের কবর খোঁড়ারও সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। আমদানি নিষিদ্ধ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাহমা জাতের গরু ইমরানের খামারে কীভাবে গেলো, চোরাই পথে কীভাবে দেশে আনা হয়েছিল, সেসবের সন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। অনৈতিক সুবিধা দেয়ার অভিযোগে সরকারি প্রতিষ্ঠান সাভারের কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামার এবং বিমানবন্দরের কাস্টমস হাউজে চালানো হয়েছে অভিযান।
আর এসবের মধ্যে গা ঢাকা দিয়েছেন স্যোশাল মিডিয়ায় সরব উপস্থিতির ইমরান। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, এতো বিপুল বিত্ত বৈভবের মালিক কীভাবে হলেন ইমরান? কোথা থেকে তার শুরু? হঠাৎ করেই কীভাবে এতো সম্পদের মালিক হলেন তিনি? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে দেখা যাক।
কে এই ইমরান, কীভাবে উত্থান?
পশুপালনের ছোট্ট একটি খামার দিয়ে যাত্রা শুরু ইমরান হোসাইনের। তিনি নিজেই জানিয়েছেন সেসব। তার ভাষ্য অনুযায়ী, প্রায় ১৬ বছর আগে পশু পালনের ব্যবসায় জড়ান তিনি। ছাগলকাণ্ড নিয়ে আলোচনা যখন তুঙ্গে- তখন এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তার দাদার বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ ও নানার বাড়ি বিয়ানীবাজার উপজেলায়। ১০ ভাইবোনের মধ্যে ইমরান ৯ নম্বর। সবার জন্ম ও বেড়ে উঠা ঢাকার কলাবাগানে।
ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া ইমরান বলেন, তার বাবার ছিলো একটি ঢেউটিনের কারখানা। সেটাই এখন চার ভাই মিলে চালান। পাশাপাশি রয়েছে খামারের বাণিজ্য, যেখানে দুগ্ধ উৎপাদন ও গরু মোটাতাজাকরণ; দুটোই সমানতালে চলে।
ইমরান বলেন, একবার কোরবানির গরু বাসায় এনে কয়েকদিন পালার সময় খামারের ধারণা প্রথম মাথায় আসে তার। পরেরবার কোরবানির ঈদের আগে কিছু গরু কিনে সাভারে ঢেউটিন কারখানায় আঙিনায় কিছুদিন পেলে বিক্রি করে লাভবান হন। এভাবেই বাস্তবায়ন শুরু হয় তার বাণিজ্যিক খামারের।
এরপর ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পাঁচ বন্ধু মিলে কোরবানির ঈদে পশুর ব্যবসা শুরু করেন বলে জানান ইমরান। এক পর্যায়ে সাদিক অ্যাগ্রো নামে খামার তৈরি করে পুরোদমে চালু হয় এই ব্যবসা। এরপর তরতর করে উঠতে থাকেন ইমরান। সারাদেশের গরুর খামারিদের নিয়ে ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন। সেই সংগঠনের সভাপতিও হন তিনি।
কিন্তু গরু পাচারের প্রতিবাদের জেরে ২০১৯ সাল থেকে সংগঠনের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ইমরানের দূরত্ব তৈরি হয়। বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে লেখালেখি করলে কয়েকজন নেতার নামে ইমরান আইসিটি আইনে মামলা দিয়ে হয়রানি করেন বলে অভিযোগ। শুধু সেখানেই থেমে থাকেননি তিনি। সমিতির ১৬ জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলা দিয়েও হয়রানি করেন। ইমরানের দৌরাত্মে ডেইরি ফারমার্স সমিতি এখন কার্যত অচল। বৈধ কোন কমিটি ছাড়াই এককভাবে সমিতি দখল করে রেখেছেন ইমরান।
অবৈধ কারবারে সিদ্ধহস্ত ইমরান!
সাদিক অ্যাগ্রো মানেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে দেশি-বিদেশি অসংখ্য দামি দামি পশুর খোয়াড়ে। নানান জাতের গরু, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, উঠ, ঘোড়া, হাঁস, মুরগি সব যেনো পাওয়া যায় এক খামারে। সেখানে মেলে দেশি পশুও। সাদিকে যেমন মেলে আমদানি নিষিদ্ধ বিশাল দেহের ব্রাহমা জাতের গরু, তেমনি পাওয়া যায় ভুট্টি নামে পরিচিত নেপালের ছোট ছোট গরুগুলোও। বাংলাদেশে কেউ পালন করেন না, এমন গরু-ছাগল, ভেড়ায় ভর্তি সাদিক অ্যাগ্রো। আমেরিকা, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশের গরু, ছাগলের দেখা মেলে ইমরানের খামারে। সেই রকমই এক গরু ও এক ছাগলে ফেঁসেছেন এই কাউবয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এতো বিদেশি জাতের প্রাণী ইমরানের সংগ্রহ করতেন কোথা থেকে?
একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের সীমান্ত এলাকা থেকে রাজধানী পর্যন্ত বিস্তার করেছেন গরু চোরাচালানের সিন্ডিকেট। বিভিন্ন দেশ থেকে চোরাইপথে নানা জাতের গরু আনা হয়। সেজন্য স্তরে স্তরে রাখা হয় দালাল। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে তোলা হয়েছে গরু রাখার গোপন ডেরা। দেশে গরু চোরাচালানের মাস্টারমাইন্ড এই ব্যক্তির নাম নাম ইমরান হোসাইন।
রাজধানীর সাদিক অ্যাগ্রো খামারের আড়ালেই ইমরান দেশে গরু চোরাচালানের নিয়ন্ত্রণ করেন বলেও প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়। মাত্র কয়েকটি গরু নিয়ে যাত্রা শুরু করা ইমরানের ব্যবসা মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই ফুলেফেঁপে ওঠে। কারণ, প্রভাবশালীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ইমরান চোরাচালানের জড়িত হন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
Advertisement
চোরাচালানের ভয়াবহ তথ্য
বিভিন্ন দেশ থেকে পশু পাচার করা হলেও, ইমরানের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে থাইল্যান্ড। কারণ, মাংসের ব্যাপক চাহিদা এবং দেশে গবাদি পশুপালন তেমন না হওয়ায়, থাইল্যান্ডে প্রতিবছর ব্যাপক গরু আমদানি হয়। এর মধ্যে থাকে ব্রাহমা জাতের ষাড়ও। সেই সুযোগই লুফে নেন ইমরান। কারণ, থাইল্যান্ড সীমান্ত থেকে মিয়ানমারের ভেতরে দিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছানো যায় সহজেই। পশু আনার সুবিধা আছে নৌপথেও। সেখান থেকেই দেশে ব্যাপকভাবে ব্রাহমা জাতের গরু পাচারে জড়িয়ে পড়েন ইমরান।
সীমান্ত পার করে দেশে আনার পর শুরুতেই সেসব পশু রাজধানীর সাদিক অ্যাগ্রোতে নেয়া হয় না। প্রথমে ঢোকানো হয় দেশের বিভিন্ন জায়গায় ইনকিউবিটরের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে মতো খামারগুলোতে। প্রথমে টেকনাফে রেখে, তারপর নেয়া হতো নরসিংদীর একটি খামারে। সেখান থেকে ছড়িয়ে দেওয়া হতো বিভিন্ন জায়গায়। কেরানীগঞ্জ, আমিনবাজার, সাভারসহ বেশ কয়েকটি খামার রয়েছে ঢাকা শহরের একেবারে উপকণ্ঠে। দেশের বিভিন্ন জেলায় রয়েছে আরও অসংখ্য খামার। সেখানে মোটাতাজাকরণ করে এরপর আনা হয় মোহাম্মদপুরে। এখান থেকেই করা হয় বিক্রি।
মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রোতে সারাবছর পশু কেনাবেচা করা হলেও আসল ব্যবসা জমে কোরবানির ঈদের সময়। দেশের দুই-তৃতীয়াংশ গবাদিপশু বিক্রি হয় এই ঈদের হাটে। সরকারি সম্পত্তি দখল করে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের খামারে পশু বিক্রির বিশাল হাট গড়ে তোলেন ইমরান। যদিও এই হাটের কোনো অনুমোদন ছিল না, নেই কোনো ইজারাদার। তবুও প্রভাব খাটিয়ে বছরের পর বছর ব্যবসা করছেন আলোচিত এই খামারি। কৌশলী মার্কেটিংয়ে ক্রেতাদের প্রলুব্ধ করে উচ্চ দর হাঁকিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিতেন ইমরান। আর তার এ কাজে সহায়তা করতেন বেশকিছু কনটেন্ট ক্রিয়েটর।
যে ছাগলে এতো কাণ্ড, সেই ছাগল নিয়ে ঈদের কিছুদিন আগে থেকেই জোরেশোরে মার্কেটিংয়ে নামেন ইমরান। বিভিন্নভাবে তিনি প্রচারণা চালান যে, এটা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ছাগল। পাঞ্জাবের বিটল জাতের ছাগলটি তিনি দুই মাস আগে যশোর থেকে কিনেছেন সাড়ে ১০ লাখ টাকায়। এখন ১৫ লাখে বিক্রি করবেন তিনি। ইমরানের গুণকীর্তনে দিশেহারা হওয়ার দশা ক্রেতাদের।
একই ঘটনা ব্রাহমা জাতের গরু নিয়েও। গত এপ্রিলে ঢাকায় প্রাণিসম্পদ মেলায় প্রদর্শন করা হয় এক হাজার ৪০০ কেজি ওজনের ষাঁড়টি। সেখানেই দাম হাঁকা হয় এক কোটি টাকা। এর কারণ হিসেবে গরুটির বংশ মর্যাদার কথা হয়। চোরাইভাবে আসা গরুটির অতিরিক্ত দাম চাওয়ায় ইমরানকে নিয়ে স্যোশাল মিডিয়ায় ব্যাপক ট্রল হয়। কিন্তু ইমরানের চাওয়া কোটি টাকা দামেই বিক্রি হয়ে যায় ব্রাহমা জাতের ষাঁড়টি।
জালিয়াতির মাধ্যমে যেভাবে আনা হয় ব্রাহমা ষাঁড়গুলো
ইমরানের চক্র গোপনে কাজ চালালেও প্রথম প্রকাশ্যে চলে ২০২১ সালে একটি চোরাচালান ধরা পড়ার পর। জাল জালিয়াতির মাধ্যমে আমেরিকা থেকে বিমানভর্তি করে ১৮টি ব্রাহমা জাতের ষাঁড় আনা হয়। কিন্তু কাস্টমস সেগুলো আটকে দেয়। ব্রাহমা জাতের গরু আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। দেশে মাংস উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জনের পর সরকার ২০১৬ সালে ব্রাহমা আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়।
শাহিওয়াল ষাঁড়ের নামে আমদানি করা হয় ব্রাহমাগুলো। গরুর চালান শাহজালালে পৌঁছানোর পর ইমরান সেখানে গিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা নেড়ে দেখান। কিন্তু কাস্টমস আটকে দেয়ার সটকে পড়েন ইমরান। গরুগুলো নিতে আসেননি। পরে সেগুলো পাঠানো হয় সাভারে সরকারের কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে। গরুগুলো জবাই করে মাংস হিসাবে কেজি দরে বিক্রির কথা থাকলেও খেয়াল-খুশি মতো গরু বিক্রি করেন ইমরান চক্রের কয়েকজন কর্মকর্তা।
সরকারের হেফাজত থেকে ব্রাহমা গরুগুলো জাল-জালিয়াতি করে সাভার থেকে নিজের খামারে নিয়ে যান ইমরান। ইমরানকে অনৈতিক সুবিধা দেন কয়েকজন কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদ। নিষিদ্ধ সেই গরুগুলো তিনি কোরবানির ঈদের কোটি কোটি টাকায় বিক্রি করেন। ইমরানের সাভারেও রয়েছে একটি খামার। সেখানে ব্রাহমা জাতের আরও বহু গরুর সন্ধান মিলেছে। প্রশ্ন হচ্ছে এতো টাকা কোথায় পেলেন ইমরান।
সঙ্গী সাবেক আইজিপি বেনজীর
দুর্নীতিতে ফেঁসে গেছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) বেনজীর আহমেদ। শত শত বিঘা জমি, খামার, বাংলো জব্দ করেছে দুদক। বেনজীর গোপালগঞ্জ ও পার্বত্য জেলাসহ বিভিন্ন জায়গা গরুর খামার করেন। সেই সব খামার প্রস্তুত করতে ইমরান ভূমিকা পালন করেন বলে অভিযোগ। আর চোরাকারবারির মাধ্যমে আনা বেশকিছু গরু বেনজীরের খামারেও পাঠিয়ে দেন ইমরান।
সাদিক অ্যাগ্রোতে নিয়মিত আসা যাওয়া করতেন বেনজীর। এই খামারেই সাবেক পুলিশকর্তা মোটা অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করেছেন বলে খবর বেরিয়েছে। আর বেনজীর পুলিশের বিভিন্ন শীর্ষ পদে থাকার সময় সুবিধা নিয়েছেন ইমরান। বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার যোগসাজশে গরু চোরাচালানের মাফিয়া হয়ে ওঠেন ইমরান। অভিযোগ রয়েছে, চোরাচালান বিষয়ে অন্য কোনো খামারের মালিক বা সংশ্লিষ্ট কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে দেন ইমরান। এজন্য অনেকে মুখ বন্ধ রেখেছেন। বেনজীরও এখন দুদকের জালে। তার অঢেল সম্পদের খোঁজ চলছে চতুর্দিকে।
দেশের খামারি ও ভোক্তারা ক্ষুব্ধ
চোরাকারবারে জড়িয়ে ইমরান দেশের দুগ্ধ ও গরু মোটাতাজাকরণ খাত প্রায় ডোবানোর জোগাড় করেছে বলে অভিযোগ। অনেক ক্ষুদ্র খামারির অর্থ লোপাটের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিভিন্ন জেলার খামারিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন ইমরান। কোরবানির ঈদের সময় তাদের খামারের গরু তোলা হতো সাদিক অ্যাগ্রোতে। কিন্তু পশু বিক্রির অর্থ গায়েব করে দেয়ায় অনেক ক্ষুদ্র খামারি পথে বসেছেন-এমন অভিযোগও আছে ইমরানের বিরুদ্ধে।
বাংলাদেশের গরুর মাংসের মাত্রাতিরিক্ত দাম বৃদ্ধির মাস্টারমাইন্ড হলেন ইমরান। সমিতির নামে তিনিই ঠিক করতেন কত টাকা কেজি দরে গরু বিক্রি হবে। ভোক্তার স্বার্থ সবসময় উপেক্ষিত হয়েছে ইমরানের কাছে।
Advertisement
শেষ কথা
সরকার পশু আমদানি নিষিদ্ধ করে দেশের খামারিদের স্বার্থ সুরক্ষার পাশাপাশি মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। তবে সরকারের এই উদ্যোগকে বারবার বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দেশের ক্ষুদ্র খামারি ও ভোক্তাদের স্বার্থে আঘাত হেনেছে ইমরান। আইনের তোয়াক্কা না করে, মাফিয়া সিন্ডিকেট গড়ে দেশের মানুষকে এক দুর্বিষহ অবস্থায় ফেলা শাহ ইমরান এবার পড়েছেন নিজের পাতা ফাঁদে।