ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,(টিভি),কলিকাতা প্রতিনিধি ,বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ : ভারতে ‘চিকিৎসা’ করাতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। একসময়ের বাল্যবন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদার আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহীনের পরিকল্পনায় তাকে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্বে দেন ভাড়াটে খুনি ও চরমপন্থি নেতা আমানুল্লাহ। তার সঙ্গে আরও চারজন হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
Advertisement
ভারতে চিকিৎসা করাতে যাওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের আওয়ামী লীগের মাননীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের হত্যাকারীদের বিচার চাই ।
কুমিল্লা মেঘনা উপজেলার চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম তাজ
এ সংসদ সদস্যকে হত্যা করা হয় কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জীবনী গার্ডেনে ট্রিপ্লেক্স ফ্ল্যাটে। পরিকল্পনা অনুযায়ী- আগে থেকেই ভারতে অবস্থান করা কয়েক সন্ত্রাসীর সঙ্গে চুক্তি করেন শাহীন। যেখানে মূখ্য ভূমিকা রাখে চরমপন্থি নেতা আমানুল্লাহ ও শিলাস্তি রহমান নামে এক নারী।
এরপর বাংলাদেশ থেকে আনারকে কৌশলে পূর্বনির্ধারিত ফ্ল্যাটে নিয়ে যান মূল কিলার চরমপন্থি নেতা আমানুল্লাহ। সেখানে আক্তারুজ্জামান শাহীনে পক্ষ হয়ে এমপি আনারের কাছে চোরাই সোনার টাকার ভাগ চায় এ চরমপন্থি নেতা ও তার সহযোগীরা। এ নিয়ে ধস্তাধস্তি হয় তাদের মধ্যে। একপর্যায়ে আনারের গলায় চাপাতি ধরেন আমানুল্লাহ। পরে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করা হয় তাকে। এ হত্যাকাণ্ডে চুক্তি হয় মোটা অঙ্কের টাকা। এরপর খুনিরা টুকরো করে লাশ গুম করে ফেলে। বুধবার (২২ মে) সন্ধ্যা পর্যন্ত আনোয়ারুল আজিমের মরদেহের খোঁজ মেলেনি।
Advertisement
হত্যা মিশন শেষ করেই আমানুল্লাহ ও শিলাস্তি রহমান নামে এ নারী ঢাকায় এসে আত্মগোপন করেন। এই শিলাস্তি রহমান হত্যার পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামানের বান্ধবী। এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ওই দুজনসহ তিনজনকে আটক করেছে। এর পরই বেরিয়ে আসে এমপি আনোয়ারুল হত্যা রহস্য।
Advertisement
ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামানের সঙ্গে কলকাতায় স্বর্ণের ব্যবসা ছিল সংসদ সদস্য আনারের। তারা দুজন সীমান্তে স্বর্ণ চোরাচালান ও হুন্ডি কারবারও নিয়ন্ত্রণ করতেন। চোরাই স্বর্ণের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। তবে পলাতক আক্তারুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা গেলে হত্যার কারণ সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাবে। পাঁচ কোটি টাকার চুক্তিতে এই হত্যাকাণ্ড হয় বলে জানতে পেরেছে ডিবি। ঘটনার পর শাহীন দিল্লি হয়ে নেপাল চলে যান। তিনি মার্কিন পাসপোর্টধারী। ধারণা করা হচ্ছে, এরই মধ্যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন। এমপি আনারের নিখোঁজ হওয়ার নেপথ্যে কুষ্টিয়ার চরমপন্থি নেতা পলাতক মুকুল বাহিনীর প্রধান আমিনুল ইসলাম মুকুলের হাত থাকতে পারে বলে অনেকে সন্দেহ করলেও পুলিশ তার সম্পৃক্ততা পায়নি।
Advertisement
গত ১২ মে চিকিৎসার কথা বলে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা-গেদে স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে যান আনার। ওইদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে তিনি কলকাতায় তার পূর্বপরিচিত বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাসায় ওঠেন। গোপালের সঙ্গে তার ২৫ বছরের পারিবারিক সম্পর্ক। পরের দিন কলকাতার স্থানীয় সময় দুপুর ২টায় আনার চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা বলে গোপাল বিশ্বাসের বাসা থেকে বের হন। তখন গোপালকে বলে যান, তিনি সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে আসবেন। এরপর আর বাসায় না ফেরায় ১৮ মে কলকাতার বরাহনগর থানায় গোপাল বিশ্বাস একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর পর থেকে ঢাকা ও কলকাতা পুলিশ তার অবস্থান শনাক্তে কাজ করে আসছিল।
Advertisement
এ ঘটনায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা আরও কয়েকজনকে ধরার চেষ্টায় আছি। এটা খুন। তাকে (আনার) হত্যা করা হয়েছে। এখানে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে ফাটল ধরবে, এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। কারণ, ভারতের কেউ এখানে জড়িত নন। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, তাতে আমাদের দেশের মানুষই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। আমাদের কাছে যেসব তথ্য আছে, তা তদন্তের স্বার্থে এখনই প্রকাশ করছি না। তদন্ত শেষ হলে জানানো হবে, তিনি কেন খুন হয়েছেন, কে কে খুন করেছে, কী ধরনের অস্ত্র দিয়ে খুন করা হয়েছে।