ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,(টিভি),কলিকাতা প্রতিনিধি ,বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ : ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমকে (আনার) খুনে ভাড়া করা হয় খুলনা অঞ্চলের কুখ্যাত সন্ত্রাসী শিমুল ভূঁইয়াকে। তিনি চরমপন্থী সংগঠন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম শীর্ষ নেতা। এ ঘটনায় ঢাকায় ধরা পড়ার পর পুলিশের কাছে শিমুল ভূঁইয়া নিজেকে সৈয়দ আমানুল্লাহ নামে পরিচয় দিয়েছেন।
Advertisement
ভারতে চিকিৎসা করাতে যাওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের আওয়ামী লীগের মাননীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের হত্যাকারীদের বিচার চাই ।
কুমিল্লা মেঘনা উপজেলার চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম তাজ
মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রও পরে নিশ্চিত করেছে যে শিমুল ভূঁইয়াই নিজের নাম সৈয়দ আমানুল্লাহ বলে পরিচয় দিয়েছেন। তিনি আমানুল্লাহ নামেই পাসপোর্ট বানিয়েছেন, সেই পাসপোর্টে তিনি কলকাতায় গিয়েছিলেন। ২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকা থেকে পাসপোর্টটি করা হয়েছিল। পাসপোর্ট করতে একই নামে তিনি জাতীয় পরিচয়পত্রও (এনআইডি) তৈরি করিয়েছেন। কীভাবে তিনি শিমুল ভূঁইয়া থেকে আমানুল্লাহ হলেন এবং ভুয়া পাসপোর্ট ও এনআইডি তৈরি করলেন, এখন সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন গোয়েন্দারা।
Advertisement
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, কলকাতার নিউ টাউনের ভাড়া করা ফ্ল্যাটে সংসদ সদস্যকে খুন করে ১৫ মে দেশে ফেরেন আমানুল্লাহ পরিচয় দেওয়া শিমুল ভূঁইয়া। পরে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন যে আনোয়ারুলকে তাঁরা খুন করেছেন। এই খুনের জন্য আনোয়ারুলের বন্ধু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহিনের সঙ্গে তাঁর চুক্তি হয়। আনোয়ারুলের সঙ্গে আক্তারুজ্জামানের সোনা চোরাচালান ও হুন্ডির ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথ্য পাচ্ছে।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ ও অন্যান্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আনোয়ারুল আজীমকে খুনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন সৈয়দ আমানুল্লাহ নামে পরিচয় দানকারী শিমুল ভূঁইয়া। তাঁর গ্রামের বাড়ি খুলনার ফুলতলার দামোদর ইউনিয়নে। তিনি খুলনা অঞ্চলে চরমপন্থী সংগঠন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতা ছিলেন।
Advertisement
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র বলছে, শিমুল ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে খুনসহ অন্তত দুই ডজন মামলা আছে। গণেশ নামের এক ব্যক্তিকে খুন করে যশোরের অভয়নগর থানার এক মামলায় আমানুল্লাহ সাত বছর (১৯৯১-৯৭) জেল খাটেন। ইমান আলী নামের এক ব্যক্তিকে খুনের ঘটনায় ২০০০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত জেল খাটেন। এদিকে আমানুল্লাহ নামের বিষয়ে খুলনায় খোঁজ করে প্রথম আলো। সেখানে চরমপন্থীদের সম্পর্কে ওয়াকিবহাল একটি সূত্র বলছে, আমানুল্লাহ নামে এক চরমপন্থী নেতা শিমুল ভূঁইয়ার অন্যতম সহযোগী ছিলেন।
মো. আক্তারুজ্জামান। যাঁকে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী বলছে পুলিশ।ছবি: সংগৃহীত
খুলনায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিমুল ভূঁইয়া এখনো খুলনার অপরাধজগতে আতঙ্কের নাম। তাঁর স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন এখন খুলনা জেলা পরিষদের সদস্য। শিমুলের ভাই শরীফ মোহাম্মদ ভূঁইয়া (শিপলু) দামোদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান।
জিজ্ঞাসাবাদ-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, এই খুনের বিভিন্ন পর্যায়ে চরমপন্থী সংগঠনগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা রয়েছেন। শিমুল ভূঁইয়াকে যিনি ভাড়া করেছেন, সেই আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহিন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল-লাল পতাকা) শীর্ষ নেতা ডা. মিজানুর রহমান ওরফে টুটুলের আত্মীয়। মিজানুর রহমান ২০০৮ সালে পুলিশের সঙ্গে এক ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।
Advertisement
খুলনায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহিন ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার এলাঙ্গী গ্রামের মো. আসাদুজ্জামান কাটু মিয়ার ছোট ছেলে। তাঁদের বাড়ি কোটচাঁদপুর শহরের মাছবাজার এলাকায়। তাঁর বড় ভাই মো. সহিদুজ্জামান ওরফে সেলিম কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র। আক্তারুজ্জামান মেরিন ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। কিছুদিন চাকরি করে চাকরি ছেড়ে দেন। এরপর তিনি ব্যবসা শুরু করেন। তবে এলাকার কেউ তাঁর ব্যবসা সম্পর্কে পরিষ্কার কিছু জানেন না।
ঢাকা ও কলকাতার পুলিশ জানিয়েছে, ১৩ মে কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জিভা গার্ডেনসের একটি ফ্ল্যাটে হত্যা করা হয় আনোয়ারুল আজীমকে। তাঁর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় ১৮ মে কলকাতার বরাহনগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছিল। তদন্ত করতে গিয়ে কলকাতার পুলিশ তথ্য পায় যে ওই ফ্ল্যাটে সৈয়দ আমানুল্লাহ (শিমুল ভূঁইয়া) ও শিলাস্তি রহমান নামের দুই ব্যক্তিও ছিলেন। এ তথ্যের সূত্র ধরে এই দুজনকে আটক করে ডিবি। পরে ফয়সাল আলী ওরফে সাজি নামে আরও এক ব্যক্তিকে আটক করে।
Advertisement
ঢাকা ও কলকাতার পুলিশ জানিয়েছে, ১৩ মে কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জিভা গার্ডেনসের একটি ফ্ল্যাটে হত্যা করা হয় আনোয়ারুল আজীমকে। তাঁর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় ১৮ মে কলকাতার বরাহনগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছিল। তদন্ত করতে গিয়ে কলকাতার পুলিশ তথ্য পায় যে ওই ফ্ল্যাটে সৈয়দ আমানুল্লাহ (শিমুল ভূঁইয়া) ও শিলাস্তি রহমান নামের দুই ব্যক্তিও ছিলেন। এ তথ্যের সূত্র ধরে এই দুজনকে আটক করে ডিবি। পরে ফয়সাল আলী ওরফে সাজি নামে আরও এক ব্যক্তিকে আটক করে।
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমকে হত্যায় গ্রেপ্তার আমানুল্লাহর আসল নাম শিমুল ভূঁইয়া বলে জানিয়েছে পুলিশছবি: সংগৃহীত